পরীমনি কী আর অভিনয় জীবনে ফিরতে পারবেন?
সাদাকালো নিউজ ডেস্ক
‘ডার্টি পিকচার’ বলিউডের জনপ্রিয় সিনেমা। এতে তেলেগু অভিনেত্রী সিল্ক স্মিতার চরিত্রে অভিনয় করেছেন বলিউড অভিনেত্রী বিদ্যা বালান। তেলেগু অভিনেত্রী সিল্ক স্মিতার জীবনে ঘটে যাওয়া সত্য কাহিনী নিয়ে নির্মিত হয় সিনেমাটি। অনেকেই বলছেন, তেলেগু অভিনেত্রী সিল্ক স্মিতার সঙ্গে মিলে যাচ্ছে ঢাকাই সিনেমার চিত্রনায়িকা পরীমনির জীবন।
আকাশে কত শত তারা ওঠে, আবার ঝরেও যায়। হঠাৎ আলোর ঝলকানি দিয়ে হারিয়ে যায় ধ্রুবতারা। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতের আকাশেও এমন এক তারা- পরীমনি। সম্ভাবনা ছিল, ছিল ঝলকানিও। তবে সল্প সময়ের মধ্যে হলেন কক্ষচ্যুত।
অভিনেত্রী পরীমনির আসল নাম শামসুন্নাহার স্মৃতি। ১৯৯২ সালের ২৪ অক্টোবর সাতক্ষীরা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। পরীমনির পৈত্রিক নিবাস নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার সালাবাদ গ্রামে। তার পিতা মনিরুল ইসলাম ছিলেন একজন পুলিশ কনস্টেবল। ছোটবেলা থেকেই নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন পরী। মেধাবী ছাত্রী ছিলেন তিনি। পঞ্চম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিও পেয়েছিলেন।
সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে বাংলা বিভাগে ব্যাচেলর অফ আর্টস (বিএ) (সম্মান) এ পড়াকালীন ২০১১ সালে ঢাকায় চলে আসেন।
তবে শোজিব জগতে প্রবেশের আগে পরে তার একাধিক বিয়ে ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা শোনা যায়। ২০০৭ সালের দিকে পরীমনির মা মারা যান। পাঁচ বছর পর বাবাও চলে গেছেন পৃথিবী ছেড়ে। তবে, দুজনের চলে যাওয়ায় স্বাভাবিক নয়। মা আগুনে দগ্ধ হয়ে আর বাবা সন্ত্রাসীদের গুলিতে।
অভিনেত্রী পরীমনির জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে সিনেমার গল্প। বরিশালে নানার বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। সেখানে মাসুদ নামের দূর-সম্পর্কের এক আত্মীয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে বিয়েও করেন তারা। নানা বাড়ি থেকে পালিয়ে মাসুদের সঙ্গে চট্টগ্রামে চলে যান। ১ মাস পর আবারও বরিশালে ফিরে আসেন পরীমনি। পরে মাসুদের সঙ্গেতার বিবাহবিচ্ছেদ হয়।
পরীমনি ২০১১ সালে বাবার সঙ্গে সাভারের ব্যাংক টাউন এলাকায় বসবাস শুরু করেন। এ সময় সাভার কলেজেও ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। তবে নিয়মিত ক্লাস করতেন না।
একই বছর নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টসে নাচ শিখতে ভর্তি হয়েছিলেন। টিভি নাটকে অভিনয়ের সুযোগ পান পরীমনি। ‘সেকেন্ড ইনিংস’, ‘এক্সক্লুসিভ’, ‘এক্সট্রা ব্যাচেলর’ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে শোজিবে পা রাখেন। এরপর ‘নারী ও নবনীতা তোমার জন্য’ একটি নাটকে নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেন পরীমনি।
২০১৪ সালের দিকে কথিত প্রযোজক ও অভিনেতা নজরুল ইসলাম রাজের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। রাজই তাকে সিনেমায় নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন দেখান। এরপর থেকে রাজের সার্বক্ষণিক সঙ্গী ছিলেন তিনি। ২০১৫ সালে সিনেমায় নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয় পরীর।
রাজের পরিচালনায় ‘রানা প্লাজা’ নামের একটি চলচিত্রে অভিনয় করেন পরী। কিন্তু ছবিটির মুক্তি নিয়ে তৈরি হয় নানা জটিলতা। এরপর রাজই প্রযোজক হয়ে শাহ আলম মণ্ডলের পরিচালনায় নির্মাণ করেন ‘ভালোবাসা সীমাহীন’ নামের একটি সিনেমা। এটিই পরীমনির মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম ছবি।
সে সময়ই সিনেমাপাড়া পরীকে নিয়ে সরগরম হয়ে ওঠে। প্রথম ছবি মুক্তির আগেই ১৯টি ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হন পরী। এরপর থেকেই শুরু হয় তার বেপরোয়া জীবন। রাজের সঙ্গে একই ফ্ল্যাটে বাস করতেন পরী। সেখানে প্রভাবশালীদের যাতায়াত ছিল।
২০১৬ সালের শুরুর দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয় পরীমনির সঙ্গে দুজনের বিয়ের খবর। এমনকি বিয়ের ছবি, কাবিননামা ও তালাকনামার ছবিও প্রকাশ পায়। ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি একটি ফেসবুক আইডি থেকে কিছু ছবি শেয়ার দিয়ে দাবি করা হয়, পরীমনি ইসমাইল নামের একজনের স্ত্রী।
কিছুদিন পরেই ফেসবুকে পাওয়া যায় সৌরভ কবীর নামের আরও একজনের সঙ্গে তার কিছু ঘনিষ্ঠ মুর্হুর্তের ছবি এবং বিয়ের কাবিননামা। সিনেমায় অভিষেক হওয়ার ঠিক আগের দুই বছর অর্থাৎ নাটকে অভিনয় করার সময় সেতু নামের এক ফটোগ্রাফারের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তারা ২ বছর সংসারও করেছিলেন।
২০১৭ সালে তামিম হাসান নামের এক সাংবাদিকের সঙ্গে পরীমনির প্রেমের সম্পর্কের কথা জানা যায়। তামিমকে নিয়ে প্রকাশ্যে বিভিন্ন দেশে ঘুরতেও গিয়েছেন পরী।
দুই বছর ধরে প্রেম করার পর ২০১৯ সালের ১৪ এপ্রিল দুজনের বাগদান হয়। এর কিছুদিনের মধ্যেই তাদের বিচ্ছেদ হয়। সর্বশেষ অল কমিউনিটি ক্লাবে তামিমের সঙ্গে আবারও পরীমনিকে দেখা যায়।
এরপর ২০২০ সালের ৯ মার্চ রাতে অভিনেত্রী ও পরিচালক হৃদি হকের অফিসে কাজি ডেকে তার সহকারী কামরুজ্জামান রনিকে মাত্র তিন টাকা দেনমোহরে বিয়ে করেন চিত্রনায়িকা পরীমনি। কিন্তু সে বিয়েও ৫ মাসের বেশি টেকেনি।
বিতর্কিত ব্যবসায়ী চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আবদুল আজিজের সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। আজিজ তাকে বিএমডব্লিউ গাড়ি উপহার দেন বলেও জানা গেছে।
এছাড়া তার সাথে ক্ষমতাসীন দলের এক সংসদ সদস্যের ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। দীর্ঘদিন পরী তার ছত্রছায়ায় ছিলেন। বিভিন্ন কারণে সেই সংসদ সদস্যের সঙ্গে তার দূরত্ব তৈরি হয়। তবে তার আগেই ওই সাংসদের সাহায্যে ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতা, প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার সখ্য গড়ে উঠে।
এসবই ছিল নায়িকা পরীমনির শর্টকার্টে শীর্ষে ওঠার সিঁড়ি। পতনের পথে পরীমনির ঝলমলে সাম্রাজ্য। তার ক্যারিয়ারের শেষ দেখে ফেলছেন অনেকেই। পরীমনিও কি নিজের রাজত্বের শেষ দেখছেন?