লক্ষ্মীপুরে আবদুর রবকে সহযোগিতার নির্দেশ বিএনপির, তৃণমূলে তীব্র ক্ষোভ
বিএনপির কেন্দ্র থেকে পাঠানো একটি চিঠি নিয়ে লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর) আসনে শুরু হয়েছে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। এই চিঠিকে ঘিরে আসনটির অন্তর্গত দুটি উপজেলায় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ।
আলোচিত ওই চিঠিটির মাধ্যমে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) নেতা-কর্মীরা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আ স ম আবদুর রব আবারও ধানের শীষের মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন বলে ফেসবুকে প্রচার চালাচ্ছেন। এ নিয়ে শুরু হয়েছে নানারকম তর্ক-বিতর্ক।
ওই চিঠিতে বিএনপির পক্ষ থেকে দলটির নেতা-কর্মীদের জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রবকে লক্ষ্মীপুর-৪ সংসদীয় আসনে জনসংযোগ ও সাংগঠনিক কাজে সহযোগিতা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গত ২২ অক্টোবর বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব বরাবর লেখা বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি আ স ম আবদুর রব সক্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তার সংসদীয় এলাকায় জনসংযোগ ও তার দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সংসদীয় এলাকার থানা, উপজেলা বা পৌরসভায় বিএনপি এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিষয়টি জানানো হলো।
চিঠিটি ফেসবুকে আসার পর আ স ম আবদুর রবের ধানের শীষের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে মাঠপর্যায়ে দলটির নেতা-কর্মীদের মধ্যে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হয়েছে। রামগতি পৌর বিএনপির আহ্বায়ক সাহেদ আলী গণমাধ্যমকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দলকে সুসংগঠিত করে রেখেছেন লক্ষ্মীপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম আশরাফ উদ্দিন নিজান। তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তার নিবিড় সম্পর্ক। দলের নেতা-কর্মীদের ওপর মামলার ঘটনায় তিনিই পাশে দাঁড়াচ্ছেন। হঠাৎ কেন্দ্রের এ চিঠি দেখে নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ।
স্থানীয় নেতা-কর্মীদের ভাষ্য, ২০১৮ সালের নির্বাচনে এ বি এম আশরাফ উদ্দিনকে বাদ দিয়ে এ আসনে বিএনপি দলীয় জোট থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয় আ স ম আবদুর রবকে। ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে আ স ম আবদুর রব নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মেজর (অব.) আবদুল মান্নানের কাছে হেরে যান। এক সময়ের জাসদ বর্তমানে অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। ভোটব্যাংক শূন্যের কোটায়। এ অবস্থায় আ স ম আবদুর রবকে জিততে হলে বিএনপির মতো বড় দল ছাড়া কোনো উপায় নেই।
খারাপ সময়ে যারা দলের হাল ধরে ছিলেন, তারাই দল থেকে মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য হবেন দাবি করে কমলনগর উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব নুরুল হুদা চৌধুরী। তিনি বলেন, চিঠিটি আমাদের ক্ষুব্ধ ও হতাশ করেছে। আ স ম আবদুর রব ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে জামানত হারিয়েছেন। তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মতমতকে উপেক্ষা করে, দল হঠকারী কোনো সিদ্ধান্ত নিলে গণপদত্যাগ করবেন বলে জানিয়েছেন নেতা-কর্মীরা।
এ বিষয়ে জানতে আ স ম আবদুর রবের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ বেলায়েত হোসেন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, স্বৈরাচার সরকার পতন আন্দোলনে, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সক্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী দল জেএসডি। এ দলের সভাপতি জাতীয় নেতা অ স ম আবদুর রব। দীর্ঘ যুগপৎ আন্দোলনে, রাজপথে, প্রতিবাদে, বিক্ষোভে, মিছিলে, অবরোধে, হরতালে ও সংগ্রামে রবের সক্রিয় ভূমিকা ছিল। রাজনীতি ও রাজনৈতিক শিষ্টাচার হিসেবে এই চিঠি দিয়েছে বিএনপি।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সহশিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক ও লক্ষ্মীপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম আশরাফ উদ্দিন বলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে সহযোগিতার জন্য কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এটি নির্বাচনবিষয়ক কোনো চিঠি নয়। চিঠিতে নির্বাচনসংক্রান্ত কোনো শব্দ নেই। এখানে বিভ্রান্তি তৈরি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
তিনি আরও বলেন, রামগতি ও কমলনগরের ১০ হাজার নেতাকর্মী গায়েবি মামলার আসামি। তাদের সঙ্গে নিয়ে আমি রাজপথে আছি ও থাকব। আমার বিশ্বাস, দল এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না, যাতে হাজার হাজার নেতাকর্মী আহত হন।