ধামাকার প্রতারণা আরও বড়!
জহুরা প্রিতু
লুটপাট আর প্রতারণায় ধ্বংসের মুখে দেশের ই-কমার্স খাত। গত এক বছরে দেশের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসায় ২০০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে, সম্প্রতি কয়েকটি ই কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে উঠেছে প্রতারণার অভিযোগ, হয়েছে মামলা। এমনই এক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ধামাকা। গণমাধ্যমে উঠে এসেছে প্রতিষ্ঠানটির প্রতারণার সব চাঞ্চল্যকর তথ্য।
প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জসিমউদ্দিন চিশতি। এরইমধ্যে গ্রাহকদের কয়েক শ’ কোটি টাকা হাতিয়ে পাড়ি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র। ইনভ্যারিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেডের মালিকও তিনি।
সিআইডি বলছে, প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের বেশির ভাগ সদস্য বিদেশে পালিয়ে গেছেন। জসিমউদ্দিন চিশতি, তাঁর স্ত্রী আর তিন ছেলে একসাথে চালিয়েছে লুটপাট। তাদের প্রতারণায় বিপদে অসংখ্য বিক্রেতা আর গ্রাহক। চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন ও আকর্ষণীয় ছাড়ে গ্রাহকদেরকে পণ্য বিক্রির ফাঁদ ফেলে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৮৯ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
ধামাকা শপিং ডটকম সেলার অ্যাসোসিয়েশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম জানান, প্রায় ৬৫০ জন সেলার আর ৩ লাখ গ্রাহকের বকেয়া পড়েছে। বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ২০০ কোটি টাকা। ডেলিভারি হয়নি প্রায় ১ লাখ পণ্য।
জাহিদুল ইসলাম বলেন, বিক্রেতাদের টাকা ফেরত না দিলে প্রতিষ্ঠানটির এমডি ও চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাঁর অভিযোগ, গ্রাহকদের পণ্য দিয়ে বিল সাবমিট করার ১০ কার্যদিবসের মধ্যে পাওনা অর্থ পরিশোধের কথা ধামাকার। কিন্তু দেড় শতাধিক দিন পার হয়েছে। এপ্রিল থেকে ধামাকার গ্রাহকদের কাছে পণ্য সরবরাহ বাবদ সেলারদের পাওনা প্রায় ২০০ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটি এখনো তা পরিশোধ করেনি।
সেপ্টেম্বরে ধামাকার মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে শত কোটি টাকার বেশি মানি লন্ডারিংয়ের প্রমাণ পায় সিআইডি। ৯ই সেপ্টেম্বর ধামাকার মালিক জসিম উদ্দিনসহ পাঁচজন এবং তাদের তিন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মানি লন্ডারিংরের মামলা হয়।
২০২০ সালের পয়লা অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত পাঁচ লক্ষাধিক গ্রাহককে অস্বাভাবিক কম মূল্যে পণ্য সরবরাহের লোভ দেখায় প্রতিষ্ঠানটি । তালিকায় ছিল মোটরসাইকেল, ফ্রিজ, টেলিভিশন, মোবাইলসহ বিভিন্ন বিলাসবহুল পণ্য। এসব পণ্যের জন্য গ্রাহকদের কাছ থেকে তিনটি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ৮০৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা গ্রহণ করে ধামাকা।
২০১৫ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারি ব্যবসার অনুমতি নেয় ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেড । গত বছর অক্টোবর থেকে ধামাকা শপিং নামে অবৈধভাবে ই-কমার্স ব্যবসা চালু করে প্রতিষ্ঠানটি।
অনুসন্ধানে বলছে, ধামাকা শপিংয়ের নামে কোনো প্রকার অনুমোদন, নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স, বিআইএন, ব্যাংক হিসাব বা দালিলিক ভিত্তি নেই। প্রতারণার উদ্দেশ্যে ই-কমার্স ব্যবসা চালু করেন প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা।
সিআইডি বলছে, গ্রাহকদের অর্ডার করা পণ্যমূল্য এসএসএল কমার্স, সিটি ব্যাংক ও বিকাশ পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেডের সাইথইস্ট ব্যাংক মহাখালী শাখা, সিটি ব্যাংক গুলশান শাখা ও ডাচ-বাংলা ব্যাংক মহাখালী শাখার পৃথক তিনটি হিসাবে জমা করে। এই টাকা অবৈধভাবে তুলে আত্মসাৎ করেন অভিযুক্তরা।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ইভ্যালি কান্ডের পর ধামাকার এই প্রতারণা ও জালিয়াতি বাংলাদেশের ই-কমার্স খাতকে আবারও হুমকির মুখে ফেলবে। অনলাইনে কেনাকাটার প্রতি মানুষের আস্থায় চিড় ধরবে বলে মত তাদের।