সংসার ভাঙলো ট্রুডো -সোফির
সাদাকালো নিউজ
জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে বিচ্ছেদের পরেও কানাডার প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী হিসেবে গ্রেগোয়ার ট্রুডো বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠানের পরামর্শক এবং সরকারি পদের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। তবে দেশের সরকারপ্রধানের স্ত্রী হিসেবে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া বা পদবী/উপাধি ব্যবহার করতে পারবেন না। বুধবার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং তার স্ত্রী সোফি গ্রেগোয়ার ট্রুডো ঘোষণা করেন তারা ১৮ বছরের সংসারের ইতি টানছেন।
গভর্নমেন্ট অব কানাডার স্টাইল অফ অ্যাড্রেস ওয়েবপেজ অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী হিসেবে গ্রেগোয়ার ট্রুডো বিভিন্ন দাতব্য কাজের জন্য তার অবস্থান এবং প্রভাব ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে। তিনি নারীর অধিকার, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, খাওয়ার অনিয়ম, শারীরিক কার্যকলাপ ও শরীরচর্চাসহ আরও অনেক ইস্যুতে বক্তব্য রাখতেন। লিবারেল পার্টি বায়ো পেজ অনুসারে, তিনি প্ল্যান কানাডার `কারণ আমি একজন মেয়ে/ বিকজ আই এম এ গার্ল` উদ্যোগ এবং ফিটস্পিরিট ফাউন্ডেশনের একজন সরকারি মুখপাত্র।
গ্রেগোয়ার ট্রুডো আধা-সরকারি ব্যবস্থাপনায় বিদেশে কানাডাকে প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধানদের স্ত্রীদের সঙ্গে একের পর এক বৈঠক করেন এবং তার স্বামীর সঙ্গে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সফরে গেছেন। তবে রাশিয়া ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তার ওপর।
গ্রেগোয়ার ট্রুডোর বিবাহবিচ্ছেদ হওয়ার পরেও সরকারি পদের দায়িত্ব থেকে তাকে সরিয়ে দেয়া হবে না।
কানাডার গভর্নর জেনারেলের স্পাউসকে হিজ/হার এক্সিলেন্সি বা মহামান্য হিসেবে সম্বোধন করা হয়। তবে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রীর কোন উপাধি নেই। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের স্ত্রীকে ফার্স্ট লেডি বা স্বামীকে ফার্স্ট জেন্টেলম্যান উপাধি রয়েছে। কানাডার প্রধানমন্ত্রীর পত্নীর কোন স্বীকৃত পদবী বা পদ বা উপাধি নেই।
জাস্টিন ট্রুডো (৫১) ও সোফি গ্রেগোয়ারের (৪৮) ১৮ বছরের দাম্পত্য জীবনের পর তাদের বিচ্ছেদের অপ্রত্যাশিত ঘোষণাটি অনেককেই বিস্মিত করেছে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো গতকাল বুধবার তার ইনস্টাগ্রামে এ ঘোষণা দেন। সোফিও তার ইনস্টাগ্রামে একই ঘোষণা দিয়েছেন। ইনস্টাগ্রাম পোস্টে এই দম্পতি জানিয়েছেন, তারা ‘একটি ঘনিষ্ঠ পরিবারের মতো থাকবেন, যার ভিত্তি হবে ভালোবাসা ও সম্মান।’ বিচ্ছেদের ঘোষণার পর তারা নতুন করে আলোচনায়। এ আলোচনায় ট্রুডো-সোফির পরিচয়, প্রেম, বিয়ের প্রসঙ্গও ঘুরেফিরে আসছে।
ট্রুডোর অফিস থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, এই দম্পতি বিচ্ছেদ চুক্তিতে স্বাক্ষর করলেও তাদের এখনো জনসমক্ষে একসাথে দেখা যাবে। বিচ্ছেদের জন্য যেসব আইনগত এবং নৈতিক পদক্ষেপ প্রয়োজন, সেগুলো নিশ্চিত করতে তারা কাজ করছেন। এবং সেগুলো চলমান রেখে তারা এগিয়ে যাবেন। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আগামী সপ্তাহে তারা পরিবার হিসেবে ছুটি কাটাতে যাবেন।
২০১৫ সালে ট্রুডো যখন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন তখন এই দম্পতি ভোগ ম্যাগাজিনে একসাথে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। সে সাক্ষাৎকারে ট্রুডো বলেছিলেন, সোফির সাথে তিনি যখন প্রথম দেখা করেছিলেন তখন বলেছিলেন, ‘আমার বয়স ৩১ বছর, এবং আমি ৩১ বছর যাবত তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।’
‘আমরা রৌদ্রজ্জ্বল দিনের ভেতর দিয়ে যেমন গিয়েছি, ঝড়ের ভেতর দিয়ে গিয়েছি এবং দুটোর মাঝখান দিয়েও গিয়েছি।’ ইন্সটাগ্রামের সেই পোস্টে লিখেছিলেন ট্রুডো।
ট্রুডো ২০১৪ সালে প্রকাশিত তার আত্মজীবনীতে বৈবাহিক জীবনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে লিখেছেন। ‘আমাদের বিয়ে পুরোপুরি ঠিক ছিল না। আমরা নানা রকম উত্থান-পতনের ভেতর দিয়ে গেছি। তারপরেও সোফি আমরা সবচেয়ে ভালো বন্ধু হিসেবে আছে, আমরা পার্টনার এবং আমার ভালোবাসা। আঘাত আসলেও আমরা একজন আরেকজনের প্রতি সৎ থেকেছি।’ আত্মজীবনীতে লিখেছেন ট্রুডো। ২০০৩ সালে দুজন প্রথম দেখা করা শুরু করেন। সোফি তখন ছিলেন একজন টিভি প্রেজেন্টার। তিনি তখন মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে চ্যারিটিও করতেন।
জাস্টিন ট্রুডো হচ্ছেন ক্যানাডার দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী যিনি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় বিবাহ বিচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছেন। ক্ষমতায় থাকাকালীন বিবাহ বিচ্ছেদের ঘোষণা দেয়া প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন জাস্টিন ট্রুডোর বাবা পিয়েরে এলিয়ট ট্রুডো। ছয় বছর একসাথে থাকার পর ১৯৯৯ সালে পিয়েরে ট্রুডো এবং মার্গারিট ট্রুডো বিবাহ বিচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছিলেন।