মানবিক পুলিশ খ্যাত সেই কনস্টেবল চাকরিচ্যুত!
সাদাকালো নিউজ
পেশায় পুলিশ কনস্টেবল। কাজের অবসর বলতে দিনের কয়েক ঘণ্টা। সামান্য এই অবসর সময় আর হাত খরচ থেকে বেচে যাওয়া টাকা দিয়ে মানুষ সেবার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন চট্টগ্রামের পুলিশ কনস্টেবল শওকত হোসেন। গত ১০ বছর ধরে তার নেতৃত্বে ৮ সদস্যের একটি দল নগরীর পরিবারহীন অসুস্থ রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাদের উৎসাহ দিতে গঠন করা হয়েছিলো মানবিক পুলিশ নামে একটি শাখাও। সেই শওকতকেই এবার চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
গেল ১৬ই এপ্রিল তার চাকরিচ্যুতির আদেশে স্বাক্ষর করেন সিএমপির বন্দর বিভাগের উপকমিশনার শাকিলা সোলতানা। আদেশের কপি পাঠানো হয় সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়ের দপ্তরে।
চাকরিচ্যুতির আদেশে বলা হয়েছে, ৭১ দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন শওকত। যা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়া শারীরিক ও মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত তিনি। এমনকি পারিবারিক ও ব্যক্তিগত সমস্যাও রয়েছে তার। বেওয়ারিশ মানুষকে নিয়ে মানবিক কার্যক্রমে ব্যস্ত থাকায় পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি করা তার পক্ষে সম্ভব নয়, এমন বক্তব্য লিখিতভাবে জানানোর পর তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।
শওকত নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার বাসিন্দা। ২০০৫ সালে পুলিশ কনস্টেবল পদে যোগ দেন। ২০০৯ সালে ঢাকা থেকে বদলি হয়ে রাঙ্গমাটিতে যান। সেখান থেকে আসেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে। তিনি চাকরির পাশাপাশি তিন বছরের ডিপ্লোমা এবং দুই বছরের প্যারামেডিকেল কোর্স সম্পন্ন করেন।
শওকতের চাকরি যাওয়ার মধ্য দিয়ে মূলত বন্ধ হয়ে গেল সিএমপির মানবিক পুলিশ ইউনিট। ২০১৯ সালে তৎকালীন সিএমপি কমিশনার মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমানের আদেশে মানবিক পুলিশ ইউনিটের যাত্রা শুরু হয়। ওই সময় কমিশনার তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ৫০ হাজার টাকাও দিয়েছিলেন।
সেই সময়টায় সিএমপির এই উদ্যোগ ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। অনেক পুলিশ সদস্য নিজেদের নামের আগে মানবিক শব্দটি ব্যবহার শুরু করেন। তবে ২০২১ সাল থেকে বিপদের মুখোমুখি হয় মানবিক পুলিশ ইউনিট। এটি মূলত কনস্টেবল শওকত হোসেনকে ঘিরেই আবর্তিত ছিল।
২০২১ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ডবলমুরিং থানা এলাকায় একটি মাহফিলে অতিথি হয়ে যান শওকত। সেখানে বিতর্কিত বক্তব্য দেন। সেই বক্তব্যের জেরে পরবর্তী সময়ে তাকে দামপাড়া বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতাল থেকে বদলি করে কর্ণফুলী থানায় পাঠানো হয়। এরপর থেকেই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে মানবিক পুলিশ ইউনিটের কার্যক্রম।
কর্ণফুলী থানায় বদলির পর থেকেই মানবিক কার্যক্রমে বাধার মুখে পড়েন শওকত। ওই সময়ই সিএমপির মানবিক পুলিশ ইউনিট বিলুপ্ত হয়ে যায়। কিন্তু শওকতের মননে রয়ে যায় রোগীদের সেবা দেয়ার বিষয়টি। সময় পেলেই ছুটে যেতেন বেওয়ারিশ রোগীদের সেবা দিতে। তবে মানবিক কার্যক্রম বন্ধ হওয়ায় মানসিকভাবে আঘাত পান তিনি। ঘন ঘন অসুস্থ হতে থাকেন।
চাকরিচ্যুতির আদেশের কপিতে অভিযোগ বিষয়ে লেখা হয়েছে, ২০২১ সালের ২৬ অক্টোবর অসুস্থ হয়ে পড়েন শওকত। পরে তাকে দামপাড়া বিভাগীয় হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। ওই বছরের ৮ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি হাসপাতাল ভর্তি ছিলেন। এরপর চিকিৎসক এক সপ্তাহের পূর্ণ বিশ্রামের পরামর্শ দিয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেন। কিন্তু ওই বছরের ৯ নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত ৭১ দিন তিনি থানায় অনুপস্থিত ছিলেন। এরপর তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মোকদ্দমা রজু হয়।
চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে লিখিত জবাব দেন শওকত হোসেন। সেখানে তিনি ‘মানবিক কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত থাকার কারণে পুলিশ কনস্টেবলস পদে চাকরি করা সম্ভব নয়’ মর্মে বক্তব্য দেন। শওকতের এমন বক্তব্যের পর তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।
এদিকে চাকরি হারানোর পর কারও সাথেই কথা বলছেন না শওকত হোসেন। তার মোবাইলে কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। শওকতের নীরবতার বিষয়ে তার সহকর্মীরাও মুখ খুলছেন না।