সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজীর জানাজায় মানুষের ঢল
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজীর জানাজা জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে সকাল থেকে সর্বস্তরের সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতা ও পেশাজীবীদের ঢল নামে।বৃষ্টি থাকায় বুধবার দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ইমামতি করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
রাজধানীর একটি হাসপাতালে মঙ্গলবার রাতে মারা যান রুহুল আমিন গাজী। দীর্ঘদিন কিডনি জটিলতা, উচ্চ ডায়াবেটিক, ব্যাক পেইন, লবণ ঘাটতিসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন তিনি। মৃত্যুকালে স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে রেখে গেছেন। পরিবারের সদস্যরা জানান, প্রয়াত সাংবাদিকের কফিন চাঁদপুরে গ্রামের বাড়িতে দাফনের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে জানাজায় অংশ নেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম, বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, এজেডএম জাহিদ হোসেন, আবু নাসের মোহাম্মদ রহমতুল্লাহ, এম জাহাঙ্গীর আলম, খায়রুল কবির খোকন, আবদুস সালাম আজাদ, আজিজুল বারী হেলাল, মীর সরাফত আলী সপু, শামীমুর রহমান শামীম, জামায়াতে ইসলামীর মিয়া গোলাম পরওয়ার, মজিবুর রহমান, শামসুল ইসাম, আবদুল হালিম, নুরুল ইসলাম বুলবুল, সেলিম উদ্দিন, মোবারক হোসেইন, আবদুর রব, এবি পার্টির মজিবুর রহমান মঞ্জু, জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান।
সাংবাদিকদের মধ্যে জানাজায় অংশ নেন ইকবাল সোবহান চৌধুরী, আবুল কালাম আজাদ, মনজুরুল আহসান বুলবুল, শওকত মাহমুদ, সাইফুল আলম, এমএ আজিজ, আবদুল হাই শিকদার, আবদুল জলিল ভূঁইয়া, আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া, কামাল উদ্দিন সবুজ, আবদুল হাই সিদ্দিকী, এম আবদুল্লাহ, মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু, বাকের হোসাইন, নুরুউদ্দিন নুরু, ইলিয়াস খান, কেএম মহসিন, সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, রফিকুল ইসলাম আজাদ, ইলিয়াস হোসেন, কাজী রওনক হোসেন, শাহেদ চৌধুরী, সাহাবুদ্দিন চৌধুরী, মুরসালিন নোমানী, শামসুদ্দিন দিদার, রাশেদুল হক, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন দুই অংশের ওমর ফারুক, ওবায়দুর রহমান শাহিন, বাছির জামাল, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের শহিদুল ইসলাম, খুরশীদ আলম, সোহেল হায়দার চৌধুরী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ, সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়া, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মহিউদ্দিন আহমেদ।
জানাজার আগে রুহুল আমিন গাজীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তৃতা করেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম, বিএনপির এজেডএম জাহিদ হোসেন, জামায়াতে ইসলামীর মিয়া গোলাম পরওয়ার, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের বাছির জামাল, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের শহিদুল ইসলাম, খুরশীদ আলম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের হাসান হাফিজ, আইয়ুব ভূঁইয়া, রুহুল আমিন গাজীর ছেলে আফনান আবরার।
জানাজা-পূর্ব সমাবেশে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, রুহুল আমিন গাজী বাংলাদেশের অঙ্গনে একজন খ্যাতিমান সাংবাদিক ছিলেন। তিনি সবসময় দেশের পক্ষে কথা বলেছিলেন। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে গভীর শোক প্রকাশ করছি। তিনি গণতন্ত্রের জন্য সবসময় লড়াই করেছেন ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। তিনি কারা নির্যাতিত ছিলেন।
জমায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, রুহুল আমিন গাজী একজন সাহসী সাংবাদিক। তিনি দীর্ঘ সময় কারাবরণ করেছেন। আমরা তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। তিনি দেশের জন্য, জাতির জন্য কাজ করেছেন। দেশের মানুষের পক্ষে সবসময় কথা বলেছেন। জাতি সারা জীবন তাকে মনে রাখবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. জাহিদ বলেন, ভালো লোকের সংখ্যা দিনদিন কমে যাচ্ছে। মহান রাব্বুল আলামিন রুহুল আমিন গাজী ভাইকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুক। আমিন।
কবি আব্দুল হাই শিকদার বলেন, রুহুল আমিন গাজী অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন। আমরা তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
রুহুল আমিন গাজীর ছেলে আবরার ফাইয়াজ বলেন, তিনি সবসময় সত্য কথা বলার চেষ্টা করতেন। তিনি দেশের জন্য এবং দেশের মানুষের জন্য কাজ করবেন, সবসময় এ কথা বলতেন। আপনারা আমার বাবকে ক্ষমা করবেন।
সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃত্ব দেওয়া জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রুহুল আমি গাজী দৈনিক সংগ্রামে কর্মরত ছিলেন। সেখানে বিশেষ প্রতিনিধি, চিফ রিপোর্টারসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
চাঁদপুরের গোবিন্দিয়া গ্রামে ১৯৫৩ সালে জন্মগ্রহণকারী রুহুল আমিন গাজী শিক্ষাজীবনে স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর দৈনিক ইত্তেফাকে ১৯৭৪ সালে রিপোর্টার হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন।
তিনি বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। বিএনপি সমর্থিত পেশাজীবী সংগঠন সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি।
শেখ হাসিনার সরকারের সময় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এক মামলায় তিনি কারাবন্দি ছিলেন ১৮ মাসের বেশি সময়। কারাগারে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেও জামিন পাননি তিনি।