ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার হার বাড়ছে
সাদাকালো নিউজ
এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংক থেকে সরকারের নেওয়া ঋণ বেড়ছে এক লাখ ৩৯৪ কোটি টাকা। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি শেষে ব্যাংক খাত থেকে সরকারের নেওয়া ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ১৫ হাজার ৭০৪ কোটি টাকা। গত বছর একই সময়ে যার পরিমাণ ছিলো ২ লাখ ১৫ হাজার ৩১০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকে সরকারের ঋণ বেড়েছে এক লাখ ৩৯৪ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারিতে ব্যাংক খাতে সরকারের ঋণ বেড়েছিলো ৩ লাখ ৪ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ১০ হাজার ৯২৯ কোটি টাকা। এর আগে চলতি অর্থবছরের আগস্ট শেষে ব্যাংক থেকে সরকারের নেওয়া ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছিলো ২ লাখ ৬৭ হাজার ৫২ কোটি টাকা। এর পরের মাসে ঋণ স্থিতি দাঁড়ায় ২ লাখ ৮২ হাজার ৭১২ কোটি টাকায়। নভেম্বর মাসে ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছিলো ২ লাখ ৯৯ হাজার ১১৯ কোটি টাকা। বছরের শেষ মাস ডিসেম্বর শেষে যার পরিমাণ ছিলো ৩ লাখ ২ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা। হিসাব অনুযায়ী প্রতি মাসেই ব্যাংক খাতে সরকারের ঋণ বাড়ছে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারি শেষে সরকার ব্যাংক খাত থেকে নেওয়া মোট ঋণের মধ্যে ১ লাখ ৫ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। এছাড়া দেশের তফসিলি ব্যাংকগুলো থেকে নিয়েছে ২ লাখ ১০ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি পূরণে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার। আগের অর্থবছরে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ছিলো ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। অর্থাৎ এবার প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা বেশি ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য সরকারের।
এদিকে, চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকেও ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে নিত্যপণ্যের বাড়তি দাম এমনিতেই মানুষের সঞ্চয়ের ক্ষমতা কমেছে। ব্যাংকের আমানত ভেঙে পরিবারের খরচ মেটাতে হচ্ছে অনেককে। সঞ্চয়পত্র কেনাবেচার তথ্য থেকেও দেখা যাচ্ছে নতুন করে কেনার তুলনায় ভাঙানোর পরিমাণও কম নয়। অন্যদিকে সরবরাহ সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোর কাছে বিপুল পরিমাণ ডলার বিক্রি করায় বাজার থেকে টাকা গেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে, যা তৈরি করেছে তারল্য সংকট। কলমানির সাম্প্রতিক তথ্যও তাই বলছে। চাহিদা মেটাতে এক ব্যাংক আরেক ব্যাংকের কাছ থেকে উচ্চ সুদে টাকা ধার করছে।
এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, চলতি অর্থবছরে ডলার বিক্রির কারণে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে গেছে। এজন্য ব্যাংকগুলো প্রতিনিয়তই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধারের প্রবণতা বাড়িয়েছে। অপর দিকে সরকার ট্রেজারি বন্ড ও বিলের বিপরীতে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ না নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডিভল্বমেন্টের মাধ্যমে ঋণ নিচ্ছে। এতে মানি ক্রিয়েশন বাড়ছে, যা ভবিষ্যতে মূল্যস্ফীতি বাড়াতে ভূমিকা রাখতে পারে।