কে এই মাহতাব উদ্দিন আহমেদ? কেন ছাড়লেন রবি?
জহুরা আক্তার
দেশের দ্বিতীয় শীর্ষ মোবাইল ফোন অপারেটর রবি আজিয়াটা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে অত্যন্ত সফলভাবে ৫ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। মেয়াদ শেষে এ পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মাহতাব উদ্দিন আহমেদ।
বৃহস্পতিবার(৫ আগস্ট) রবির এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ৫ বছর ধরে রবির সিইও ও এমডি হিসেবে ‘সফলতার সঙ্গে’ দায়িত্ব পালন করে আসা মাহতাব তার চুক্তি আর নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি রবি আজিয়াটা লিমিটেডের সিইও মাহতাব উদ্দিন আহমেদের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা আগামী ৩১ অক্টোবর। তবে মাহতাব এখনই আনুষ্ঠানিকভাবে ছুটিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং তার দায়িত্বে না থাকার সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে বলে রবি জানিয়েছে।
আপাতত রবি আজিয়াটার প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) এম রিয়াজ রশিদ তার নিজের দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) দায়িত্বও পালন করবেন।
রবি আজিয়ার পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান থায়াপারান সাঙ্গারাপিল্লাই বলেন, দেশের শীর্ষ ডিজিটাল কোম্পানি হিসেবে রবিকে প্রতিষ্ঠায় মাহতাবের দৃঢ় ভূমিকার জন্য পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ থেকে আমি তাকে অভিনন্দন জানাই।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রবির প্রথম বাংলাদেশি সিইও হিসেবে মাহতাব উদ্দিন আহমেদ এই কোম্পানিকে সাফল্যের এক নতুন চূড়ায় নিয়ে গেছেন। “৪ জি সেবায় রবিকে শীর্ষ স্থানে নেওয়া, বাংলাদেশের কোম্পানি ইতিহাসে সর্ববৃহৎ রবি-এয়ারটেল মার্জার সম্পন্নকরণ, পুঁজিবাজারের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ আইপিওর মাধ্যমে রবির তালিকাভুক্তি, ডিজিটাল অগ্রযাত্রায় বিভিন্ন যুগান্তকারী পদক্ষেপ তার সাফল্যের কিছু উদাহরণ।
রবি বলেছে, ডিজিটাল উদ্ভাবনে নেতৃত্ব দেওয়ার মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মের ডিজিটাল চ্যাম্পিয়ন কোম্পানি হিসেবে রবিকে প্রতিষ্ঠায় মাহতাবের অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
বৃহস্পতিবার এক ফেসবুক পোস্টে রবি থেকে পদত্যাগ করার ঘোষণা দেন মাহতাব উদ্দিন আহমেদ। তিনি জানান, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
মাহতাব উদ্দিন আরও লেখেন, ‘প্রতিটি অসাধারণ যাত্রা শেষ হয়। রবির সঙ্গে আমার গৌরবময় যাত্রাও শেষ হয়েছে। অন্তর্মুখী হওয়া সত্ত্বেও, আমি মনে করি আপনাদের প্রত্যেকের অর্থ্যাৎ রবি পরিবার, স্টেকহোল্ডার, নিয়ন্ত্রক এবং রবির গ্রাহকদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক হৃদয়ের এবং পেশাদারি সংযোগের বাইরে। যদিও আমি বাংলাদেশে কাজ করতে এবং আপনাদের সকলের সঙ্গে থাকা উপভোগ করেছি, তবে গত ছয় বছর ধরে পরিবার থেকে দূরে আছি। এখন আমি তাদের সঙ্গে আরও সময় কাটাতে চাইছি।
দায়িত্ব পালনে পূর্ণ সহযোগিতার জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, আইসিটি বিভাগ, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, রবির সহকর্মী ও ব্যবস্থাপনা পর্ষদ, ব্যবসায়ী সম্প্রদায়, গণমাধ্যম এবং গ্রাহকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন মাহতাব উদ্দিন আহমেদ।
রবির ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তি মাহতাব উদ্দিন আহমেদ। ২০১৬ সালের অক্টোবরে তিনি রবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব নেন। এর আগে তিনি আজিয়াটা গ্রুপ বারহাদে কর্মরত ছিলেন। আজিয়াটা গ্রুপ বারহাদে যোগ দেওয়ার আগে মাহতাব উদ্দিন রবি আজিয়াটা লিমিটেডের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) ছিলেন।
২০১৬ সালের অক্টোবরে রবির শীর্ষ পদ পাওয়ার আগে মাহতাব উদ্দিন আহমেদ ১৭ বছর ইউনিলিভারের বিভিন্ন পদে কাজ করেন। তিনি ইউনিলিভার পাকিস্তান, ইউনিলিভার আরব এবং ইউনিলিভার বাংলাদেশের মতো বিভিন্ন অপারেটিং সংস্থায় ফাইন্যান্স ডিরেক্টর, গ্রুপ ফিনান্সিয়াল কন্ট্রোলারের পদসহ বিভিন্ন বিজনেস ও ফাইন্যান্স লিডারশিপ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
এছাড়াও তিনি নেপালের এক নম্বর মোবাইল ফোন অপারেটর এনসেল প্রাইভেট লিমিটেড-এর ডিরেক্টর হিসাবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
মাহতাব উদ্দিন আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) থেকে হিসাববিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।মাহতাব উদ্দিন আহমেদ চার্টার্ড ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউনটেন্টস (সিআইএমএ, ইউকে)-এর এফসিএমএ ও সিজিএমএ সদস্য। হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলেরও শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি।