‘আমার পোশাক ছুঁইয়ো না’: আফগান নারীদের অভিনব প্রতিবাদ
রাকিব হাসান
আফগানিস্তান এখন কাবুল জয়ীদের দখলে। সরকারও চালাচ্ছে তারা। গত বারের শাসনের মতো এবারো ছাত্রীদের জন্য চালু করেছে নতুন পোশাকনীতি। এই নীতি মেনে নিচ্ছেন না অনেক আফগান নারীই। তবে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদের সুযোগ না থাকায়, তারা বেছে নিয়েছেন অনলাইনকে।
অনলাইনে একটি প্রতিবাদী প্রচার কার্যক্রম শুরু করেছেন আফগান নারীরা। প্রতিবাদ জানাতে তাঁরা যোগাযোগের সামাজিক মাধ্যমে ‘ডু নট টাচ মাই ক্লথস’ ও ‘আফগানিস্তান কালচার’ নামে হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করছেন। এই হ্যাশট্যাগের সঙ্গে আফগানিস্তানের ঐতিহ্যবাহী রঙিন পোশাকের ছবি জুড়ে দিয়ে তা শেয়ার করছেন নারীরা।
সংবাদ সস্থা বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে আফগান নারীদের এই অভিনব প্রতিবাদের তথ্য জানানো হয়। সামাজিক মাধ্যমে এই প্রতিবাদী প্রচারাভিযান শুরু করেন বাহার জালালি। তিনি আফগানিস্তানের আমেরিকান ইউনিভার্সিটির ইতিহাস বিভাগের সাবেক অধ্যাপক। এই প্রতিবাদের কারণ হিসেবে জালালি বলেন, আফগানিস্তানের পরিচয় ও সার্বভৌমত্ব আক্রমণের মুখে। এটি তার সবচেয়ে বড় উদ্বেগের একটি কারণ।
বিবিসি বলছে, ‘ডু নট টাচ মাই ক্লথস’ ও ‘আফগানিস্তান কালচার’ নামে দুটি হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে প্রতিবাদ শুরু করেন জালালি। তিনি টুইটারে নিজের একটি ছবিও পোস্ট করেন। ছবিতে দেখা যায়, তাঁর পরনে সবুজ রঙের ঐতিহ্যবাহী আফগান পোশাক। অন্য আফগান নারীদেরও এই প্রতিবাদে শামিল হতে আহ্বান জানান তিনি। এ বিষয়ে জালালি বলেন, তিনি বিশ্ববাসীকে জানাতে চান, তারা গণমাধ্যমে যা দেখেছে, তা আফগানিস্তানের সংস্কৃতি নয়, তাদের পরিচিতি নয়।
কয়েক দিন আগে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে তালেবানপন্থী একটি নারী সমাবেশ হয়। তালেবানের চালু করা পোশাকনীতি অনুসরণ করেই ওই নারীরা সমাবেশ অংশ নেন। সমাবেশের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, অংশগ্রহণকারী নারীরা বলছেন, যারা মেকআপ ও আধুনিক পোশাক পরে, তারা আফগান মুসলিম নারীদের প্রতিনিধিত্ব করে না। তারা বিদেশি ও শরিয়াহবিরোধী নারী অধিকার চান না। কাবুলে অনুষ্ঠিত তালেবানপন্থী ওই সমাবেশের পরই সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা আফগান নারীরা অনলাইনে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন।
বিবিসি বলছে, আফগানিস্তানের প্রতিটি অঞ্চলের নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী পোশাক রয়েছে। এই বৈচিত্র্য মাথায় রেখেই প্রতিবাদী আফগান নারীরা একটি সুনির্দিষ্ট বিষয়কে প্রতিপাদ্য করে অনলাইনে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। তাঁদের প্রতিবাদের বিষয় হলো পোশাকে প্রচুর রং, আয়না ও সূচিকর্ম। প্রতিবাদী নারীরা বলছেন, পোশাকই তাঁদের পরিচয়। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়াভিত্তিক অধিকারকর্মী স্পোজমে মাসিদ টুইটারে লেখেন, ‘এটাই আফগানদের প্রকৃত পোশাক। আফগান নারীরা এ ধরনের রঙিন ও রুচিশীল পোশাক পরে। কালো বোরকা কখনোই আফগান সংস্কৃতির অংশ ছিল না।’
মাসিদ আরও বলেন, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আফগানিস্তান একটি ইসলামিক দেশ। তাঁদের নানি-দাদিরা নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরেছেন। তাঁরা নীল চাদারি ও আরবের কালো বোরকা পরেননি। এই অধিকারকর্মী বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী পোশাক তাদের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও হাজার বছরের ইতিহাসের প্রতিনিধিত্ব করে, যা প্রত্যেক আফগানকে গর্বিত করে।’
লিমা হালিমা আহমেদ নামের এক আফগান গবেষক লিখেছেন, তিনি এই ছবি পোস্ট করেছি, কারণ তারা আফগান নারী। তারা গর্বের সঙ্গে তাদের সংস্কৃতির পোশাক পরেন। তারা মনে করেন, কিছু সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তাদের পরিচয় সংজ্ঞায়িত করে দিতে পারে না। লিমা হালিমা আরও বলেন, ‘তাদের সংস্কৃতি অন্ধকারাচ্ছন্ন নয়। তাদের সংস্কৃতি সাদা-কালো নয়। তাদের সংস্কৃতি রঙিন। এখানে সৌন্দর্য আছে, শিল্প আছে, কারুকলা আছে, আছে পরিচয়।’
সম্প্রতি নতুন সরকার গঠনের ঘোষণা দেয় কাবুলজয়ীরা। সরকার গঠনের পরই তাদের সর্বোচ্চ নেতা দেশটিতে শরিয়াহ আইন কার্যকর করতে নির্দেশ দিয়েছেন।