বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদারতা
সাদাকালো নিউজ ডেস্ক
রোহিঙ্গা সংকটের চার বছর পার হয়েছে। ২০১৭ সালের ২৫শে আগস্ট সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে প্রাণভয়ে পালাতে শুরু করে রোহিঙ্গারা। নিরাশ্রয় এসব মানুষের নিরাপদ আবাসস্থলে পরিণত হয় বাংলাদেশ। আর এতো কম সময়ে ১১ লাখের বেশি অসহায় মানুষকে আশ্রয় দেয়ার মতো কঠিন কাজটিই খুব সহজেই করেন মানবতাবাদী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা।
সে বছর ১২ই সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, এ দেশের ১৬ কোটি মানুষকে খাওয়াতে পারলে কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়া এবং খাওয়ানো কোনো কঠিন কাজ নয়।
এরপরের দিনই রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আশ্রয় ব্যবস্থাপনা দেখতে দেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতরা কক্সবাজার যান। প্রশাংসা করেন শেখ হাসিনার মানবতা ও সাহসিকতাকে।
মানবিক নেত্রী শেখ হাসিনা প্রথম থেকেই মিয়ানমারে রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞ থামানোর বিষয়ে উচ্চ কণ্ঠ ছিলেন। মিয়ানমারকে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে চাপ দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সেবছর ১৯ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ধনী দেশ নয়। কিন্তু যদি আমরা ১৬ কোটি জনগণকে খাওয়াতে পারি, তবে আরও ৭ লাখ মানুষকেও খাওয়াতে পারব।’
মিয়ানমারের ওপর চাপ তৈরির আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৭ সাল থেকে জাতিসংঘ এবং অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে রোহিঙ্গা সংকটের গুরুত্ব বোঝাতে সক্ষম হন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা ইস্যুতে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। প্রথমে দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। এরপর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শরণার্থীদের ন্যায্য দাবি নিয়ে হয়েছেন সোচ্চার। মিয়ানমারের এসব নাগরিকদের নিজের দেশে থাকার অধিকার পাওয়া উচিত—এই বিষয়টি বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন আন্তর্জাতিক মহলে। মিয়ানমার নাগরিক রোহিঙ্গাদের বিপদে পাশে দাঁড়ানোর স্বীকৃতি হিসেবে তিনি ‘মাদার অব হিউমিনিটিম’ উপাধিতে পান।
জাতিসংঘের ৭২তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিয়ে রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার আহ্বান জানান তিনি। তুলে ধরেন ৫ দফা দাবি। ২০১৮ সালেও তিনি শান্তির অন্বেষণে শরণার্থী সমস্যার সমাধানে নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন। পরের বছর তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন সমস্যা হচ্ছে। তারা এখন বিশ্বের জন্যও হুমকি। রোহিঙ্গাদের যদি দ্রুত ফিরিয়ে নেয়া না হয় এ সমস্যা আরও বাড়তে থাকবে।
শেখ হাসিনার অব্যাহত চাপের মুখে এবং জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার সমালোচনার প্রেক্ষাপটে শরণার্থীদের যাচাই সাপেক্ষে দেশে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে বাধ্য হন অং সান সু চি।
গত ৪ বছর ধরে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় মিয়ানমারকে চাপে রাখার পক্ষে জোড়ালো বিশ্ব জনমত তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন শেখ হাসিনা। এসেছে অনেক সাফল্য। ২০২০ সালের ২৩ জানুয়ারি রোহিঙ্গাদের গণহত্যার বিপদ থেকে সুরক্ষায় নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালত মিয়ানমারের প্রতি চার দফা অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়।
শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বের কারণে ২০১৭ সাল থেকেই রোহিঙ্গাদের নির্যাতন-নিপীড়নের সমস্যা সারা বিশ্বব্যাপী সুশীল সমাজের মনে আলোড়ন সৃষ্টি করে। তখন থেকে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির থেকে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর ভাসানচরে আশ্রয় দেয়ার যে পরিকল্পনা, সেটাও প্রধানমন্ত্রীর। এরইমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে সরকার। শুরুতে আপত্তি জানালেও, এখন জাতিসংঘ সেই কার্যক্রমে যুক্ত হতে যাচ্ছে।
তবে, রোহিঙ্গা সংকট জটিল একটি প্রক্রিয়া। এটি এখন আর কেবল মানবিক সংকট নয়, রাজনৈতিকও। এ সংকট সমাধানে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা রাজনৈতিক মতৈক্যে আসতে পারছেন না, যার কারণে এর রাজনৈতিক সমাধান হচ্ছে না। আর এই সমাধান যে ব্যক্তি করতে পারেন, তিনি হলেন শেখ হাসিনা। সেই চেষ্টায় করে যাচ্ছেন তিনি।