রাখাল থেকে শাহী মেহমান!
সাদাকালো নিউজ
৮২ বছর বয়সী আবদুল কাদির বখশ। জীবনের শেষ সময়ে এসেও পিছু ছাড়েনি অভাব-অনটন। তাই দু’বেলা খাবার জোগাতে ছাগল চরানোর কাজ করেন তিনি। শত দুঃখ-কষ্টের মধ্যেও আল্লাহর ভালোবাসায় ভরপুর ছিলো তার হৃদয়। পবিত্র কাবাঘর ও রওজা শরিফ দেখার স্বপ্ন দেখতেন। দীর্ঘ ১৫ বছর পর সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন আবদুল কাদির।
গেল রমজান মাসে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। সেখানে এক বৃদ্ধকে মসজিদে নববীতে একাকী ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। বৃদ্ধের হাঁটার ধরণ দেখে মনে হয়, তিনি হয়তো কাউকে হারিয়েছেন নয়তো কিছু খুঁজে ফিরছেন। বৃদ্ধের সাদাসিধে চলাফেরা এবং সরল ব্যবহার নজর কাড়ে নেটাগরিকদের।
নেটপাড়ায় ছড়িয়ে পরা সেই ভিডিওটি কয়েক মিলিয়ন ভিউ হয়। এমনকি সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের উপদেষ্টা তুর্কি আল-শেখ ওই বৃদ্ধের খোঁজ চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে একটি টুইটও করেন।
পরে জানা যায়, পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে বাড়ি আবদুল কাদিরের। সন্তান রয়েছে পাঁচ জন। ডিম ও লাকড়ি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। বসবাসের তেমন কোন ঘর নেই তার। পুরো পরিবার নিয়ে থাকেন একটি ঝুপড়িতে। তবে মনে শুধু একটি স্বপ্ন লালন করতেন। আর সেটি হলো ওমরাহ পালন করা।
১৫ বছর ধরে মদিনায় যাওয়ার ইচ্ছা ছিলো আবদুল কাদিরের। তবে এর জন্য তার কাছে কোনো টাকা পয়সা ছিলো না। প্রতিনিয়ত সাহায্যের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন তিনি। একটা সময় অন্য কাজের পাশাপাশি ছাগল চরানোর সিদ্ধান্ত নেন। স্বপ্ন পূরণে যতটুকু সম্ভব সঞ্চয়ও শুরু করে দেন।
সঞ্চয়ের পরিমাণ সামান্য হলেও শত কষ্টের মধ্যেও এই ধারা অব্যাহত রাখেন আবদুল কাদির। একটা সময় পাসপোর্ট করে ওমরাহ ভিসার জন্য আবেদন করেন। অতঃপর দীর্ঘ ১৫ বছরের জমানো অর্থে পবিত্র ওমরাহ পালনের স্বপ্ন পূরণ হয় তার। মক্কায় আবদুল কাদিরের সঙ্গে কোনো গাইডের ব্যবস্থা ছিলো না। বেলুচি ছাড়া অন্য কোনোও দেশের ভাষাও জানতেন না তিনি।
এদিকে ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে কিছুই জানতেন না আবদুল কাদির। পবিত্র ওমরাহ পালন শেষে ২২ এপ্রিল নিজ গ্রামে ফিরে আসেন তিনি। গাছের পাতা দিয়ে তৈরি ঝুপড়ি ঘরে তাকে অভিনন্দন জানান স্থানীয়রা। আবদুল কাদির বলেন, প্রথমবারের মতো মক্কা দেখে আমার খুশির সীমা ছিলো না। এখন আর কোনো উদ্বেগ বা অভাব নেই, অন্তর সন্তুষ্ট।
মহানবী (সা.)-এর রওজা শরিফে দোয়া করতে গিয়েই কেউ একজন তার ভিডিও করে শেয়ার করেন। যা পরে ভাইরাল হয়ে যায়। মদিনা থেকে মক্কায় গিয়ে ওমরাহ পালনের কার্যক্রম শেষ করেন তিনি। এবার হজ পালনের জন্য অর্থ সঞ্চয়ের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন আবদুল কাদির বখশ। কারণ হজ করাই এখন তার জীবনের বড় লক্ষ্য।