জাপানি দুই শিশু যেভাবে আছে সেভাবেই থাকবে: আপিল বিভাগ
সাদাকালো নিউজ
বাংলাদেশি বাবা ও জাপানি মায়ের মধ্যে দুই সন্তানকে নিয়ে টানাহেঁচড়া চলছে কয়েক বছর ধরে। গত ২৯ জানুয়ারি দুই মেয়েকে মায়ের হেফাজতে রাখার আদেশ দেন আদালত। কিন্তু মেঝো মেয়ে লায়লা লিনা মায়ের কাছে যেতে না চাওয়ায় বাধে বিপত্তি। পরে গত দোশরা ফেব্রুয়ারি আদালত রায় দেন- মেঝো মেয়ে একদিন বাবার কাছে আর একদিন মায়ের কাছে থাকবে।
পরে দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে বিদেশে নিয়ে যেতে উচ্চ আদালতে আবেদন করেন জাপানি মা। সেই আবেদনে সাড়া দেননি আপলি বিভাগ। এর ফলে দুই শিশুকে নিয়ে নাকানো এরিকো আপাতত বিদেশে যেতে পারবেন না। একি সঙ্গে দুই শিশু কার জিম্মায় থাকবে এ সংক্রান্ত আপিল জেলা জজ কোর্টকে তিন মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এ সময় পর্যন্ত দুই শিশু যেভাবে আছে সেভাবেই থাকবে।
বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ৭ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ থেকে এই নির্দেশ আসে। আদালতে শিশুদের বাবা ইমরান শরীফের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী আকতার ইমাম। জাপানি মা নাকানো এরিকোর পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী আজমালুল হোসেন কেসি। শুনানিকালে মা নাকানো এরিকো আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে দুই শিশুর বাবা ইমরান শরীফ নাকানো এরিকোর বিরুদ্ধে আদালতে আবেদন করেছিলেন। কারণ জাপানি মা দুইবার চেষ্টা করেছেন শিশুদের দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার। মা নাকানো এরিকোও একটা আদালত অবমাননার আবেদন করেছিলেন। কারণ বাবা ইমরান একটি শিশুকে তার কাছে নিয়ে এসেছিলেন।
সব আবেদনের শুনানি শেষে আপিল বিভাগ আদেশে বলেছেন, মা নাকানো এরিকো যেন শিশুদের দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা না করে। এছাড়া আরেকটি নির্দেশনা দিয়েছেন, সেটি হলো স্থিতিবস্থা মেনে চলার। যার অর্থ এখন যে অবস্থায় আছে, সেই অবস্থাটা মেনে চলতে হবে যতদিন পর্যন্ত জেলা জজ আদালতে থাকা আপিল নিষ্পত্তি না হয়।
জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকোর সঙ্গে বাংলাদেশি প্রকৌশলী ইমরান শরীফের বিয়ে হয় ২০০৮ সালে। ১২ বছরের সংসারে তাদের ঘরে আসে তিন কন্যা সন্তান। দাম্পত্য কলহের জেরে ২০২০ সালে বিচ্ছেদের আবেদন করেন এরিকো। এরপর স্কুলপড়ুয়া দুই মেয়েকে নিয়ে গোপনে বাংলাদেশে চলে আসেন ইমরান। ছোট মেয়ে জাপানে এরিকোর সঙ্গে থেকে যান।
এরপর দুই মেয়েকে পেতে করোনার মধ্যে বাংলাদেশে আসেন জাপানি নারী। এসেই তিনি হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। আদালতের বিচারক তাদের সমঝোতায় আসতে বলেন। কিন্তু ওই দম্পতি সমঝোতায় না আসায় কয়েক মাস ধরে শুনানির পর হাইকোর্ট দুই সন্তানকে বাবার হেফাজতে রাখার আদেশ দেন। পাশাপাশি মা যাতে সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে খরচ দিতে বলা হয় বাবাকে।
হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন শিশুদের মা নাকানো এরিকো। পরে আপিল বিভাগ এক আদেশে শিশু দুটিকে মায়ের জিম্মায় রাখার নির্দেশ দিলেও বাবা সেটা না মানায় বিচারকরা উষ্মা প্রকাশ করেন। পরে আদালত শিশু দুটিকে বাবার হেফাজত থেকে এনে মায়ের হেফাজতে দেয়ার আদেশ দেন।