২ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯ ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন
সাদাকালো নিউজ
দুই কোটি ৯ লাখ লিটার সয়াবিন ক্রয়ের তিনটি প্রস্তাবসহ মোট ৯ ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ২ হাজার ৪০৫ কোটি ৪৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকা।
বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিটির এক ভার্চুয়াল সভায় প্রস্তাবগুলো অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষ অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান।
তিনি বলেন, সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ৩৯তম সভা হয়েছে। ক্রয় কমিটির অনুমোদনের জন্য ৯টি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ৪টি, কৃষি মন্ত্রণালয়ের ১টি, শিল্প মন্ত্রণালয়ের ১টি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের ১টি, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ১টি এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের ১টি প্রস্তাব ছিল। ক্রয় কমিটির অনুমোদিত ৯টি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ ২ হাজার ৪০৫ কোটি ৪৬ লাখ ৪৮ হাজার ৬৬৭ টাকা। মোট অর্থায়নের মধ্যে জিওবি থেকে ব্যয় হবে ৯৩২ কোটি ১৬ লাখ ৭৮ হাজার ৫১৬ টাকা এবং এডিবি, জাইকা ও দেশীয় ব্যাংক ঋণ ১ হাজার ৪৭৩ কোটি ২৯ লাখ ৭০ হাজার ১৫১ টাকা।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় মরক্কোর থেকে ১১তম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন টিএসপি সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রতি মেট্রিত টন টিএসপি সার ৪৮০ মার্কিন ডলার হিসেবে মোট ব্যয় হবে এক কোটি ৪৪ লাখ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৫৩ কোটি ৮৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ৯ম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন (১০%+) বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে এক কোটি ৪৪ লাখ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৫৩ কোটি ৬০ লাখ ৪৮ হাজার টাকা।
সভায় ‘শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব ফ্রনটিয়ার টেকনোলজি’ এর প্রাথমিক অবকাঠামো নির্মাণ-পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। তথ্য প্রযুক্তি খাতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি এবং গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলায় ‘শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব ফ্রনটিয়ার টেকনোলজি-এর প্রাথমিক অবকাঠামো নির্মাণ’-প্রকল্পের প্যাকেজ নং-ডব্লিউডি-৫, ১৬, ১৭, ২৭, এবং ২৯ পূর্ত কাজ ক্রয়ের জন্য উম্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ৪টি দরপত্র জমা পড়ে। তার মধ্যে ২টি প্রস্তাব কারিগরি ও আর্থিকভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ণ ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাইভেট লিমিটেড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে মোট ব্যয় হবে ৪২৪ কোটি ৫৪ লাখ ৮৬ হাজার ৪৮৬ টাকা।
তিনি বলেন, ‘সাসেক ঢাকা-সিলেট করিডোর সড়ক উন্নয়ন’ প্রকল্পের ডব্লিউপি-০৩ প্যাকেজের লট নং ডিএস-০৫-এর পূর্ত কাজ ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্প বাস্তবায়নে দরপত্র আহ্বান করা হলে ৯টি প্রতিষ্ঠানের দরপ্রস্তাব জমা পড়ে। তার মধ্যে কারিগরিভাবে ৬টি প্রস্তাব রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে হেগো, চায়না ও মীর আকতার, বাংলাদেশ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে এক হাজার ২৩২ কোটি ৯৫ লাখ ৭৮ হাজার ৫৮১ টাকা।
সভায়, ‘কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প (ফেজ-২)’-এর পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ভেরিয়েশন প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এনআইজে কনসালট্যান্টস কোম্পানি লিমিটেডকে ২৪৫ কোটি ৯৯ লাখ ৭৮ হাজার ৩৭৪ টাকায় নিয়োগ করা হয় যার চুক্তির মেয়াদ ২০২২ সালের ৩০ জুন শেষ হয়। প্রকল্পের নির্মাণ কাজের মেয়াদ বৃদ্ধি হওয়ায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মেয়াদ আগামী ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ৭ মাস বৃদ্ধির জন্য ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ২৪ কোটি ৫২ লাখ ৪ হাজার ৬০১ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।
তিনি বলেন, স্থানীয়ভাবে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ৪৪ লাখ লিটার (+৫%) সয়াবিন তেল ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী ১ কোটি পরিবারের নিকট টিসিবির পণ্যসামগ্রী ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির জন্য জরুরি প্রয়োজন বিবেচনায় স্থানীয়ভাবে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ভোজ্যতেল ক্রয়ের সিদ্ধান্ত হয়। সে প্রেক্ষিতে, টিসিবি কর্তৃক ৪৪ লাখ লিটার সয়াবিন তেল সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে সেনা এডিবল অয়েল ইন্ডাষ্ট্রিজ থেকে এই সয়াবিন তেল ক্রয় করা হবে। এতে ব্যয় হবে ৮১ কোটি ১৮ লাখ টাকা। প্রতি লিটার সয়াবিন তেল এর মূল্য পড়বে ১৮৪.৫০ টাকা।
সভায় আন্তর্জাতিক সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ১ কোটি ১০ লাখ (+৫%) লিটার সয়াবিন তেল ক্রয়ের আরও একটি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী ১ কোটি পরিবারের নিকট ভর্তুকি মূল্যে সয়াবিন তেল বিক্রির লক্ষ্যে ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল আন্তর্জাতিকভাবে ক্রয়ের জন্য সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে জাদ আল রাহিল ইন্টারন্যাশনাল এলএলসি, ওমান (লোকাল এজেন্ট:স্কাই ট্রেডিং)-এর কাছে দরপ্রস্তাব আহ্বান করা হলে তাতে সাড়া দেয় প্রতিষ্ঠানটি। দর প্রস্তাবটি পরীক্ষা শেষে রেসপনসিভ হয়। দরপ্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে পিইসি কর্তৃক নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে সুপারিশকৃত দরদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রতি লিটার ১.৩১ মার্কিন ডলার হিসেবে ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল আমদানিতে ব্যয় হবে ১৫১ কোটি ৭৩ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। টিসিবির গুদাম পর্যন্ত প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের খরচ পড়বে ১৫২.৮৬ টাকা।
উল্লেখ্য, স্থানীয় বাজারে খুচরা পর্যায়ে প্রতি লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ টাকা।
তিনি বলেন, স্থানীয়ভাবে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ৫৫ লাখ লিটার (+৫%) সয়াবিন তেল আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। টিসিবি কর্তৃক ৫৫ লাখ লিটার সয়াবিন তেল সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ক্রয়ের জন্য স্থানীয় ১টি প্রতিষ্ঠান সুন সিং এডিবল অয়েল লিমিটেড. ঢাকা-এর কাছে দরপ্রস্তাব চাওয়া হলে প্রতিষ্ঠানটি দরপ্রস্তাব দাখিল করে। টিইসি কর্তৃক দরপ্রস্তাবটি রেসপনসিভ হয়। দরপ্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে সুপারিশকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে ৫৫ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ক্রয়ে মোট ব্যয় হবে ১০১ কোটি ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রতি লিটার সয়াবিন তেল এর মূল্য ১৮৪.৫০ টাকা।
সভায় আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ৮ হাজার (+৫%) মেট্রিক টন মসুর ডাল ক্রয়ের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী ১ কোটি পরিবারের কাছে ভর্তুকি মূল্যে মসুর ডাল বিক্রির লক্ষ্যে ৮ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল ক্রয়ের জন্য আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হলে ১টি দরপ্রস্তাব জমা পড়ে। প্রস্তাবটি পরীক্ষা শেষে রেসপনসিভ হয়। দরপ্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে পিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত দরদাতা প্রতিষ্ঠান আরাবেল বাকলিয়াত হাবুবাত সানটিক এ.এস (স্থানীয় এজেন্ট:বিআইএনকিউ,ঢাকা) -এর নিকট থেকে প্রতি মেট্রিক টন ৯৫৩ মার্কিন ডলার হিসেবে ৮ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল ব্যয় হবে ৮১ কোটি ৫৭ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম ১০১.৫৭ টাকা।