ইগ নোবেল কী এবং কেন দেয়া হয়? আগে মানুষকে হাসায়, পরে ভাবায়
রাকিব হাসান
নোবেল পুরস্কার। বিশ্বের সবচেয়ে দামি ও সম্মানিত পুরস্কার। কিন্তু জানেন কি, এই নোবেল পুরস্কারের মতোই আরেকটি পুরস্কার আছে? তবে সেটা ব্যঙ্গাত্মক নোবেল পুরস্কার। নাম ‘ইগ নোবেল।
‘ইগ নোবেল’ মূলত নোবেল পুরস্কারের প্যারোডি। অনেকে এটাকে আবার নোবেল পুরস্কারের সৎ ভাইও বলে থাকেন। নোবেল পুরস্কারের মতো ‘ইগ নোবেল’ও একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার।
নোবেল পুরস্কার দেয়া হয় গবেষণা, উদ্ভাবন ও মানবকল্যাণমূলক কাজের জন্য । নোবেলের মতোই নানা ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য ইগ নোবেল দেয়া হয়। তবে একটা শর্ত আছে। আবিষ্কারগুলো দেখে বা সেগুলোর বর্ণনা শুনে যেন হাসি পায়। যাকে বলে, “আগে মানুষকে হাসায়, পরে ভাবায়”।
মজার আর হাস্যকর বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও উদ্ভাবনের জন্য দেয়া হয় ’ইগ নোবেল। হাস্যকর শুনতে হলেও এর পিছনে লুকিয়ে রয়েছে বিজ্ঞান ।
এ পুরস্কারের মাধ্যমে এমন সব বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে স্বীকৃতি দেয়া হয়, যেগুলো প্রথমে হাসির খোরাক জোগায়। কিন্তু পরে ওই বিষয়গুলো মানুষকে ভাবতে বাধ্য করে। বিজ্ঞানের আবিষ্কারের ব্যাপারে মানুষকে উৎসাহিত করা এবং ব্যতিক্রমধর্মী আবিষ্কারকে স্বীকৃতি দেয়াই ইগ নোবেলের উদ্দেশ্য।
১৯৯১ সাল থেকে প্রতিবছর ১০টি বিভাগে দেয়া হচ্ছে ইগ নোবেল। পদার্থবিদ্যা, চিকিৎসাবিদ্যা, জীববিজ্ঞান, অর্থনীতি, স্নায়ুবিজ্ঞান, মনোবিদ্যা, পুষ্টি, জনস্বাস্থ্য, চারুকলা ইত্যাদি বিভাগে দেয়া হয় ‘ইগ নোবেল’। এসব বিভাগে বিজ্ঞানসম্মত যে গবেষণা মানুষ হাসায় ও ভাবায় সে বিষয়ে দেয়া হয় ব্যাঙ্গাত্মক এ নোবেল।
বিজ্ঞানভিত্তিক রম্য পত্রিকা এ্যানালস অব ইমপ্রোব্যাবল রিসার্চ, এই ইগ নোবেল পুরস্কারটি দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিজয়ীদের হাতে তুলে দেয়া হয় পুরস্কার। সত্যিকারের নোবেল জয়ীর হাতেই পুরস্কার পান ইগ নোবেল জয়ীরা।
এ বছরও তেমনই সব আজব বিষয়ে গবেষণার জন্য দেয়া হয়েছে ইগ নোবেল। একটা গণ্ডারকে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখলে তার দেহে কী প্রতিক্রিয়া হয়? এমন অবাক করা বিষয়ে গবেষণার জন্য একদল বিজ্ঞানীকে এ বছরের ব্যঙ্গাত্মক ‘ইগ নোবেল পুরস্কার’ দেয়া হয়েছে। এবার করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এই মজার অনুষ্ঠানটি হয়েছে অনলাইনে ।
পুরস্কার হিসেবে ইগ নোবেলজয়ীরা পেয়েছেন একটি পিডিএফ প্রিন্ট-আউট, যা জোড়া দিয়ে তাদের নিজেদের ট্রফি বানিয়ে নিতে হবে। এ ছাড়া ছিল নগদ অর্থ হিসেবে ১০ ট্রিলিয়ন ডলারের একটি জিম্বাবুয়েইয়ান জাল ব্যাংক নোট।
নামিবিয়ায় গিয়ে এই অভিনব পরীক্ষা চালিয়েছিলেন তারা। এই বিজ্ঞানী দল ‘পরিবহন গবেষণা’ ক্ষেত্রে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। তারা ১২টি গণ্ডারকে ১০ মিনিট ধরে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখার মত উদ্ভট গবেষণা করেছেন। গবেষণাটি করেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পশু চিকিৎসক রবিন র্যাটক্লিফ এবং তার সহকারীরা ।
বিজ্ঞানীদল জানতে চেয়েছিলেন, প্রাণীদের যখন পায়ে দড়ি বেঁধে হেলিকপ্টারে করে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, তা তাদের স্বাস্থ্যের ওপর কী প্রভাব ফেলে। তারা বলেন যে, প্রাণীরা ভালোভাবেই এ পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে পারে। বিশেষ করে গণ্ডাররা উল্টো হয়ে ঝুলন্ত থাকার সময় আরো বেশি ভালো করে।
বাকি যারা নোবেল পেয়েছেন তাদের গবেষণাৗ আপনাকে প্রথমে হাসাবে, পরে ভাবাবে। ফুটপাতে আটকে থাকা চুইংগামের ভেতরে যে ব্যাকটেরিয়া, সেটা নিয়ে গবেষণা করেছেন একদল বিজ্ঞানী। আরেক দলের গবেষণার বিষয় ছিল সাবমেরিনের মধ্যে তেলাপোকার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণের উপায় নিয়ে।