দেশের রাজনীতিতে আলোচিত চরিত্র কে এই জয়নাল হাজারী?
নাফিজা আক্তার
ফেনীর আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য এবং আলোচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব জয়নাল আবেদীন হাজারী আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।
২৭ ডিসেম্বর বিকেলে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী এবং জয়নাল হাজারী সম্পাদিত ‘হাজারিকা প্রতিদিন’পত্রিকার বার্তা সম্পাদক জসীম উদ্দিন এ খবর নিশ্চিত করেছেন।
জয়নাল হাজারী রাজনৈতিক অঙ্গনে এক আলোচিত-সমালোচিত নাম। ১৯৪৫ সালে ২৪ আগষ্ট জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
ছাত্র জীবন থেকেই রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন তিনি। ছাত্রাবস্থায় ফেনী সরকারি কলেজে তৎকালীন ছাত্র মজলিশের (বর্তমান ছাত্র সংসদ) সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ছিলেন। এরপর বৃহত্তর নোয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হন তিনি। যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পদেও দায়িত্ব পালন করেন জয়নাল হাজারী।
মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল হাজারী ১৯৮৪-২০০৪ পর্যন্ত ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ফেনী-২ (ফেনী সদর) আসন থেকে ১৯৮৬, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে এমপি নির্বাচিত হন তিনি। শেষবার এমপি হয়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি পদের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
ওই সময়ে ফেনীতে জয়নাল হাজারী ‘ত্রাসের রাজত্ব’ কায়েম করেছিলেন বলে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এমনকি দলের মধ্যে নিজের বিরোধীদের উপরও নিয়ন্ত্রনহীন ও কঠোর ছিলেন হাজারী। তার নির্যাতন থেকে সাংবাদিকরাও রেহাই পাননি।
জয়নাল হাজারী পরিচিতি পেয়েছিলেন ‘গডফাদার’ হিসেবেও। অবশ্য ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই’ হাজারীকে এভাবে চরিত্রায়ন করা হয় বলে মনে করতেন দলীয় লোকেরা ।
১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে হাজারীর অনিয়ন্ত্রিত কর্মকাণ্ডের কারণে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারকেও সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০১ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর ১৬ অগাস্ট রাতে যৌথবাহিনীর (বিডিআর-পুলিশ) তল্লাশির সময় পালিয়ে যান তিনি । পরবর্তীতে ভারতে চলে যান হাজারী।
দীর্ঘ আট বছর দেশের বাইরে থাকার পর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় ফিরলে দেশে ফিরে আসেন তিনি।
২০০৯ সালে ১৫ এপ্রিল আদালতে অর্থপাচারের একটি মামলায় জামিন চাইতে গেলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে জামিনে মুক্তি পান তিনি।
পলাতক অবস্থায় হাজারীর বিরুদ্ধে মোট ২৭টি মামলা হয়। যার মধ্যে পাঁচটিতে সাজার রায় হলেও পরবর্তীতে উচ্চ আদালত তাকে সবগুলোতেই খালাস দেয়।
বহু ঘটনায় বিতর্কিত এই রাজনীতিবিদ ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনীর তিনটি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও সেগুলো বাতিল হয়ে যায়।সেই সময় তাকে আওয়ামী লীগ বহিষ্কার করা হয়েছিল। ২০১৯ সালে পুনরায় তাকে দলে ফিরিয়ে নেয়া হয় এবং তাকে কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদে স্থান দেওয়া হয়।
ব্যক্তিজীবনে চিরকুমার ছিলেন এই নেতা। ফেনীর এক সময়ের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা হিসেবে বিবেচিত জয়নাল হাজারী শেষ জীবনে রাজনীতিতে ক্ষমতাহীন হয়ে পড়েছিলেন। গত এক যুগে ফেনী ছেড়ে ঢাকার ধানমন্ডিতে থাকতেন তিনি। সেখান থেকেই ‘হাজারিকা প্রতিদিন’ নামে একটি সংবাদপত্র প্রকাশ করে চলছিলেন তিনি।