অস্ট্রেলিয়ার হারে সেমিফাইনালে যাওয়ার আশা পেলো বাংলাদেশ
সর্বশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপে আফগানিস্তান-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচটার কথা মনে আছে? ওয়াংখেড়ের সে ম্যাচে খাদের কিনারে থেকেও অনবদ্য লড়াইয়ে দুর্দান্ত ডাবল সেঞ্চুরিতে একাই আফগানদের হাত থেকে ম্যাচ ছিনিয়ে নিয়েছিলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল।
আফগানিস্তানের ২৯৩ রানের জবাবে ৯১ রানে ৭ উইকেট চলে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার। প্যাট কামিন্সদের হার তখন সময়ের ব্যাপার বলেই মনে হয়েছিল। এমন বিরূপ পরিস্থিতিতেও অবিশ্বাস্য একটা ইনিংস খেলে অস্ট্রেলিয়াকে ৩ উইকেটে জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন ম্যাক্সওয়েল।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুপার এইটের ম্যাচে আফগানিস্তানকে সামনে পেয়ে আজ আবারও ওয়াংখেড়ের স্মৃতি মনে করাচ্ছিলেন ৩৫ বছর বয়সী এ মারকুটে ব্যাটসম্যান। আফগানিস্তানের ১৪৮ রান তাড়ায় নেমে দলীয় ১৬ রানেই দুই উইকেট হারালে মাঠে নামেন ম্যাক্সওয়েল। এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে সতীর্থের যাওয়া-আসাতেও একাই ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে প্রতিআক্রমণ চালাতে থাকলেন ম্যাক্সওয়েল।
তবে এবার আর শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যেতে পারেননি অস্ট্রেলিয়ান মারকুটে এ ব্যাটসম্যান। ৪১ বলে ৫৯ রানের ইনিংস খেলে ড্রেসিং রুমের পথ ধরেছেন। অস্ট্রেলিয়াও ম্যাচটা হেরেছে ২১ রানে। একইসঙ্গে সেমি ফাইনালে ওঠার ক্ষীণ আশা আবারও জেগে উঠেছে বাংলাদেশের সামনে। সুপার এইটের শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের মুখোমুখি হবেন নাজমুল হাসান শান্তরা। সে ম্যাচ আফগানিস্তানকে বড় ব্যবধানে হারাতে পারলে, অন্যদিকে ভারতের কাছে অস্ট্রেলিয়া বিশাল ব্যবধানে হেরে গেলে রান রেটের জটিল সমীকরণে শেষ চারে যাওয়ার আশা একটু হলেও থাকবে বাংলাদেশের।
আজ সেন্ট ভিনসেন্টে টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে দুর্দান্ত সূচনা পায় আফগানিস্তান। হ্যাজলউড-অ্যাগার-কামিন্সদের সামলে উদ্বোধনী জুটিতে ১১৮ রান তোলেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ (৬০) ও ইব্রাহিম জাদরান (৫১)। দুই ওপেনারের পর কেউ অবশ্য সেভাবে দাঁড়াতে পারেননি। শেষ দিকে করিম জানাতের ১৩ ও মোহাম্মদ নবীর ৪ বলে ১০ রানের কল্যাণে ১৪৮ রানের সংগ্রহ পায় আফগানরা।
আফগান ইনিংসের শেষ দিকে হ্যাটট্রিক তুলে নেন কামিন্স। প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে টানা দুটি হ্যাটট্রিক করলেন অস্ট্রেলিয়ান পেসার। টানা দুই হ্যাটট্রিক করে কামিন্স দেখলেন, আশপাশে কেউ নেইটানা দুই হ্যাটট্রিক করে কামিন্স দেখলেন, আশপাশে কেউ নেই। আফগানিস্তানের ১৪৮ রানের জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে রানের খাতা খোলার আগেই নাভিন উল হকের দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড হয়েছেন ট্রাভিস হেড। তিনে নামা মিচেল মার্শও (১২) আউট হয়েছেন ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই। ১৬ রানে দুই উইকেট নেই অস্ট্রেলিয়ার।
ম্যাক্সওয়েল একপ্রান্তে ঢাল হয়ে দাঁড়ালেও অন্যপ্রান্তে চলতে থাকে সতীর্থদের যাওয়া আসার মিছিল। ওয়ার্নার (৮ বলে ৩) রানের জন্য রীতিমতো সংগ্রাম করে আউট হলেন। ফর্মে থাকা স্টয়নিস (১৭ বলে ১১ রান) উইকেটে এসে থিতুই হতে পারলেন না। টিম ডেভিড (২) তো দুই অঙ্কই ছুঁতে পারলেন না। ম্যাক্সওয়েল বুঝে গেলেন, যা করার, তাঁকে একাই করতে হবে। দায়িত্ব সব নিজের কাঁধে নিয়ে আগ্রাসী ব্যাটিং চালাতে থাকলেন ম্যাক্সওয়েল। ইনিংসের ১৪তম ওভারে দলীয় শত রান পেরিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। এর মধ্যে ম্যাক্সওয়েল ৩৫ বলে তুলে নেন এ বিশ্বকাপে তাঁর প্রথম ফিফটি।
ম্যাক্সওয়েল যেভাবে ব্যাটিং করছিলেন, তাতে অস্ট্রেলিয়ার জয় সময়ের ব্যাপার বলেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু দলীয় ১০৬ রানে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে থেমে যান ম্যাক্সওয়েল (৪১ বলে ৬ চার ও ৩ ছক্কায় ৫৯ রান)। একইসঙ্গে নিভে যায় অস্ট্রেলিয়ার আশার প্রদীপও। ম্যাক্সওয়েল আউট হওয়ার পরে স্কোরবোর্ডে আর মাত্র ২১ রান যোগ করতেই গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। এতে ২১ রানের জয় নিশ্চিত হয় আফগানিস্তানের।