হারিছের চলে যাওয়ার খবরে নিশ্চুপ কেন বিএনপি?
নাফিজা আক্তার
অবশেষে খোঁজ মিলেছে এক সময়ের বিএনপি-দলীয় প্রভাবশালী নেতা হারিছ চৌধুরীর। তবে দীর্ঘদিন ধরে দেশ ছাড়া হারিছ চৌধুরী এরইমধ্যে ছেড়ে গেছেন এই পৃথিবী। প্রায় সাড়ে তিন মাস আগে লন্ডনের একটি হাসপাতালে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান তিনি।
হারিছ চৌধুরীর চাচাতো ভাই সিলেট জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আশিক চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) আশিক চৌধুরীর ফেসবুকে দেয়া একটি স্ট্যাটাস ঘিরে হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর খবর চাউর হয়। হারিছের একটি ছবি যুক্ত করে ফেসবুকে তিনি লিখেন, ‘ভাই বড় ধন, রক্তের বাঁধন’। সেই স্ট্যাটাসের কমেন্ট বক্সে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা এই বিষয়ে নানা ধরনের মন্তব্য করেন।
এ বিষয়ে বুধবার (১২ জানুয়ারি) গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে আশিক উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘প্রায় সাড়ে তিন মাস আগে যুক্তরাজ্যে হারিছ চৌধুরী মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৬৮ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। যুক্তরাজ্যেই হারিছ চৌধুরীর দাফন সম্পন্ন হয়েছে।’
‘হারিছ চৌধুরী যে সময় মারা যান। সে সময় আমি যুক্তরাষ্ট্রেই অবস্থান করছিলাম। মুঠোফোনে জানতে পারি তিনি মারা গেছেন’ বলেও জানান আশিক উদ্দিন।
জানা গেছে, লন্ডনে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে মহামারিতে আক্রান্ত হন হারিছ চৌধুরী। পরে আবার তিনি সুস্থ হয়ে বাড়িতেও ফেরেন। করোনার ধকল কাটিয়ে উঠার পর হারিছ চৌধুরীর ফুসফুস মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফুসফুসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে তিনি মারা যান।
এর আগে হারিছ চৌধুরী ব্ল্যাড ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগে ভুগছিলেন। ২০০২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে তিনি একবার রক্তও পরিবর্তন করেছিলেন। স্বজনদের ভাস্য, মহামারিতে আক্রান্ত হওয়ার আগে দুই ডোজ টিকাও নিয়েছিলেন হারিছ চৌধুরী। আক্রান্ত হওয়ার পর তার রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়। পরে তার পুরো ফুসফুস কঠিন ভাবে সংক্রমিত হয়।
এদিকে, হারিছ চৌধুরীর বিষয়ে এখনো মুখে তালা দিয়ে রেখেছে বিএনপি। সাধারণত দলের কোনো নেতা মারা গেলে শোকের বিবৃতি বা বক্তব্য দেয়া হয়। কিন্তু হারিছের ক্ষেত্রে সেটা আসেনি। দলীয় সূত্রের দাবি, বহু বছর ধরে হারিছের অবস্থান সম্পর্কে বিএনপি নেতারা অন্ধকারে। এ কারণেই তার মৃত্যুর বিষয়টি চেপে গেছে দলটি।
বলা হয়ে থাকে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে তারেক রহমানের নেতৃত্বে ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট হওয়ার পেছনে বিরাট ভূমিকা রেখেছিলো। হাওয়া ভবন। সে সময় জোট সরকারের ক্ষমতায় আসার কেন্দ্রবিন্দুও ছিলো হাওয়া ভাবন। এখান থেকেই সব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন তারেক রহমান। আর এই কাজে তারেকের অন্যতম সহযোগী ছিলেন হারিছ চৌধুরী।
দেশে জরুরি অবস্থা জারির পর সস্ত্রীক গ্রামের বাড়ি সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার দর্পননগরে চলে যান হারিছ চৌধুরী। পরে রাতের আধাঁরে সেখান থেকে জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যান তিনি। এরপর থেকেই তিনি নিরুদ্দেশ ছিলেন।