ফেরারি আরাভ খানের দাওয়াতে দুবাইয়ে সাকিব, দীঘিরা!
সাদাকালো নিউজ
সম্প্রতি এক ভিডিও বার্তায় দুবাই আরাভ জুয়েলার্স নামে একটি শো-রুমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে নিমন্ত্রণ জানাতে দেখা যায় বাংলাদেশের তারকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে। ইংল্যান্ডের সাথে তৃতীয় টি-টোয়েন্টি খেলে মধ্যরাতে দুবাইয়ে পাড়ি জমান তিনি। সাকিবের সাথে সেখানে থাকবে আলোচিত কটেন্ট ক্রিয়েটর হিরো আলমসহ বাংলাদেশের আরও বেশ কয়েকজন তারকা।
এদিকে আরাভ জুয়েলার্স নিয়ে সাকিবের ভিডিও বার্তার পরে আলোচনায় আসে দুবাইয়ের স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খানের নাম। প্রশ্ন উঠে কে এই আরাভ খান? দুবাইয়ের বুকে এতো বড় স্বর্ণ ব্যবসায়ী কিভাবে হলেন? তার ফেসবুকের ছবি ভিডিও দেখে চলে গভীর বিশ্লেষণ। এরপর অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
জানা যায়, তার নাম আরাভ খান নয়, আসল নাম রবিউল ইসলাম ওরফে আপন ওরফে সোহাগ ওরফে হৃদয়। পুলিশের জমা দেয়া অভিযোগপত্রে তিনি পলাতক আসামি। পরে পাসপোর্টের নাম পরিবর্তন করে তিনি বিদেশে পালিয়ে যান। নাম নেন আরাভ খান।
রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান ঢাকায় এসবি পুলিশ পরিদর্শক মামুন ইমরান খানকে শেষ করে দেয়ার ঘটনায় ৬ নম্বর অভিযুক্ত। একটা সময় দেশের নাটক পাড়ায় অভিনেতার পরিচয়ের আড়ালে অবৈধ ব্যবসা ও মেয়েদের দিয়ে মুক্তিপণের টাকা আদায় করতো সে।
২০১৫ সালে রাজধানীর মগবাজারে মানুষ মারার যন্ত্রসহ রবিউলকে ধরে পুলিশ। এ ঘটনায় রমনা থানায় তার নামে মোকদ্দমা হয়। জামিনে বেরিয়ে দুই বছরের মাথায় ২০১৭ সালে আবারও একি ঘটনায় গুলশান থানা পুলিশ তাকে আটক করে। সেটাতেও জামিন পান তিনি। এর পরের বছর পুলিশ পরিদর্শক মামুন ইমরানকে শেষ করে দেয়ার ঘটনায় আসামি হয়ে দেশ থেকে পালিয়ে যান এই রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান।
এই ঘটনায় টাকার বিনিময়ে হাজত খাটেন লিমন নামের এক তরুণ। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, সাজা থেকে বাঁচতে লিমন নামে এক তরুণকে টাকা এবং বিকেএসপিতে খেলার সুযোগের প্রলোভন দেখান আরাভ। এই প্রলোভনে লিমন আদালতে গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। পরে আদালত লিমনকে হাজতে পাঠায়।
রবিউল ইসলাম দুবাইয়ে বাংলাদেশি পরিচয় দেন। অথচ তিনি দেশটিতে গেছেন ভারতের পোসপোর্ট নিয়ে। তার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার আশুতিয়া গ্রামে। তার বাবার নাম মতিউর রহমান মোল্লা। আর ভারতের পাসপোর্টে তার ঠিকানা পশ্চিমবঙ্গের নরেন্দ্রপুর গ্রামে। বিয়ে করেছেন ভারতের আসামের নাগরিক সাজেমা নাসরিনকে।
পাসপোর্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালে অবৈধভাবে ভারতীয় পাসপোর্ট সংগ্রহ করেন রবিউল। এর পরের বছর দুবাই চলে যান। মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে সেখানে স্বর্ণের ব্যবসায়ী, বুর্জ আল খালিফা ভবনে ফ্ল্যাট এবং দামি দামি গাড়ির মালিক বনে যান। কিভাবে এতো তাড়াতাড়ি রবিউল বাড়ি-গাড়ির মালিক হলেন তা নিয়ে এখন দুবাইয়ের বাংলাদেশি কমিউনিটিতে চলেছে তোলপাড়। একিসঙ্গে অবাক হয়েছেন দেশের গোয়েন্দা কর্মকর্তারাও।
ডিবির উপ-কমিশনার রাজীব আল মাসুদ বলেন, রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানের দুটি পাসপোর্ট আমাদের কাছে এসেছে। একটি বাংলাদেশি অপরটি ভারতীয়। তার বিষয়ে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। অপরাধীকে আইনের আওতায় আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে।
এদিকে সমালোচিত রবিউলের আমন্ত্রণে ইংল্যান্ডের সঙ্গে ম্যাচ শেষে রাতেই তড়িঘরি করে দুবাইয়ে যাওয়ায় ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের মন্তব্য পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে মেসেজ পাঠানো হলেও তিনি সেটা দেখেও কোনো সাড়া দেননি।