যমুনার জলে ভাসছে তাজমহল, ৪৫ বছরে এই প্রথম
সাদাকালো নিউজ
যমুনার উপচে পড়া পানি দিল্লির লাল কেল্লার দেয়াল ছোঁয়ার এক সপ্তাহ পর আগ্রার অমর স্থাপত্য তাজমহলের দেয়াল পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। ৪৫ বছরের মধ্যে এই প্রথম তাজমহলের দেয়ালের পাশে থই থই করছে যুমনার জল।
এতে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ, বন্যার পানিতে সপ্তদশ শতাব্দীতে নির্মিত শ্বেত পাথরের স্মৃতিসৌধটি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত কয়েকদিন ধরে উত্তর প্রদেশসহ ভারতের উত্তরাঞ্চলে অস্বাভাবিক ভারি বৃষ্টি হওয়ার পর যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১ জুন বর্ষাকাল শুরু হওয়ার পর থেকে উত্তর প্রদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ১০৮ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে।
এর আগে ১৯৭৮ সালে যমুনার পানি ছুঁয়েছিল তাজমহলের দেয়াল। ওই সময় দিল্লিতে যমুনার পানির স্তর বেড়ে ২০৭ দশমিক ৪৯ মিটার পর্যন্ত উঠেছিল, কিন্তু এবার ওই রেকর্ড ভেঙে পানি উঠেছিল ২০৮ দশমিক ৬৬ মিটার পর্যন্ত।
ভারতের কেন্দ্রীয় পানি কমিশনের (সিডব্লিউসি) তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার রাতে তাজমহলের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া যমুনার পানি বেড়ে ১৫২ মিটার উচ্চতায় উঠে সম্ভাব্য বিপদের সতর্কসীমা (১৫১ দশমিক ৪ মিটার) পার হয়ে যায়। এখানে নদীর পানির স্তরের ১৫২ দশমিক ৪ মিটার উচ্চতাকে বিপজ্জনক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
১৯৭৮ সালে এখানে নদীটির পানি ১৫৪ দশমিক ৭৬ মিটার পর্যন্ত উঠেছিল, সিডব্লিউসি তথ্যে এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, মঙ্গলবার তাজমহল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে তাজমহলের চুনাপাথরে তৈরি লাল দেয়ালের পাশে যমুনার ঘোলা জল, তার মধ্যে ভাসমান আবর্জনার টুকরা। তবে তাজমহরের মূল চত্বরে পানি ঢুকেনি।
নদীর বাড়তে থাকা পানি এখন পর্যন্ত তাজমহলের জন্য ‘গুরুতর কোনো উদ্বেগ’ হয়ে দেখা দেয়নি বলে জানিয়েছে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া (এএসআই) ।
এএসআইয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রত্নতাত্ত্বিক রাজ কুমার প্যাটেল বলেছেন, “যদি আরও বৃষ্টি হয় অথবা পানি যদি এই উচ্চতায় আরও কয়েকদিন থাকে, তাহলে আমাদের ফের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে হবে।”
তিনি জানান, অবশ্য তাজমহলের আশপাশে যমুনা নদীর তীরবর্তী অন্য আরও কিছু স্মৃতিসৌধ ও বাগান ‘ডুবে গেছে’ এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এগুলোর মধ্যে ‘শিশু তাজমহল’ নামে পরিচিত ১৬০০ শতকের ইতিমাদ-উদ-দৌল্লার কবর এবং মেহতাব বাগ উল্লেখযোগ্য। এসব স্থাপনার মূল কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং সংলগ্ন বাগান পানিতে পুরোপুরি ডুবে গিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায়ও সারা বিশ্ব থেকে আসা পর্যটকরা তাজমহলের মূল গেইট দিয়ে প্রবেশ করছিলেন। যমুনার পানি বাড়তে থাকলেও পর্যটকদের উৎসাহে কোনো ভাটা পড়েনি।
সুইজারল্যান্ড থেকে আসা শিক্ষার্থী ম্যাথু ক্রেটন (২০) বলেন, “পানি এত বেড়ে গেছে দেখে অবাক লাগছে, কিন্তু তাজমহল দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে।”
তবে স্থানীয়রা উদ্বিগ্ন হয়ে আছেন। তাদের শঙ্কা, নদীর পানি আরও বেড়ে তাদের ঘরবাড়ি ডুবে যেতে পারে।
তাজমহলের কাছে বসবাস করা সুন্দর দুবে (৪৯) বলেন, “আমরা আমাদের সবকিছু উপরে তুলে রেখেছি, যেন সেগুলো ভেসে না যায়। আমরা সব সময় সতর্ক থাকছি।”