বাঁচা-মরার লড়াই জামালদের
সাদাকালো নিউজ
হাসি সব সময়ই সংক্রামক। অনুশীলনে নামার আগে স্ট্রাইকার সুমন রেজা বেশ মনমরা ছিলেন। ‘বাংলাদেশ দল গোল করতে পারে না’—এই বদনামের বেশির ভাগ ভাগীদার সুমন হলেও মানসিকভাবে বেশ চাপে বসুন্ধরা কিংসের স্ট্রাইকার।
অনুশীলনে স্ট্রেচিংয়ের সময় তপু বর্মণ কিছু একটা নিয়ে রসিকতা করলেন দলের ট্রেনার ইভান র্যাজলগের সঙ্গে। মুহূর্তে সেই হাসি ছড়িয়ে পড়ল পুরো দলের মধ্যে। অনুশীলনে হাসিখুশি দেখালেও বেঙ্গালুরুর শ্রী কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে আজ বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টায় মালদ্বীপের বিপক্ষের ম্যাচটায় জামাল ভূঁইয়াদের যেতে হবে স্রোতের উল্টো দিকে। স্রোতের উল্টো পাশে আছে পরিসংখ্যান, আছে গোল করতে না পারার বদনামও। বদনামটা আগে থেকেই বাংলাদেশকে ধাওয়া করছে, লেবানন ম্যাচের পর সেটা আরও বেড়েছে। ওই ম্যাচে ১ পয়েন্ট না পাওয়ায় মালদ্বীপ ম্যাচটা এখন বাংলাদেশের জন্য বাঁচা-মরার লড়াই। লাল-সবুজ ফুটবলাররা নিজেরাই নিজেদের সঙ্গে বলছেন, ‘হয় লড়ো, নয় মরো!’
বাংলাদেশ দল এমন এক দলের সঙ্গে কোণঠাসা হয়ে নামছে, যাদের সঙ্গে শেষ তিন সাফে জয়ের কোনো কীর্তি নেই। র্যাঙ্কিংয়েও মালদ্বীপ এখন বাংলাদেশের চেয়ে ৩৪ ধাপ এগিয়ে। ২০০৩ সালে নিজেদের একমাত্র সাফ জিতেছিল বাংলাদেশ। সে আসরেই সাফে মালদ্বীপের বিপক্ষে শেষবারের মতো জয় পেয়েছিলেন আলফাজ-আমিনুলরা। ১৮ বছরের খরা কাটিয়ে ২০২১ সালে চার জাতি টুর্নামেন্টে শ্রীলঙ্কায় মালদ্বীপের বিপক্ষে অবশেষে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। আজ মাঠে নামার আগে একটাই সান্ত্বনা জামালদের, মালদ্বীপের রক্ষণ আর আগের মতো নিশ্ছিদ্র নয়।
নিজেদের মাঠের বাইরে মালদ্বীপ বেশ নড়বড়ে—এমনটাই মন্তব্য বাংলাদেশ গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকোর। ভারতে খেলা হওয়ায় মালদ্বীপের শক্ত আক্রমণের বিপক্ষে নিজের পোস্ট অক্ষুণ্ন রাখা সম্ভব বলে মনে করেন জিকো, ‘অন্যের মাঠে খেলা হলে ওদের জিততে একটু কষ্ট হয়। শ্রীলঙ্কায় আমরা ওদের বিপক্ষে জিতেছি। এবার ভারতে খেলা হচ্ছে। এখন আমাদের দুটি ম্যাচ, আমি চাই দুই ম্যাচে ক্লিন শিট রাখতে।’
ক্লিন শিট রাখতে চাইলেও জিকোর জন্য বড় সমস্যার কারণ হতে পারেন ভুটানের বিপক্ষে গোল করা মালদ্বীপের হামজা মোহাম্মদ ও নাইজ হাসান। ডিফেন্ডার হুসাইন ইউসুফকেও বিপদ মনে করেন বাংলাদেশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরা। এমন আক্রমণাত্মক প্রতিপক্ষকে ঠেকাতে বাংলাদেশ কৌশল বদলাবে আজ। মাঝমাঠে চার মিডফিল্ডার—জামাল ভূঁইয়া, দুই সোহেল রানা ও মোহাম্মদ হৃদয়কে নিয়ে বাংলাদেশের ছক হবে ৪-৪-২।
মালদ্বীপ সম্পর্কে ভালো ধারণা আছে কোচ কাবরেরারও। বাংলাদেশ দলের কোচের দায়িত্বে কাবরেরার প্রথম দায়িত্বটাই ছিল মালদ্বীপের বিপক্ষে। গত বছরের মার্চে কাবরেরা সেই ম্যাচটা হেরেছিলেন ২-০ গোলে। হেরে যাওয়া ম্যাচটা ভুলে যেতে বলেছেন স্প্যানিশ কোচ, গুরুত্বহীন বলছেন পরিসংখ্যানকেও। শিষ্যদের প্রতি তাঁর আহ্বান, ‘আমরা এখন বর্তমানের দিকেই মনোযোগ দিচ্ছি। লেবাননের বিপক্ষে ফল যেমনই হোক, সে ম্যাচটাই আমাদের সাহস দিচ্ছে মালদ্বীপের বিপক্ষে ভালো খেলার। প্রথম ম্যাচে আমরা মালদ্বীপের কাছে হেরেছিলাম, এর আগে আমরা কিন্তু জিতেছিলাম। এটা এখন ৫০-৫০ ম্যাচ। লড়াকু ফুটবল খেললে অবশ্যই সুযোগ আছে। আমাদের সাহসী ফুটবল খেলতে হবে।’
মালদ্বীপের বিপক্ষে অবধারিতভাবেই কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে বাংলাদেশের রক্ষণভাগকে। আজকের ম্যাচে তাই একটা দল হয়েই রক্ষণে নিজেদের সেরাটা দিতে চান ডিফেন্ডার তপু বর্মণ। ২০২১ সালে মালদ্বীপের বিপক্ষে গোল করে বাংলাদেশকে জিতিয়েছিলেন তপু। ম্যাচে বাড়তি নজর থাকবে তাঁর দিকেও। তপু বললেন, ‘এখন আমাদের দ্বিতীয় ম্যাচ জিততে হবে। জিততে না পারলে সাফ থেকে বিদায় নিতে হবে। তাই প্রতিটি খেলোয়াড়ের দায়িত্ব সেরাটা খেলার। শুধু ডিফেন্ডাররাই যে ডিফেন্স করবে এমন নয়, একটা দল হিসেবে আমরা ডিফেন্স করতে চাই।’
জয় ছাড়া আর কোনো রাস্তা খোলা নেই বাংলাদেশের। সব চাপ উতরে ফুটবলারদের আজ নিজেদের সেরাটা দেখানোর সুযোগ দেখছেন কাবরেরা, ‘আমি বিশ্বাস করি, এই ম্যাচে আমাদের তিন পয়েন্ট পাওয়া খুবই সম্ভব।’