বিশ্বের প্রথম তৃতীয় লিঙ্গের কূটনীতিবিদ ওয়ালিদ, কে এই বাংলাদেশী ?
সাদাকালো নিউজ
লিঙ্গ বৈচিত্র্য নিয়ে জন্ম ওয়ালিদ ইসলামের । তিনি বাংলাদেশ দূতাবাস তেহরানের ফার্স্ট সেক্রেটারি। ৩৪-বছর বয়সী এই কূটনীতিবিদ ১০ জানুয়ারি ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে নিজের তৃতীয় লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ করেছেন।
ওয়ালিদ তাঁর ফেসবুকের পোস্টে নিজেকে বাংলাদেশ এবং বিশ্বের প্রথম হিজড়া কূটনীতিক হিসেবে দাবি করেন এবং একই সাথে তুলে ধরেন কিভাবে এই পরিচয়ের জন্য পদে পদে হেনস্তার শিকার হয়েছেন।
ওয়ালিদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিভাগ থেকে পড়াশোনা করে ৩৫তম বিসিএস দিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চাকরিতে ঢোকেন। গত আড়াই বছর তিনি তেহরানে দায়িত্ব পালন করছেন। আট বছর ধরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা তিনি।
ওয়ালিদ গণমাধ্যমকে জানান বিভিন্ন সময়ই তাকে এলাকার হিজড়ারা তাদের ডেরায় ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। সেসব আক্রমণ ঠেকিয়েছেন পরিবারের সদস্য এবং এলাকার লোকজন। গোপালগঞ্জে বাড়ি হলেও ওয়ালিদ বড় হয়েছেন যশোরে।
শিক্ষাগত সনদসহ সব জায়গায় ওয়ালিদ নিজেকে একজন পুরুষ হিসেবেই পরিচয় দিয়েছেন। তিনি জানান, ৩৫তম বিসিএস এ নারী-পুরুষের পাশাপাশি ‘অন্যান্য’ এভাবে লিঙ্গ পরিচয় দেওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। এ ছাড়া তিনি নিজেও এত দিন অন্য কোনো পরিচয়কে সামনে আনেননি।
সরকার অবশ্য গেজেট প্রকাশ করে ওয়ালিদের মতো যাঁরা আছেন তাঁদের নারী, পুরুষের পাশাপাশি হিজড়া লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ২০১৪ সালে।
ব্যক্তিগত জীবনে ওয়ালিদ প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন কয়েকবছর আগে এবং পারিবারিকভাবে তা বিয়ের সিদ্ধান্ত পর্যন্ত এসেছিল। তাই অস্ত্রোপচার করে ওয়ালিদ নারী হতে চেয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত তা বিয়েতে পর্যন্ত গড়ায় নি। তাই কিছু অস্ত্রোপচার বাকি থাকলেও তিনি আর সেগুলোতে যাননি। বিভিন্ন শিক্ষাগত সনদও পরিবর্তন করেননি।
পরিচয় প্রকাশের পর তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা চলছেই। তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন বেশির ভাগ মানুষ। তারপরও কেউ কেউ নেতিবাচক মন্তব্য করছেন। তবে ওয়ালিদ এসব আর গায়ে মাখছেন না।
ওয়ালিদ বারবার তাঁর পরিবারের সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন বেশির ভাগ পরিবার এমন সন্তানের জন্ম হলে তাকে পরিবার থেকে বের করে দেয়।
“আমার বেলায় উল্টো হয়েছে। অন্যদের চেয়ে আমাকে সবচেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বড় করেছে। তাই আমি আজ কূটনীতিক হিসেবে পরিচয় দিতে পারছি।”
তেহরানের আগে চীন, জাপান, মালয়েশিয়া ও ভারতে দায়িত্ব পালন করেছেন ওয়ালিদ। পরিবারের পাশাপাশি নিজের বর্তমান কর্মক্ষেত্র এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ওয়ালিদ।