অবিশ্বাস্য গতিতে হত্যা মামলার তদন্ত, এসআইকে বরখাস্তের আদেশ
সাদাকালো নিউজ
মানিকগঞ্জে রুবেল হত্যার ঘটনায় তদন্ত কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানাকে বরখাস্ত করতে জেলা পুলিশ সুপারকে (এসপি) নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি সাসপেন্ড থাকবেন বলে জানান রিটকারী আইনজীবী।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কর্মকর্তা দিয়ে তদন্ত করারও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া পুলিশ সুপারের নিচে নয় এমন পর্যায়ের কর্মকর্তার দ্বারা তদন্ত করতে বলেছেন।
বাদী নিজে মামলা করেননি, এটা সঠিক কি না, সুপারসনিক গতিতে মামলার তদন্ত শেষ করা হয়েছে, এ ঘটনায় আসামি ছাড়া অন্য কোনো থার্ডপার্টি জড়িত কি না এসব বিষয় ধরে তদন্ত করার জন্য বলেছেন আদালত।
তদন্ত কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রুবেল হত্যার ঘটনা তদন্ত শেষ করার বিষয়ে দায়ের করা রিটের শুনানি নিয়ে সোমবার (৩ এপ্রিল) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. বদরুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এ দিন রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী।
শুনানির বিষয়ে রিটকারী আইনজীবী সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার আগেই সাধারণ ডায়েরি রুজু করা হয় কীভাবে? আর ২ ঘণ্টা ১০ মিনিটে ১৩ সাক্ষীর জবানবন্দি টাইপ করে রেকর্ড করা হয় দুটো ভিন্ন জায়গায়। প্রতি ৯.৫ মিনিটে একজনের জবানবন্দি টাইপ করে লিপিবদ্ধ করেছেন। তিনি বলেছেন যে কাগজে লিপিবদ্ধ করেছেন। কিন্তু জবানবন্দিগুলো টাইপ করা।
তিনি ডায়েরিতে বলেছেন যে, তিনি ১০টা ৩৫ মিনিটে ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন এবং ১০টা ৪৫ মিনিটে থানার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেন। অপরপক্ষে ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে উল্লেখ আছে যে, তিনি ১১টার সময় কোর্টে আসামিকে নিয়ে যান এবং ৩টায় মানিকগঞ্জ কারাগারে আসামিকে প্রেরণ করা হয়। কেস ডায়েরি শুরু সন্ধ্যা ৭টা ২৫ মিনিটে, আর চার্জশিট জমা দিয়েছেন ২৫ তারিখ ৭টা ৩০ মিনিটে। Is it the conduct of an ordinary human conduct?
সকালের সেশনে শুনানির শুরুতেই রুবেল হত্যা মামলায় মাত্র ৪২ ঘণ্টায় অভিযোগপত্র দেওয়ার প্রসঙ্গটি তুলে ধরেন আদালত। এসময় ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে উদ্দেশ্য করে হাইকোর্ট বলেন, আপনার মতো পুলিশ অফিসার দরকার। আপনি মাত্র ৪২ ঘণ্টায় হত্যা মামলার তদন্ত শেষ করলেন? এসময়ের মধ্যে কখন সাক্ষ্য নিলেন, কখন ঘুমালেন, কখন খাওয়া-দাওয়া করলেন তা আমাদের দেখান। আর কতটি মামলা আপনি তদন্ত করেছেন, সেগুলো কত সময়ে শেষ করেছেন তার তালিকা জমা দেন।
এসময় পুলিশ কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলেন, এটা আমার প্রথম তদন্ত। এরপর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী বলেন, অভিযোগপত্র দ্রুত দিলেও সমস্যা। আবার দেরি করে দিলেও সমস্যা। আদালত বলেন, তাহলে আমরা একটা মক ট্রায়াল করি। কত দ্রুত অভিযোগপত্র দিতে পারেন, সেটা আমরা দেখতে চাই। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এটা দেখার এখতিয়ার আপনাদের আছে।
একপর্যায়ে আদালত দাখিল করা নথিতে দেখতে পান, মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থানার মামলার একটি তদন্ত প্রতিবেদন রেফারেন্স হিসেবে নথিতে সংযুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
এসময় আদালত পুলিশ কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানাকে ভর্ৎসনা করে বলেন, কেন আপনি এটা দিলেন? আপনার কাছে তো রেফারেন্স চাওয়া হয়নি। আপনি বেশি স্মার্টনেস দেখাচ্ছেন। নিজেকে বেশি স্মার্ট মনে করেন? কোর্টের সঙ্গে বেশি স্মার্টনেস দেখাবেন না। একেবারে কারাগারে পাঠিয়ে দেবো।
পরে আদালত এ মামলার শুনানি দুপুর ২টা পর্যন্ত মুলতবি করেন। এরপর শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেন।
এর আগে গত ১৪ মার্চ রুবেল (২২) হত্যার ঘটনায় মরদেহ উদ্ধার থেকে নিয়ে মাত্র ৪২ ঘণ্টায় করা তদন্ত কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে রুবেল হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মানিকগঞ্জ সদর থানার পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো. মাসুদ রানাকে কেস ডকেটসহ ৩ এপ্রিল আদালতে হাজির হতে বলা হয়। এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. বদরুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের সমন্বয়ে বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এর ফলে আজ আদালতে উপস্থিত হন পুলিশের ওই কর্মকর্তা।
গত ১ মার্চ একটি জাতীয় দৈনিকে ‘লাশ উদ্ধার থেকে অভিযোগপত্র, ৪২ ঘণ্টার অবিশ্বাস্য তদন্ত’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এ প্রতিবেদন সংযুক্ত করে হাইকোর্টে রিট করা হয়।
গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে মানিকগঞ্জ সদরের কৈতরা গ্রামের একটি হ্যাচারিতে খুন হন রুবেল। পরদিন নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে সোহেল নামের একজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। পরে আসামিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তিনি এখন কারাগারে।