বিএনপির ভিন্নমত, আপাতত থেমে গেছে রাষ্ট্রপতির বিদায় আলাপ
এক ‘অনানুষ্ঠানিক’ আলাপচারিতায় তার এক মন্তব্য ঘিরে যে ঝড় উঠেছিল, আপাতদৃষ্টিতে তা থিতিয়ে এসেছে গত ২৪ ঘণ্টায়। বঙ্গভবনের বাইরে দিনভর বিক্ষোভের পর সম্ভাব্য নতুন রাষ্ট্রপতির নাম নিয়ে জল্পনা শুরু হয়ে যায়।
মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সরকারের অন্তত দুজন উপদেষ্টার বৈঠকের পর গুঞ্জন শুরু হয়েছিল, বিচারপতি আহমেদই হতে যাচ্ছেন বঙ্গভবনের পরবর্তী বাসিন্দা।
অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠা রাষ্ট্রপতির বিদায়ের আলোচনা বুধবার হঠাৎ করেই অন্য দিকে মোড় নেয়, যখন তথ্য উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রপতির থাকা না থাকা ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়, সাংবিধানিক নয়’। আর সেজন্য বঙ্গভবনের বাইরে আন্দোলনেরও প্রয়োজন নেই।
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ বা অপসারণে সাংবিধানিক সংকট হতে পারে– আইনজ্ঞদের এমন মতামতের মধ্যে বিএনপি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে বলেছে, তারা সাংবিধানিক সংকট চায় না।
তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ বুধবার এ বিষয়ে কথা বলার আগেই বিএনপির দুই জ্যেষ্ঠ নেতা তাদের দলীয় অবস্থান স্পষ্ট করেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির ওই দুই নেতাই বলেন, রাষ্ট্রপতির অপসারণ বা পদত্যাগ নিয়ে নতুন করে কোনো জটিলতা তৈরি হোক, তারা তা চান না।
মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সকালের বৈঠকে অংশ নেওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদ পরে গুলশানে সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রপতির পদটা একটা সাংবিধানিক পদ বা একটা প্রতিষ্ঠান, সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদ। এই পদে হঠাৎ করে পদত্যাগের মাধ্যমেই হোক শূন্যতা সৃষ্টি হলে সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি হবে, রাষ্ট্রীয় সংকটের সৃষ্টি হবে।
মো. সাহাবুদ্দিনের ওপর এই চাপের সূচনা হয়েছিল তার এক কথিত বক্তব্য এবং তার প্রতিক্রিয়ায় আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের মন্তব্যের পর।গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা ভারতে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর সেনাপ্রধান প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের খবর দেন। সেই রাতেই জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করার কথা বলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
নতুন আলোচনা শুরু হয় গত ১৯ অক্টোবর মানবজমিন পত্রিকার রাজনৈতিক ম্যাগাজিন ‘জনতার চোখ’ এর প্রচ্ছদ প্রতিবেদন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর একটি লেখা প্রকাশিত হওয়ার পর।সেখানে রাষ্ট্রপতিকে উদ্ধৃত করে মানবজমিন সম্পাদক লেখেন, আমি শুনেছি তিনি পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু আমার কাছে কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই।
এর প্রতিক্রিয়ায় আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সাংবাদিকদেরকে বলেন, রাষ্ট্রপতির ওই বক্তব্য ‘মিথ্যাচার’ এবং এর মধ্য দিয়ে তার ‘শপথ লংঘন’ হয়েছে।রাষ্ট্রপতি এখন আর পদে থাকার যোগ্য আছেন কিনা, সেই প্রশ্ন উপদেষ্টা তোলেন।
কিন্তু সংসদ না থাকায় তাকে অপসারণের সাংবিধানিক উপায় যেহেতু নেই, সেহেতু সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে মাঠের আন্দোলন জোরালো হয়ে ওঠে।