ভিপিএন ব্যবহারে সাইবার ঝুঁকি কি আসলেই বাড়ছে
ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্কের (ভিপিএন) ব্যবহারে সাইবার ঝুঁকি বাড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন ডাক,টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। একইসঙ্গে ব্যক্তি পর্যায়ে কোনো বড় ক্ষতির আশঙ্কা না থাকলেও ভিপিএন ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাবধানতার কথা জানালেন বিশেষজ্ঞরাও।ভিপিএন ইন্টারনেটের এমন ভার্চুয়াল বা কাল্পনিক প্রাইভেট নেটওয়ার্ক যার মাধ্যমে নিরাপদে তথ্য আদান-প্রদান করা হয়।
সহজভাবে বললে, এটি একটা কাল্পনিক ‘টানেল’ বা সুড়ঙ্গের মতো। অনেকেই গোপনীয়তা ফাঁস হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি এড়াতে ইন্টারনেটের বিভিন্ন ভিপিএন অ্যাপ ব্যবহার করে নিজের ব্যক্তিগত বা প্রাইভেট নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হয়।তবে ভিপিএন ব্যবহারে সতর্ক হতে বলেছেন খোদ তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী। গত ১০ দিনে সরকারের ৮টি ওয়েবসাইটে ৫০ হাজারের বেশি সাইবার হামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, এছাড়া ৭০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও সাইবার হামলার শিকার হয়েছে। তবে কোনো তথ্য বেহাত হয়নি।প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়মিত সিকিউরিটি অডিট করার পরামর্শ দিয়ে পলক আরও বলেন, ভিপিএন ব্যবহার সাইবার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। লাইসেন্সবিহীন পাইরেটেড সফওয়্যার ব্যবহার না করতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে। কোনো প্রতিষ্ঠান সাইবার হামলার শিকার হলে তা আইসিটি বিভাগকে জানাতে হবে।
এ বিষয়ে সময় সংবাদের সঙ্গে কথা বলেছেন দেশের আইসিটি খাতের বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ভিপিএন ব্যবহারের ক্ষেত্রে হতে হবে সচেতন। বেশ কিছু ফ্রি ভিপিএন ব্যবহারের মাধ্যমে তথ্য বেহাত হওয়ার আশঙ্কা থাকে- এটা সত্য। তবে নির্ভরযোগ্য ভিপিএন ব্যবহার, বিশেষ করে ‘পেইড ভিপিএন’-এর মাধ্যমে তথ্য চুরির কোনো আশঙ্কা থাকে না।
এ বিষয়ে তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন সেলিম বলেন, সাধারণত তিন ধরনের ভিপিএন দেখা যায়- ফ্রি,পেইড এবং প্রাইভেট। ফ্রি ভিপিএন ব্যবহারের মাধ্যমে যে কোনো তথ্য চুরির আশঙ্কা থাকলেও পেইড ভিপিএন পুরোপুরি নিরাপদ। এছাড়া যে কোনো ভিপিএন দিয়েই অনলাইন কেনাকাটায় ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহারেও হতে হবে সচেতন।
তিনি আরও বলেন, ফ্রি ভিপিএন ব্যবহারে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সাইবার ঝুঁকি বাড়ে ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে। প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে সাধারণত এ ঝুঁকি নেই, যদি না- কেউ ব্যক্তিগতভাবে কোনো প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রোফাইলে ভিপিএন ব্যবহার করে প্রবেশ করে। তাই ব্যক্তিগতভাবে কেউ নিজস্ব গোপনীয়তার জন্য ভিপিএন ব্যবহার করলে, রাষ্ট্রীয় ক্ষতির কোনো আশঙ্কা থাকার কথা নয়।
তবে তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রীর মঙ্গলবারের (৩০ জুলাই) বক্তব্যে সাইবার হামলার বিষয়ও তুলে ধরা হয়। সে বিষয়ে সালাউদ্দিন সেলিম বলেন, সাইবার ঝুঁকি সবসময়ই থাকে। তাই নিজেদের সাইবার নিরাপত্তা আরও জোরদার করার দিকে নজর দিতে হবে। এছাড়া দেশের ই-কমার্সসহ সব ধরনের অনলাইন ব্যবসার উদ্যোক্তাদের পুঁজি রক্ষার্থে স্বাভাবিক ইন্টারনেটেরও কোনো বিকল্প দেখছেন না এই বিশেষজ্ঞ।
সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সলিউশন বিশেষজ্ঞ মো. মারুফুর রহমান সময় সংবাদকে বলেন, অনেকেই ভিপিএনের মাধ্যমে নিজেদের গোপনীয়তা বজায় রাখতে পছন্দ করেন। এ ক্ষেত্রে ভিপিএন ব্যবহারের সুবিধা-অসুবিধা দুটোই আছে। নির্ভরযোগ্য, বিশেষ করে পেইড ভিপিএন ব্যবহারের তথ্য চুরির ঝুঁকি নেই বললেই চলে।
এক্ষেত্রে থার্ড পার্টি হয়ে তথ্য সরবরাহ করা হয়, তাই অবশ্যই ভিপিএন ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতনতা বজায় রাখাই ভালো। ইন্টারনেট থেকে যত্রতত্র ভিপিএন ব্যবহার না করে, নির্ভরযোগ্য মাধ্যম ও জনপ্রিয়তার দিক বিবেচনা করে ডাউনলোড ও ব্যবহার করা উচিত।