যে কারণে এতো ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছে তুরস্ক ও সিরিয়ায়
সাদাকালো নিউজ
তুরস্ক-সিরিয়ায় আঘাত হানা ভূমিকম্পটির রিখটার স্কেল মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮। এই মাত্রার কোনো ভূমিকম্পকে সরকারিভাবে গুরুতর হিসেবেই ধরে নেয়া হয়। ভূমিকম্পের ভয়াবহতার ক্ষেত্রে ফল্ট লাইনের বড় ভূমিকার কথা বলা হচ্ছে। গেল সোমবার আঘাত হানা এই ভূমিকম্প কেন এতো ভয়াবহ তার বেশকিছু কারণ জানিয়েছে বিশেষজ্ঞরা।
কোনো স্থানে ভূকম্পনের জন্য ফল্ট লাইনের বড় ভূমিকা রয়েছে। ভূত্বকের উপরিভাগের বিশাল খণ্ডকে টেকটোনিক ফল্ট বলা হয়। আর দুটি টেকটোনিক ফল্টের মধ্যে থাকা ফাটলকে ফল্টলাইন বলা হয়। ভূমিকম্প সাধারণত এই ফল্টলাইনের আশেপাশে হয়ে থাকে।
৬ ফেব্রুয়ারি হওয়া ভূমিকম্পে তুরস্কের প্রায় ১০০ কিলোমিটার ফল্টলাইন ভেঙে গেছে। এ কারণেই সৃষ্ট ভূমিকম্পটি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে বলে জানিয়েছেন বিশেজ্ঞরা। আর এই ফল্টের কাছাকাছি থাকা ভবনগুলো মাটির সাথে মিশে গেছে।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ইনস্টিটিউট ফর রিস্ক অ্যান্ড ডিজাস্টার রিডাকশনের প্রধান অধ্যাপক জোয়ানা ফউর ওয়াকার বলেন, ‘এ রকম ভয়াবহ ভূমিকম্প গত ১০ বছরে দুটি এবং তার আগের ১০ বছরে চারটি হয়েছে।’
তবে শুধু কম্পনের কারণেই এই ক্ষয়ক্ষতি হয় না। দেশটিতে থাকা ভবনগুলো কতটা দৃঢ়, সে ব্যাপারটিও প্রভাব ফেলেছে। তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পটি আঘাত হেনেছে ভোরে, তখন প্রায় সব মানুষই বাসায় এবং ঘুমে। এ কারণে ভবনধসে অসংখ্য মানুষ দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা জানিয়েছে, গাজিয়ানতেপ এলাকাটির বেশির ভাগ ভবন শুধু ইট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে, যা খুবি ভঙ্গুর। ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি বেড়ে যাওয়ার এটি ছিলো অন্যতম কারণ।
ইউনিভার্সিটি অব পোর্টসমাউথের আগ্নেয়গিরি এবং ঝুঁকি যোগাযোগ বিভাগের কারমেন সোলানা বলেন, দক্ষিণ তুরস্ক এবং বিশেষ করে সিরিয়ায় অবকাঠামোগুলো বেশির ভাগি ধসে গেছে। এ কারণে আটকে পড়াদের টিকে থাকা অনেকটাই নির্ভর করছে তাঁদের প্রতিক্রিয়া ও উদ্ধারকাজের ওপর।
যে এলাকায় ভূমিকম্পের উৎপত্তি, সেখানে ২০০ বছরেরও বেশি সময় আগে থেকে ভয়াবহ কোনো ভূমিকম্প হয়নি। কোনো সতর্ক সংকেতও ছিল না। এ কারণে এই অঞ্চলে ভূমিকম্প মোকাবিলা ও উদ্ধার অভিযানে ঘাটতি থেকে যাবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
শক্তিশালী ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় আহত হয়েছেন বহু মানুষ। অনেকে এখনো নিখোঁজ। এসব মানুষের বেশির ভাগি ভূমিকম্পে ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে উদ্ধার অভিযান চলছে।