নিথর দেহের মাহিরের জন্য বাবার অপেক্ষার অবসান !
সাদাকালো নিউজ
উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন নিয়ে সুদূর কানাডায় গিয়ে এক হৃদয়বিদারক ঘটনায় পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে তিন তরুণ প্রাণ- আরিয়ান আলম দীপ্ত, অ্যাঞ্জেলা শ্রেয়া বাড়ৈ ও শাহরিয়ার খান মাহির। গেল ১৩ই ফেব্রুয়ারি কানাডার স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১১টার দিকে প্রাণ হারান তাঁরা।
এই দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন আরও একজন শিক্ষার্থী। তিনি সংগীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎপুত্র নিবিড় কুমার। দুর্ঘটনার সময় নিবিড় গাড়ি চালাচ্ছিলেন। তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
তিনজন শিক্ষার্থীর মধ্যে অ্যাঞ্জেলা শ্রেয়া বাড়ৈ-এর দেহ ২৭ ফেব্রুয়ারি ভোরে বাংলাদেশে পৌঁছায়। এরপর ফার্মগেটের হলি রোজারি চার্চে তাকে সমাহিতো করা হয়। এদিকে তেশরা মার্চ ভোরে বাকি দুজন শিক্ষার্থী আরিয়ান এবং মাহিরের নিথর দেহ কফিনবন্দি হয়ে দেশে পৌঁছায়।
এর আগে কানাডার স্থানীয় সময় ১৯ ও ২০ ফেব্রুয়ারি ধর্মীয় রীতি-নীতি মেনে এই তিন তরুণ-তরুণীকে শেষ বিদায় জানায় টরন্টোর বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের লোকেরা। এছাড়াও কানাডার মসজিদ আল-আবেদীনে হয় মাহির এবং আরিয়ানের প্রথম জানাজা। সেখানে টরন্টো প্রবাশি বাংলাদেশিদের ঢল নামে।
ঢাকা বিমানবন্দর থেকে শাহারিয়ার খান মাহিরের দেহ প্রথমে উত্তরার বাসায় নেয়া হয়। সেখানে মাহিরকে এক নজর দেখার জন্য ভীড় জমান তার সহপাঠী, বন্ধু-বান্ধব এবং স্বজনরা। সবাই মাহিরের স্মৃতিচারণ করেন।
মাহিরের চাচা জানান, মাহির অনেক ভালো ছেলে ছিলো। কারও সাথে কোনো দিন বিবাদে জড়ায়নি। কথা কম বলতো। তার কোনো চাহিদাও ছিলো না। পরিবারের সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকতো। ছোট-বড় সবাইকে সম্মান করতো।
তিনি আরও বলেন, কানাডায় উচ্চশিক্ষার জন্য মাহিরকে চৌঠা জানুয়ারি পাঠানো হয়েছিলো। এক মাসের কিছু সময় বেশিদিন পর তার নিথর দেহ বাংলাদেশে ফিরে এসেছে। এটা আমাদের জন্য খুবি দুঃখজনক। আমরা সবার কাছে মাহিরের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। সবাই মাহির এবং তার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন।
এদিকে কাঁদতে কাঁদতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন মাহিরের বাবা। ছেলের দেহ বাড়িতে নিয়ে আসা অ্যাম্বুলেন্সের কাছে গিয়ে পাগলের মতো বিলাপ করছিলেন। একটু পরপর চিৎকার করে বলছিলেন- আমাদের এভাবে ফেলে রেখে সে যেতে পারে না। তার কিছুই হয়নি। এখনি সে বলবে ‘বাবা তুমি ভালো আছো’।
মাহিরের পৈতৃক বাড়ি সাভারের আশুলিয়ার গাজীরচট এলাকায়। কিন্তু ছেলেকে ভালো স্কুলে পড়ানোর জন্য ঢাকার উত্তরায় বসবাস করতেন বাবা শরীফ খান। রাজধানীর উত্তরার ডিটিএস-এসটিএস স্কুলের ইংরেজি মাধ্যম থেকে ও লেভেল শেষ করেছিলো মাহির।
বাবা শরীফর খানের ইচ্ছে ছিলো- দেশে উচ্চশিক্ষা শেষ করে তাঁর ব্যবসার হাল ধরবে ছেলে। কিন্তু ছেলে চেয়েছে বিদেশে যেতে। তাই সায় না থাকা স্বত্ত্বেও সহযোগিতা করেছিলেন ছেলের ইচ্ছে পূরণে। কিন্তু বিঁধিবাম! ঘটলো জীবনাবসান। প্রাণ হারালেন কানাডার সড়কে।
জানা গেছে, এদিন সকাল ১০টায় উত্তরার বাড়িতে মাহিরের প্রথম জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সেখান থেকে মাহিরকে নিয়ে যাওয়া হয় আশুলিয়ায়। সেখানে পারিবারিক জায়গায় মাহিরকে সমাহিত করা হয়।