বাইডেন-পুতিনের যোগাযোগে এখন কোন হটলাইন?
সাদাকালো নিউজ
হোয়াইট হাউস ও ক্রেমলিনের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগের জন্য ১৯৬৩ সালে একটি হটলাইন চালু করা হয়েছিল। তবে বর্তমানে দুই পক্ষ কীভাবে যোগাযোগ করছে, সে ব্যাপারে বেশি কিছু জানা যায়নি।
১৯৬২ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন কিউবায় পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপন করেছিল। সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দূরত্ব ছিল মাত্র ১৮০ কিলোমিটার। তাই যুক্তরাষ্ট্র হুমকি অনুভব করে নৌ অবরোধ আরোপ করেছিল।
এরপর মার্কিন একটি বিমান গুলি করে ভূপতিত করা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর আশঙ্কা করেছিল বিশ্ব। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সোভিয়েত নেতা নিকিতা ক্রুশ্চেভ রেডিও মস্কোতে ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, কিউবা থেকে পারমাণবিক অস্ত্র সরিয়ে নেওয়া হবে। এ ঘোষণায় পুরো বিশ্বে স্বস্তি ফিরেছিল।
এ ঘটনার পর দুই পক্ষই নিজেদের মধ্যে বিশ্বাস তৈরির অংশ হিসেবে সরাসরি যোগাযোগের কথা ভাবতে শুরু করে। পরে ১৯৬৩ সালের ৩০ আগস্ট একটি হটলাইন চালু হয়। ‘লাল টেলিফোন’ নামে এটি পরিচিতি পেলেও আসলে এটি টেলিফোন ছিল না। এটি ছিল একটি টেলেক্স মেশিন, যেটাতে করে বার্তা পাঠানো যেত। ওই সময়েই এই যন্ত্রটির ব্যবহার কমে আসছিল। তবে টেলিফোনের মতো এটিতে আঁড়ি পাতা যেত না, বলে জানান ইতিহাসবিদ ব্যার্ন্ড গ্রাইনার। এটি দুই পরাশক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তারা নিশ্চিত করতে চেয়েছিল যে অন্য কোনো পক্ষ, তা সে যেই হোক না কেন, যেন তাদের যোগাযোগ শুনতে না পারে, বলেন গ্রাইনার।
ওই টেলেক্স মেশিন ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নকে পাঠানো প্রথম পরীক্ষামূলক বাক্যটি ছিল এরকম: ‘The quick brown fox jumped over the lazy dog 1234567890.’ এই বার্তার কোনো গুরুত্ব ছিল না। তবে ওই বাক্যে ইংরেজি সব অক্ষর ও নম্বর ব্যবহার করা হয়েছিল।
বার্লিন সেন্টার ফর কোল্ড ওয়ার স্টাডিজের সাবেক প্রধান গ্রাইনার বলেন, বিশ্বকে আশ্বস্ত করার জন্য এটি (হটলাইন) একধরনের বাহ্যিক সংকেত ছিল যে, তারা দ্বিপাক্ষিক জরুরি যোগাযোগের মূল্য বুঝতে পেরেছিল এবং তারা ১৯৬২ সালের সেই বিপজ্জনক পরিস্থিতি আর তৈরি হতে দিতে চায় না।
তবে এই টেলেক্স মেশিনটি খুব বেশি ব্যবহার করা হয়নি। শুধু পরীক্ষা করার জন্য মেশিনটি কয়েকবার চালু করা হয়েছিল, গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কাজে এটি ব্যবহৃত হয়নি, বলে জানান গ্রাইনার। ১৯৬৭ সালে ইসরায়েল ও আরব দেশগুলোর মধ্যে ছয় দিনের যুদ্ধ এবং ১৯৭৩ সালে ইওম কিপুর যুদ্ধের সময় নেতারা টেলিফোনে যোগাযোগ করেছিলেন।
১৯৮৯ সালের বার্লিন প্রাচীর পতন ও ১৯৯১ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ওয়াশিংটন ও মস্কোর মধ্যে হটলাইন থাকার বিষয়টি বাহুল্য হয়ে পড়েছিল।
এছাড়া প্রযুক্তির উন্নতির কারণে দ্রুত ও নিরাপদ যোগাযোগের অন্যান্য মাধ্যম চলে এসেছে। কয়েক দশক ধরে ওয়াশিংটন ও মস্কোর মধ্যে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে যোগাযোগ হয়েছে।
কেউ একজন ভাবতে পারেন, ২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর হয়ত ‘লাল টেলিফোন’ বেজে উঠেছিল। আমরা জানি না, বলেন গ্রাইনার। এ ধরনের যোগাযোগের কথা সাধারণত প্রকাশ করা হয় না।
গ্রাইনার বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে কয়েকবার টেলিফোনে কথা বলেছেন বলে জানা যায়। বর্তমান ইউক্রেন যুদ্ধে হটলাইন কোনো সহায়ক হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেছেন তিনি। গ্রাইনার বলেন, সমস্যা হচ্ছে, দুই দেশের সশস্ত্র বাহিনী ও কূটনীতিকদের মধ্যে যে প্রতিষ্ঠিত যোগাযোগ ছিল তা কার্যত ভেঙে গেছে। সেখানে এখন এক ধরনের নীরবতা বিরাজ করছে। এটিই স্নায়ুযুদ্ধের চরম পর্যায়ের পরিস্থিতি থেকে বর্তমানের পরিস্থিতিকে আলাদা করে, কারণ তখন অন্তত দুই পক্ষ নিজেদের মধ্যে হটলাইন চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।