নতুন রাষ্ট্রপতির বর্ণিল জীবন!
সাদাকালো নিউজ
কৈশোর পার হওয়ার আগেই জীবনের মোড় ঘুরেছিলো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সে সময় প্রথম দেখা কিশোর সাহাবুদ্দিনের। ১৯৬৬ সালে যখন ৬ দফার আলোচনা তুঙ্গে তখন একবার পাবনা গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। পাবনা জেলার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রব বগা মিয়ার বাড়িতে থাকাকালে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে পরিচয় হয় সাহাবুদ্দিনের। সে সময় বঙ্গবন্ধু তাকে তুই সম্বোধন করে বলেছিলেন- তার সঙ্গে সভাস্থলে যেতে। বঙ্গবন্ধুর সেই কথা উপেক্ষা করতে পারেননি কিশোর সাহাবুদ্দিন। রাজনীতির কিছুই না বুঝা সাহাবুদ্দিন সেদিন গিয়েছিলেন পাবনার টাউন হলের জনসভায়। ৬ দশক পড়ে এসে সেই কিশোর এখন আজকের রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
ছাত্র রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধ, আইন পেশা, বিচারকের দায়িত্বসহ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব সামলেছেন সাহাবুদ্দিন। আজ তিনি বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি। ১৯৪৯ সালে পাবনা শহরের জুবিলি ট্যাঙ্কপাড়ায় তার জন্ম। শৈশবও কেটেছে পাবনা শহরেই।
১৯৬৬ সালে এসএসসি পাশের পর পাবনার সরকারি এডওয়ার্ড কলেজে ভর্তি হন সাহাবুদ্দিন। এরপর জড়িয়ে পরেন ছাত্ররাজনীতিতে। ১৯৬৮ সালে এডওয়ার্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। সে সেময় দেশে দানা বাঁধতে শুরু করেছে স্বাধীনতা সংগ্রামের চেতনা। সেই চেতনাকে লালন করেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন তিনি। ১৯৭১ সালে পাবনা জেলার স্বাধীন বাংলা ছাত্র পরিষদের আহ্বায়কও ছিলেন।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বিএসসি পাস করেন মো. সাহাবুদ্দিন। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতকোত্তর করেন। ১৯৭৪ সালে পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পান তিনি। পরে ১৯৭৫ সালে পাবনা জেলার শহীদ আমিনুদ্দিন আইন কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন। একিবছর বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ গঠিত হলে পাবনা জেলা কমিটির যুগ্ন মহাসচিব মনোনীত হন।
১৫ই আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চলে যাবার পর মো. সাহাবুদ্দিনকে ধরে হাজতে পাঠানো হয়। কারামুক্তির পর পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পান তিনি।
কর্মজীবনের শুরুর দিকে পাবনা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য ছিলেন মো. সাহাবুদ্দিন। সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। বিচার বিভাগে যোগ দেয়ার আগে টানা দুই বছর বাংলার বাণী পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন তিনি। পাবনা প্রেস ক্লাব ও অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরির আজীবন সদস্য এই বীর মুক্তিযোদ্ধা।
১৯৮২ সালে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে বিচারক হিসেবে যোগদান করেন সাহাবুদ্দিন। ১৯৯৫ সালে জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত হন। কর্মজীবনে তিনি সহকারী জজ, যুগ্ম জেলা জজ, অতিরিক্ত জেলা জজ ও জেলা জজ হিসেবে বিভিন্ন জেলায় দায়িত্ব পালন করেন। শহীদ বুলবুল কলেজের অধ্যাপকও ছিলেন তিনি।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী থাকাকালে সরকার সাহাবুদ্দিনকে দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব দেয়। এছাড়া প্রেষণে আইন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৯৯ সালে বাংলাদেশের একজন প্রতিনিধি হিসেবে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক আইন সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন মো. সাহাবুদ্দিন। ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা তদন্তের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
২০০১ সালে শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে কর্মরত প্রথম সচিবের রহস্যজনক প্রয়াণের কারণ নির্ণয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মো. সাহাবুদ্দিন। ২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক থাকাকালীন ‘রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা’ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সদস্য হিসেবে ওয়াশিংটন, যুক্তরাজ্য ও সুইজারল্যান্ড সফর করেন।
বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন সাহাবুদ্দিন। এর মধ্যে ১৯৭৩ থেকে ৭৫ সাল পর্যন্ত পাবনা জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সম্পাদক, ১৯৭৮ থেকে ৮২ সাল পর্যন্ত পাবনা জেলা পরিবার পরিকল্পনা সমিতির কোষাধ্যক্ষ ছিলেন।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের স্ত্রী ড. রেবেকা সুলতানা বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা হিসেবে সরকারের যুগ্ম সচিব থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন। তিনি বর্তমানে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। তাদের একমাত্র সন্তান মো. আরশাদ আদনান একটি বেসরকারি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।