নায়িকা শিমুকাণ্ডে জড়িত কে, জানাল পুলিশ
নাফিজা আক্তার
চিত্রনায়িকা শিমুকাণ্ডে হঠাৎ করেই ওঠে চিত্রনায়ক ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সমতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানের নাম। যদিও শুরু থেকেই সব ষড়যন্ত্র বলে আসছিলেন জায়েদ খান। অবশেষে জট খুলেছে শিমুর ঘটনার। জানা গেল, জায়েদ খান নন, শিমু শিকার হয়েছেন পারিবারিক কলহের। শিমুর স্বামী সাখাওয়াত আলী নোবেল সব দোষ নিজের বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন পুলিশের কাছে।
মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন এসপি মারুফ হোসেন সরদার। তিনি জানান, ধরার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শিমুর স্বামী নিজের স্ত্রীকে শেষ করে দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
পারিবারিক বিষয়ে টানাপোড়েন ও দাম্পত্য কলহের কারণেই এই ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানিয়েছে নোবেল। শিমুর দেহ একেবারে লুকিয়ে ফেলার পরিকল্পনা করেছিলেন তাঁর স্বামী। আর নোবেলকে এ কাজে সাহায্য করেন বন্ধু আব্দুল্লাহ ফরহাদ।
এসপি মারুফ হোসেন সরদার জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শিমুকে শেষ করে দেয়ার কাজে স্বামী নোবেল ও তার বাল্যবন্ধু ফরহাদের সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া গেছে। বিভিন্ন পারিবারিক বিষয়কে কেন্দ্র করে স্বামী নোবেলের সঙ্গে দাম্পত্য কলহ শুরু হয় শিমুর। এর জেরে গত ১৬ জানুয়ারি সকাল ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে অপকাণ্ডটি ঘটান নোবেল।
এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, ‘যে গাড়ি ব্যবহার করে দেহটি লুকিয়ে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে, এরই মধ্যে সেই গাড়িটি জব্দ করা হয়েছে এবং অন্যান্য আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। মডেল শিমুর স্বামী নোবেল এবং তার বাল্যবন্ধু ফরহাদ বর্তমানে আমাদের হেফাজতে আছে। এ ঘটনায় পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।’
রোববার সকাল থেকে হঠাৎ করেই নিখোঁজ হন চিত্রনায়িকা রাইমা ইসলাম শিমু। দুইদিন পর সোমবার কেরানীগঞ্জে মিলেছে তাঁর দেহ। বস্তা বন্দি করে ব্রিজের নিচে ফেলে যাওয়া হয় শিমুকে। প্রথমে অজ্ঞাত থাকলেও পরে হাতের আঙুলের ছাপ ও পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে তার পরিচয় নিশ্চিত করা হয়। সোমবার রাতে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ওসি আবু সালাম মিয়া এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
এদিকে শিমুর দেহ উদ্ধারের পর সহশিল্পীদের অনেকেই চলচ্চিত্র সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও চিত্রনায়ক জায়েদ খানের বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর ছোঁড়েন। তাঁদের দাবি, জায়েদের প্রতিহিংসার শিকার শিমু। যদিও শেষ পর্যন্ত এই দাবি ধোপে টিকলো না।
১৯৯৮ সালে কাজী হায়াত পরিচালিত ‘বর্তমান’ সিনেমা দিয়ে রুপালি পর্দায় অভিষেক হয় শিমুর। ২০০৪ সাল পর্যন্ত একনাগাড়ে ২০টিরও বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। চলচ্চিত্র ও নাটকের ক্যারিয়ারে দুই দশকেরও বেশি সময় পার করেছেন শিমু। ৫০টিরও বেশি নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। সম্প্রতি ফ্যামিলি ক্রাইসিস নামে একটি ধারাবাহিক নাটকে কাজ করেছেন তিনি।
দেশের অনেক গুনী পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন এই অভিনেত্রী। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন, চাষী নজরুল ইসলাম, দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, এ জে রানা, শরিফুদ্দিন খান দ্বীপু, এনায়েত করিম, শবনম পারভীন। অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজক হিসবেও কাজ করেছেন শিমু।
অভিনয়ের পাশাপাশি শিল্পীদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামেও সোচ্চার ছিলেন শিমু। শিল্পী সমিতি থেকে ভোটাধিকার হারানো ১৮৪ জনের মধ্যে শিল্পী শিমুও ছিলেন। ভোটাধিকার ফিরে পেতে আন্দোলন করতেও দেখা গেছে তাকে।
প্রয়াত নায়ক মান্নাসহ বর্তমান সময়ের সুপারস্টার শাকিব খান, চিত্রনায়ক রিয়াজ, অমিত হাসান, বাপ্পারাজ, জাহিদ হাসান ও মোশারফ করিমসহ- অনেক গুণী অভিনেতাদের সাথে অভিনয় করেছেন রাইমা ইসলাম শিমু।