নীরবেই কি শেষ মাহমুদউল্লাহ অধ্যায়?
সাদাকালো নিউজ
চলতি বছরের মার্চে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে সর্বশেষ বাংলাদেশের জার্সিতে খেলেছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এরপর ‘বিশ্রামের’ নাম দিয়ে জাতীয় দলের বাইরে রাখা হয় ৩৭ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডারকে। তবে এশিয়া কাপের ক্যাম্প শুরুর আগে তাকে অনুশীলনে ফিরতে দেখে ভিন্ন কিছুরই ইঙ্গিত মিলেছিল। সেই আশা শনিবার (১২ আগস্ট) এশিয়া কাপের স্কোয়াড ঘোষণার মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে গেছে অনেকটাই! তাই প্রশ্ন উঠছে, মাহমুদউল্লাহ অধ্যায় কি তাহলে নীরবেই শেষ?
লম্বা ক্যারিয়ারে বাংলাদেশের ক্রিকেটের গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। বিশেষ করে আইসিসি ইভেন্টগুলোতে। যার শুরুটা হয়েছিল ২০০৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে। তবে নিজের গুরুত্ব জানান দেন ২০১১ সালে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডের বিপক্ষের ম্যাচ দিয়ে। সেই ম্যাচে শফিউল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে ২ উইকেটের জয় তুলে আনেন রিয়াদ।
এরপর ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার কার্ডিফে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের প্রথম শতক তুলে নেন রিয়াদ। একই আসরে নিউজিল্যান্ডের হ্যামিল্টনেও এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার দেখা পান ম্যাজিক ফিগারের। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে ইংল্যান্ডের ওভালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে রিয়াদ আরেকটি সেঞ্চুরি করেন। সবমিলিয়ে আইসিসির বড় টুর্নামেন্টে ৩ সেঞ্চুরি রিয়াদের।
তবে সেসব সোনালি দিন পেরিয়ে রিয়াদ পৌঁছে গেছেন ক্যারিয়ারের অন্তিম লগ্নে। যেখান থেকে ফেরার সম্ভাবনাও আসলে খুবই কম। কেননা এই মুহূর্তে রিয়াদের বয়স ৩৭, যার প্রভাব পড়েছে তার ফিটনেসেও। সে কারণে রিয়াদের পরিবর্তে নতুনদের পরখ করে দেখছে বিসিবি। সবশেষ কয়েক সিরিজে সেটাই লক্ষ্য করা গেছে।
আসন্ন এশিয়া কাপ থেকেও ছিটকে পড়বেন রিয়াদ, তা আগে থেকেই গুঞ্জন ছিল। শেষ পর্যন্ত সেটিই সত্যি হলো। তবে অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডারের না থাকা নিয়ে দল ঘোষণার পর মিরপুরে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন। সে সময় জানিয়েছেন রিয়াদকে নিয়ে তাদের মধ্যে দীর্ঘ আলোচনার কথা।
নান্নুর ভাষ্য, ‘মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে অনেক লম্বা আলোচনা হয়ে আসছে শুরুর দিকে। তারপর দীর্ঘ আলোচনার পর টিম ম্যানেজমেন্ট আমাদেরকে একটা পরিকল্পনা দেয়, সামনে কীভাবে কোন দেশের সঙ্গে খেলবে এবং তার কৌশল। সেই চিন্তা-ভাবনা থেকেই রিয়াদকে বাদ দেয়া হয়েছে। ম্যানেজমেন্টের পরিকল্পনাকে আমরা অবশ্যই ভালো মনে করছি। ওদের সঙ্গে যেহেতু হেড কোচের একটা পরিকল্পনা আছে টিম পরিচালনার বিষয়ে। এ নিয়ে আমাদের অধিনায়কের (সাকিব আল হাসান) সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে।’
রিয়াদ টেস্ট থেকে অবসরে গিয়েছেন আগেই। টি-টোয়েন্টিতে তিনি ভাবনার বাইরে, বাকি ছিল কেবল ওয়ানডে। এবার সেটি থেকেও নীরবে-নিভৃতেই এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের প্রস্থান দেখছেন ক্রিকেট সমর্থকরা। তবে ক্রিকেটে শেষ বলে কিছু নেই, পাশের দেশ শোয়েব মালিকের কথাই ধরা যাক। ৪০ বছর বয়সেও খেলেছেন জাতীয় দলে। তবে বাংলাদেশে যে এমন উদাহরণ পাওয়া ভার!
প্রধান নির্বাচকের কাছে অবশ্য জানতে চাওয়া হয় রিয়াদ বিশ্বকাপ দলের ভাবনায় আছেন কিনা। জবাবে নান্নু জানান, ‘বিশ্বকাপের দল এখন নয়, আপাতত এশিয়া কাপ। বিশ্বকাপের দলও আপনাদের জানানো হবে। এখন এশিয়া কাপ নিয়ে আলোচনা করছি। যা নিয়ে টিম ম্যানেজমেন্ট আমাদেরকে একটা পরিকল্পনা দিয়েছে, অতিরিক্ত স্পিনার বা পেসার নিয়ে খেলা এ ধরনের ব্যাপার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতেই সিদ্ধান্তটা নেয়া হয়।’
এর আগে বিদেশের মাটিতেই টেস্ট জার্সি তুলে রাখার ঘোষণা দিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। জিম্বাবুয়েতে একমাত্র টেস্ট চলাকালেই জানান, সাদা পোশাকে অবসরের কথা। সতীর্থদের গার্ড অব অনার আর দেড়শ রানের ইনিংস দিয়ে তিনি সেখানে বিদায় নিয়েছিলেন। ওয়ানডে দলে রিয়াদের অবস্থানটাও এতদিন নড়বড়ে ছিল। বড় টুর্নামেন্টের আগে তাকে দলের বাইরে রেখে কি ইঙ্গিত দিলেন টিম ম্যানেজমেন্ট?