বসন্ত বাতাসে উদযাপিত হচ্ছে ভালোবাসা দিবস
সাদাকালো নিউজ
ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিনে প্রকৃতি ও মনে বাসন্তী রং লেগে তরুণ প্রাণে ভালোবাসা উথলে উঠেছে। দেড় হাজার বছরের বেশি পুরনো ভ্যালেন্টাইন যে ভালোবাসা এই দিনে ছড়িয়ে দিয়ে গেছেন তা আজও বজায় রেখেছে তার উত্তরসূরি তরুণ-তরুণীরা। পাখিদের কলকাকলী, ফুলে ফুলে রাঙা আর বাসন্তী মোহে আচ্ছন্ন এই দিনটি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস বা ভালেন্টাইন ডে।
ভালোবাসার এই দিনে প্রেমিক-প্রেমিকার মনের উচ্ছ্বাসকে আরও বাড়িয়ে দেবে। তরুণ-তরুণী থেকে সব বয়সের মানুষ এই দিনে প্রিয়জনের সঙ্গে একান্ত কিছু সময় কাটাবেন। তাইতো প্রকৃতি এতো আয়োজন করে রেখেছে।
বসন্তের প্রথম দিন পহেলা ফাল্গুন আর ভালোবাসা দিবস, সাজ ও বর্ণে মিলেমিশে একাকার হয়েছে। লাল, বাসন্তী আর সাদার সাজে নানা বয়সী মানুষ সড়কে সড়কে, বটতলায়, টিএসসি সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রিয়জনের হাত ধরে ঘুরে বেড়াবেন। মিষ্টি কথা, হাসি আর খাওয়া-দাওয়ায় দিনটি আনন্দে কাটাবেন। কেউ কেউ দিবসটি উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে কনসার্টেরও দর্শক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
ভালোবাসা দিবসের রাত থেকে কথা শুরু হয়েছে প্রিয়জনের সঙ্গে একে অপরের চুপকথা। এ দিনে চকোলেট, পারফিউম, গ্রিটিংস কার্ড, ই-মেইল, মুঠোফোনের এসএমএস প্রেমবার্তায় মুখর হয়ে উঠেছে, উঠবে।
ভ্যালেন্টাইন দিবস নিয়ে নানা কাহিনী প্রচলিত আছে। এর একটি হলো- এক খ্রিস্টার পাদ্রী ও চিকিৎসক ফাদার সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের নামে দিনটির নাম ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ করা হয়। ২৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি খ্রিস্টানবিরোধী রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস আহত সেনাদের চিকিৎসা করার অপরাধে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। মৃত্যুর আগে ফাদার ভ্যালেন্টাইন তার আদরের একমাত্র কন্যাকে একটি ছোট্ট চিঠি লেখেন, সেখানে তিনি নাম সই করেছিলেন ‘ফ্রম ইউর ভ্যালেন্টাইন’। ভ্যালেন্টাইনের মেয়ে ও তার প্রেমিক মিলে পরের বছর বাবার মৃত্যুর দিনটিকে ভ্যালেন্টােইন ডে হিসেবে পালন করা শুরু করেন। যুদ্ধে আহত মানুষকে সেবার অপরাধে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে ভালোবেসে দিনটি বিশেষভাবে পালন করার রীতি পর্যায়ক্রমে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
আরেকটি হলো- ভ্যালেনটাইনস ডে সার্বজনীন হয়ে ওঠে আরও পরে প্রায় ৪০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে। দিনটি বিশেষভাবে গুরুত্ব পাওয়ার পেছনে রয়েছে আরও একটি কারণ। সেন্ট ভ্যালেনটাইনের মৃত্যুর আগে প্রতি বছর রোমানরা ১৪ ফেব্রুয়ারি পালন করত ‘জুনো’ উৎসব। রোমান পুরানের বিয়ে ও সন্তানের দেবী জুনোর নামানুসারে এর নামকরণ। এ দিন অবিবাহিত তরুণরা কাগজে নাম লিখে লটারির মাধ্যমে তার নাচের সঙ্গীকে বেছে নিত। ৪০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে রোমানরা যখন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীতে পরিণত হয় তখন ‘জুনো’ উৎসব আর সেন্ট ভ্যালেনটাইনের আত্মত্যাগের দিনটিকে একই সূত্রে গেঁথে ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘ভ্যালেনটাইনস ডে’ হিসেবে উদযাপন শুরু হয়। কালক্রমে এটি সমগ্র ইউরোপ এবং ইউরোপ থেকে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
এছাড়া খিষ্টীয় ইতিহাস থেকে জানা যায়, রক্তপিপাসু রোমান সম্রাট ক্লডিয়াস বিশাল বিশাল সৈন্যবাহিনী জোগার করতে গিয়ে খেয়াল করে অবিবাহিত যুবকেরা যুদ্ধের কঠিন মুহূর্তে দৈর্য্য ধরে রাখতে পারে না। ফলে তিনি যুবকদের বিয়ে কিংবা যুগলবন্দি হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন যাতে তারা সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে অনীহা প্রকাশ না করে। তার এ ঘোষণায় যুবক-যুবতীরা ক্ষেপে যায়। যুবক সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামের একজন ধর্মযাজকও সম্রাটের এ নিষেধাজ্ঞা কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি। প্রথমে তিনি সেন্ট মারিয়াসকে ভালোবেসে বিয়ের মাধ্যমে রাজার আদেশকে প্রত্যাখ্যান করেন এবং তার গির্জায় গোপনে বিয়ে পড়ানোর কাজ চালাতে থাকেন। একটি রুমে বর-বধূ বসিয়ে মোমবাতির আলোয় অ্যালেন্টাইন ফিস ফিস করে বিয়ের মন্ত্র পড়াতেন। এ বিষয়টি সম্রাটের কানে গেলে তিনি ভ্যালেন্টাইনকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন। ২৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি সৈন্যরা ভ্যালেন্টাইনের হাত-পা বেঁধে টেনে-হিঁচরে সম্রাটের সামনে হাজির করলে তিনি তাকে হত্যার আদেশ দেন। সে আদেশ কার্যকর করা হয়।
প্রচলিত কাহিনী হলেও ভালোবাসা দিবসের ইতিহাস হিসেবে শেষটি সবার কাছে প্রতিষ্ঠিত।