নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষের কাছে কেমন ছিলেন এসপি হারুন
সাদাকালো নিউজ
নাম তাঁর মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তবে কর্মদক্ষতায় এই পুলিশ কর্মকর্তা পরিচিতি পেয়েছেন ‘এসপি হারুন’, ‘বাংলার সিংহাম’, ‘সিংহ পুরুষ’, ‘গরীবের বন্ধু’, ‘ডিআইজি হারুন’, ‘অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ডিবি হারুন’ কিংবা ‘ডিবিপ্রধান হারুন’ হিসেবে।
হারুন অর রশীদ ১৯৭৪ সালে কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন থানার হোসেনপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা আবদুল হাসেম ও মা জহুরা খাতুন। বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হারুন ছোটবেলা থেকেই ছিলেন অসম্ভব মেধাবী। প্রথম শ্রেণি থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজের যেকোনো পরীক্ষায় সবসময় প্রথম স্থান অর্জন করতেন।
কলেজের গণ্ডি পেরুনোর পর, হারুন তাঁর মেধার স্বাক্ষর রেখে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। সেখান থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এবং এলএলবি সম্পন্ন করেন।
পরবর্তীতে বাংলাদেশ ক্যাডার সার্ভিসের পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে ২০তম ব্যাচে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে কর্মজীবন শুরু করেন হারুন-অর-রশীদ। চৌকশ পুলিশ কর্মকর্তা হারুন তাঁর ক্যারিয়ারে ভূ-রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পান। শুরুতে তিনি ঢাকার মিরপুরের সহকারী কমিশনার হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তীতে তিনি গুলশানের সহকারী কমিশনার, তেজগাঁও ও লালবাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার, লালবাগের উপ-কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় ঢাকার রাজপথে সহিংসতা ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান ছিল তাঁর।
২০১৪ সালের ২৪ আগস্ট গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে নিয়োগ পান হারুন অর রশীদ। সেখানে অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে চার বছর মেয়াদ পূর্ণ করেন তিনি। গাজীপুরে দায়িত্ব পালনকালে এসপি হারুন হয়ে ওঠেন গরীবের বন্ধু। সাধারণ মানুষের সুরক্ষায় গড়ে তোলেন ফাস্ট রেসপন্স টিম (First Response Team)। মাদক-সন্ত্রাস আর ভূমি দখলে জড়িতদের কাছে ‘এসপি হারুন’ নামটি এক আতঙ্কে পরিণত হয়।
এসপি হারুন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের একটি রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন। কিন্তু পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে দলীয় লেজুড়ভিত্তিকে দূরে ঠেলে, প্রাধান্য দিয়েছেন নীতি-নিষ্ঠাকে। এ কারণে অনেক অসৎ রাজনৈতিক নেতাদের কাছেও এসপি হারুন এক ভীতির নাম হয়ে ওঠে।
গাজীপুরে সাফল্যের পর এসপি হারুন নারায়ণগঞ্জের দায়িত্ব পান। মাদক-সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জে পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব নিয়েই সন্ত্রাসী, মাদক কারবারী আর ভূমি দখলদারদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেন হারুন। অসহায় আর সাধারণ মানুষদের জন্য ত্রাণকর্তা হিসেবে হাজির হন এসপি হারুন। অন্যায়কারীরা যত বড় রাজনৈতিক নেতা, এমপি, কিংবা ব্যবসায়ীই হোন না কেন — হারুন কাউকে পরোয়া করেননি। দল-মত নির্বিশেষে অর্পিত দায়িত্ব পালনে অটল ছিলেন তিনি।
নারায়ণগঞ্জে সাধারণ জনতা হারুনের কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে ‘বাংলার সিংহাম’, ‘সিংহ পুরুষ’ উপাধিতে ভূষিত করে। শহরের অলিগলি, পাড়া-মহল্লায় সাটানো হয় পোস্টার, টাঙানো হয় ব্যানার। অবশ্য সিনেমার সিংহামের মতোই বাংলার সিংহাম হারুনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের কমতি নেই। নারায়ণগঞ্জে মাত্র ১১ মাস কাজ করার এক পর্যায়ে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে কর্মস্থল বদলি হয় হারুনের। যদিও পরে পুলিশের বিভাগীয় তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত হন হারুন। তাইতো এতদিন পর এসেও নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষের মুখে রয়ে গেছে এসপি হারুনের বন্দনা।