প্রতিদিন একজনের অক্সিজেন লাগে ১৮ লাখ টাকার
সাদাকালো নিউজ
কোন ধরনের বাতাস ছাড়া একজন মানুষ সর্বোচ্চ তিন মিনিট টিকে থাকতে পারে। মানুষকে বাঁচিয়ে রাখতে বাতাসের অতি প্রয়োজনীয় অংশ অক্সিজেনের ঘাটতি মাত্র পাঁচ মিনিট স্থায়ী হলে মস্তিষ্কের কোষগুলো দ্রুত মরে যেতে শুরু করে। এ সময় ওই ব্যক্তি অচেতন হয়ে পড়ে এবং তার চোখের তারারন্ধ্র (পিউপিল) আলোর সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া বন্ধ করে দেয়। এর পরই চিরনিদ্রায় শায়িত হন তিনি। বেঁচে থাকার জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় এই অক্সিজেন আমরা প্রকৃতি থেকে বিনা মূল্যেই পেয়ে থাকি। এ অক্সিজেনের একমাত্র উৎস হলো গাছপালা ও জলজ উদ্ভিদ শ্যাওলা।
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ প্রতিদিন ১১ হাজার লিটার বাতাস নিঃশ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করছে। প্রকৃতির ওপর আমাদের এমন নির্ভরতা নিয়ে খানিকটা ভাবার সময় হয়তো এ কর্মব্যস্তময় জীবনে হয়ে ওঠে না।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মানুষের বেঁচে থাকার মূল জ্বালানি অক্সিজেন আমরা ফুসফুসের মাধ্যমে টেনে নিয়ে থাকি।
প্রতিদিন আমরা এক অবিশ্বাস্য পরিমাণে অক্সিজেন নিয়ে থাকি। স্বাস্থ্যবিষয়ক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম শেয়ারকেয়ারের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি মিনিটে নিঃশ্বাসের মাধ্যমে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ সাত থেকে ৮ লিটার বাতাস নিয়ে থাকে। সে হিসাবে ২৪ ঘণ্টায় বা এক হাজার ৪৪০ মিনিটে আনুমানিক ১১ হাজার লিটার বায়ু সেবন করে থাকে একজন মানুষ। এর মধ্যে থেকে ফুসফুস কেবল ৫ শতাংশ বিশুদ্ধ অক্সিজেন ছেঁকে নেয় এবং বাকী সব প্রশ্বাসের মাধ্যমে বের করে দিয়। হৃৎপিণ্ডের স্পন্দনের মাধ্যমে অক্সিজেন রক্তে মিশে যায়। এই হিসাবে একজনের প্রতিদিন প্রয়োজন হয় ৫৫০ লিটার বিশুদ্ধ অক্সিজেন।
অক্সিজেনের তুলনায় অন্য দুটি অতি প্রয়োজনীয় উপাদান পানি ও খাবার আমরা অনেক কম পরিমাণে গ্রহণ করে থাকি। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, সারা দিনে একজন মানুষ গড়ে সর্বোচ্চ দুই থেকে আড়াই কিলোগ্রাম খাবার খেয়ে থাকে। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের নির্দেশনা অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টায় একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের ৬ থেকে ৮ গ্লাস বা দুই লিটার পানি পান করা উচিত।
অতি প্রয়োজনীয় এমন তিনটি উপাদানের কোনোটি ছাড়া মানুষ কত সময় বেঁচে থাকতে পারে এ নিয়ে একাধিক সারভাইবাল এক্সপার্ট (প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার লড়াইয়ে অভিজ্ঞ) ব্যক্তির বরাত দিয়ে ইনডিপেন্ডেন্ট ইউকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোনো ধরনের খাবার ছাড়া বেঁচে থাকা যায় অন্তত ২১ দিন; পানি ছাড়া ৩ দিন আর বাতাস ছাড়া বেঁচে থাকা যায় মাত্র ৩ মিনিট।
যেহেতু বিশুদ্ধ বাতাস তথা অক্সিজেন প্রাকৃতিক সম্পদ তাই এর সঠিক মূল্য নির্ধারণ করা আমাদের পক্ষে অসম্ভব। কোনোরূপ মূল্য পরিশোধ ছাড়াই তা আমরা গ্রহণ করে যাচ্ছি। মৃত্যুর আগমুহূর্ত পর্যন্ত এভাবেই আমরা তা গ্রহণ করে যাব।
অন্যদিকে পেশাগত কারণে ডুবুরি এবং পর্বতারোহী অথবা মুমূর্ষু রোগীর চিকিৎসায় অক্সিজেনের সিলিন্ডার বাণিজ্যিকভাবে বেচাকেনা হয়।
মুক্ত বাতাস থেকে শুধু প্রক্রিয়াজাতকরণের যুক্তিতে ভোক্তার কাছ থেকে উচ্চ মূল্যে অক্সিজেনভর্তি সিলিন্ডার বেচতে এতটুকুও কুণ্ঠিত হয় না মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা।
প্রকৃতির সুরক্ষা নিয়ে কাজ করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘গ্রিন দিল্লি’র বরাত দিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, একজন মানুষ প্রতিদিন ৫৫০ লিটার ‘পিউর’ অক্সিজেন গ্রহণ করে থাকে। সিলিন্ডারজাত করলে এই পরিমাণ অক্সিজেনের বাজারমূল্য প্রায় ১৩ লাখ রুপি। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ১৮ লাখ টাকা। পৌণে তিন লিটার (দুই দশমিক ৭৫ লিটার) অক্সিজেন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন একটি সিলিন্ডারের মূল্য ৬ হাজার ৫০০ রুপি। এই হিসাবে ৫৫০ লিটার অক্সিজেনের জন্যে প্রয়োজন হবে ২০০টি সিলিন্ডার।
অন্যদিকে একজন রোগী ২৪ ঘণ্টা ব্যবহার করতে পারে এমন একটি অক্সিজেন সিলিন্ডারের আন্তর্জাতিক বাজারে আনুমানিক মূল্য ৮০০ ডলার (৬৬ হাজার টাকা)। বাংলাদেশে ‘অক্সিজেন ঢাকা’ নামে একটি কোম্পানি এমন একটি সিলিন্ডার গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে ২৬ হাজার ৫০০ টাকায়।