হেফাজতে ইসলামের আমির জুনাইদ বাবুনগরীর কী হয়েছিল?
সাদাকালো নিউজ ডেস্ক
হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী মৃত্যুবরণ করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন তিনি।
হাটহাজারী মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী গনমাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন । তিনি জানান, বৃহস্পতিবার বেলা ১২.৩০ মিনিটে আল্লামা বাবুনগরী শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে চট্টগ্রামে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়।
হাটহাজারী মাদরাসার একটি সূত্র জানায়, বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে বাবুনগরীর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে তার শারীরিক অবস্থার হঠাৎ আরও অবনতি হয়। পরে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়।
উল্লেখ্য,৬৭ বছর বয়সি দেশের অন্যতম শীর্ষ আলেমে দ্বীন দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ, কিডনি ও ডায়াবেটিসসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। এর আগেও তিনি কয়েকবার অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।
গত ৮ আগস্ট দুপুরে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায় করোনা ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছিলেন জুনায়েদ বাবুনগরী।
হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমীর আল্লামা শফির মৃত্যুর পর থেকেই আলোচনায় আসেন জুনায়েদ বাবুনগরী। তার জন্ম ১৯৫৫ সালে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থানার বাবুনগর গ্রামে। বাবা আবুল হাসান ও মা ফাতেমা খাতুন। ৫ বছর বয়সে তিনি জামিয়া বাবুনগর মাদ্রাসায় ভর্তি হন। এরপর ১০ বছর আল্-জামিয়াতুল আহ্লিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসায় পড়াশুনা করেন। ১৯৭৬ সালে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স) পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন বাবুনগরি।
একইবছর মাত্র ২০ বছর বয়সে তিনি পাকিস্তানের দারুল উলুম করাচি মাদরাসায় উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হন। সেখানে হাদিস ও তাফসির, ফিকাহশাস্ত্র নিয়ে গবেষনা করেন তিনি। চার বছর পর দেশে ফিরে এসে চট্টগ্রামে আল্-জামিয়াতুল ইসলামিয়া মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন।
২০০৩ সাল থেকে মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী হাটহাজারী মাদ্রাসার একজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক ছিলেন। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুসারে, বাবুনগরীর ছাত্রের সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজারের বেশি। তবে তার বিরুদ্ধে তাফসীর ও উলূমে হাদিস বিভাগের দুটি বিষয়ে পাঠদানের ক্ষেত্রেও উদাসীনতার অভিযোগ আছে। এছাড়া মাদ্রাসার সদন ও ভাউচারে সই করার ক্ষেত্রে অবহেলা করেছেন বলেও অভিযোগ করেন সংশ্লিষ্টরা। মাদ্রাসার ভেতর ও বাইরে তার অনেক ভক্ত অনুরাগী বাবুনগরির।
২০১৭ সালের জুলাই মাসে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির মজলিশে শুরার বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়ে মাওলানা জুনায়েদকে সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব দেয়া হয়। হেফাজতের মহাসচিবের দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে আহমদ শফীর আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেন মাওলানা জুনায়েদ। আহমদ শফী বেশির ভাগ সময় বার্ধক্যজনিত কারণে অসুস্থ থাকায় তাকে সহায়তার জন্য মাওলানা জুনায়েদকে এ দায়িত্ব দেয়া হয়।
অন্যদিকে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত বেফাকের ১০ম কাউন্সিলে নতুন করে গঠিত কমিটিতেও পদ পান জুনায়েদ।
২০১৩ সালের ৫ ও ৬ মে শাপলা চত্বরে হেফাজত আন্দোলনের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে হত্যার অভিযোগ সহ কয়েকটি অভিযোগে ২০১৩ সালের ৭ মে তাকে পুরান ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দির এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে ১৩ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয় তাকে।
২০২০ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশে ভাস্কর্য বিতর্ক শুরু হলে, মামুনুল হকের পক্ষে সমর্থন দিয়ে তিনি কঠোরভাবে ভাস্কর্য বিরোধী বক্তব্য দেন। তার বিরুদ্ধে তখন রাষ্ট্রোদ্রহিতার মামলা করা হয়।
এছাড়াও, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা, শাপলা চত্বরে সংশ্লিষ্টতা, দেশে পর্দা বাধ্যতামূলক করাসহ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় আসেন জুনায়েদ বাবুনগরি। ২০২০ সালে তিনি হেফাজতে ইসলামের মুখপাত্র হিসেবে নাস্তিকদের দেশ থেকে বিতারণের জন্য বিভিন্ন সময় কঠোর ভাষায় ঘোষণা দেন। সম্প্রতি দুদকের তদন্তে তার স্থাবর অস্থাবর প্রায় আড়াই শো কোটি টাকার সম্পদ আছে বলে উঠে এসেছে।
ব্যাক্তিগত জীবনে বাবুনগরী ৫ মেয়ে ও এক ছেলের জনক। তিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি বাংলা, উর্দূ ও আরবীতে ৩০টির বেশি বই লিখেছেন।