প্রতি সপ্তাহে সবকিছুর দাম বাড়ে
সাদাকালো নিউজ
মোসলেমা খাতুন একজন গৃহিণী। স্বামী রাকিব হাসান একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। তার পক্ষে সংসারের কোনো কাজ করা সম্ভব হয় না। সে দায়িত্বের পুরোটাই এখন স্ত্রী মোসলেমার ওপর। তাই গৃহস্থালি কাজের পাশাপাশি সন্তানকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া-আসাসহ দৈনিক বাজার তাকেই করতে হয়। গতকাল রবিবার দুপুরে সন্তানের স্কুল ছুটির পর রাজশাহী নগরীর সাহেববাজারে মোসলেমা আসেন বাজার করতে। তিনি বেগুন ও পেঁয়াজ কিনতে গিয়ে দাম শুনে ফিরে যান। যেতে যেতে বলেন, এভাবে প্রতি সপ্তাহে দাম বাড়ালে আমরা যাব কোথায়? ওষুধের দাম, বাড়িভাড়া, বাচ্চাদের বই-খাতাসহ সব খরচই বাড়ছে। অথচ বাড়ছে না মাসিক আয়।
পবিত্র রমজানকে সামনে রেখে প্রতিটি নিত্যপণ্যের দাম পরিকল্পিতভাবে দুই দফায় বৃদ্ধি করা হয়েছে। আমিষ খাওয়া সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে অনেকের। এখন বাড়ছে নিরামিষের দামও। আসছে রমজানে আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ভোক্তাসাধারণ।
মোসলেমার মতো পেঁয়াজের দাম শুনে সরকারি সিটি কলেজের দুই শিক্ষার্থীর চোখও ছানাবড়া। বিক্রেতাকে দুবার দাম জিজ্ঞাসা করেন তারা। পরে বললেন, গত সপ্তাহেই তো ছিল ৩০ টাকা! ওই দুই শিক্ষার্থীর সাথে কথা বল জানা গেছে, কয়েক মাস আগেও প্রতিদিন মেসে মিল খরচ (দুই বেলা খাবার খচর) হতো ৭০-৮০ টাকা। এখন দিতে হয় ১০০ টাকা। মেসে তারা সবাই একত্রে টাকা তুলে বাজার করে রান্না করান। সামনের মাস থেকে বুয়াও বেতন বাড়াতে বলেছেন।
ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের দেওয়া তথ্যমতে, পবিত্র রমজান মাস শুরুর আগেই দেশের সব বাজারেই দফায় দফায় বেড়েছে ভোজ্যতেল, মাছ-মুরগি, চাল-আটা, তেল-চিনি, ডিমসহ সব ধরনের ডালের দাম। আমদানি বন্ধ ঘোষণায় পেঁয়াজের ভরা মৌসুমেও বাজারে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে, দাম বাড়ছে। আদা-রসুনসহ সব ধরনের মসলার বাজারে ঝাঁজে ক্রেতাই কমে গেছে। গতকাল রবিবার সকালে নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, দুই দিনের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। মুরগির বাজারে ব্রয়লার পাঁচ টাকা বেড়ে হয়েছে ২৫০ টাকা। গরুর মাংস ৭০০ আর খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ১০০ টাকায়। গত মাসের ১০৮ টাকার চিনি এ মাসে বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকায়। দুই টাকা বেড়ে ডিম প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪২ টাকায়। আমদানি বন্ধের ঘোষণায় পেঁয়াজের দাম পাঁচ টাকা বেড়ে ৩৮-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আদার দামও বেড়েছে কেজিতে ২০ টাকা। মাছের বাজারে সব ধরনের মাছ কেজিতে বেড়েছে ৪০ থেকে ১০০ টাকা।
নগরীর সাহেববাজার এলাকার মুদি দোকানি রহমত বলেন, বাজারে ভোজ্যতেল সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানেগুলো। দুয়েকটি কোম্পানি চাহিদার বিপরীতে সামান্যই সরবরাহ করছে। অন্যরা পরিবেশকদের বলে দিয়েছে পরে দেওয়া হবে। ডিলাররাও একই কথা বলছেন খুচরা ব্যবসায়ীদের।
গতকাল রাজশাহী বিভাগীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ সেলিমের নেতৃত্বে নগরীর সাহেববাজার ও উপশহর নিউমার্কেট এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় দোকানে মূল্যতালিকা প্রদর্শন না করার অভিযোগে মোট ছয়টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ১৩ হাজার টাকা জারিমানা করা হয়।