ধন-সম্পদের প্রতি আমার কোনো লোভ নেই : প্রধানমন্ত্রী
সাদাকালো নিউজ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ধন-সম্পদ, বাড়ি-গাড়ির প্রতি আমার কোনো লোভ নেই। আমি এসেছি বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে, নিজের ভাগ্য গড়ার জন্য নয়।’
রবিবার (১৬ জুলাই) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অধ্যক্ষ সম্মিলন ও বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি আমলে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে অস্ত্রের ঝনঝনানি ছিল। পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে শিক্ষাঙ্গনের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনে।
তিনি বলেন, ‘একটি সরকারের টানা ১৪ বছর ধারাবাহিকতার কারণে দেশের ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। কেবল সরকারের ধারাবাহিকতার জন্য শিক্ষার মান বৃদ্ধি, শিক্ষকদের নানা সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো সম্ভব হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের মানুষ শিক্ষিত হোক, এটা বিএনপি-জামায়াত জোটের কখনোই ইচ্ছা ছিল না। মানুষকে পদদলিত করে রাখা, অন্ধকারে রাখা এবং তাদের শোষণ করে রাখাই তাদের লক্ষ্য। নিজেরা অবৈধ সম্পদের মালিক হবে- এটাই বোধহয় তাদের চেষ্টা।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দিয়েছিলেন জাতির পিতা। শুধু তাই না, স্বাধীনতা অর্জনের পর তিনি একটা যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশকে গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিন বছর সাত মাস তিন দিন হাতে সময় পেয়েছিলেন। একটি প্রদেশকে রাষ্ট্রে উন্নীত করে, বিদ্ধস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তোলে তিনি বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশে উন্নত করে দিয়েছেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি (বঙ্গবন্ধু) সবসময় শিক্ষকদের প্রতি অত্যন্ত সম্মান দেখাতেন। আমার ছোট বেলায় মনে আছে, আমার বাবা যখন মিনিস্টার, আমরা তখন ১৫ নম্বর আব্দুলবাড়ি রোডে, তার স্কুল শিক্ষক এসেছেন। তিনি তাকে উপরে নিয়ে এসে, তাকে নিজের হাতে খাবার পরিবেশন করতে আমার মাকে নির্দেশ দিলেন। তিনি তখন ভুলে গেছিলেন তিনি একজন মন্ত্রী। তিনি তার শিক্ষককে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলেন। তাকে বিছানা করে করে সেখানে বিশ্রাম নেওয়ার ব্যবস্থা করে দিলেন। এমনকি তিনি যখন প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি তখনও বয়ঃবৃদ্ধ শিক্ষক যখন এসেছে, তাকে সমাদর করেছেন। তিনি কখনও তার শিক্ষকদের অসম্মান করেননি। তাদের ভুলেও যাননি। কারণ তাদের কাছ থেকেই তো তার হাতেখড়ি। তাদের কাছ থেকেই তো তার শিক্ষাগ্রহণ। তার শিক্ষক পণ্ডিত শাখাওয়াতউল্লাহ পাটোয়ারি বাংলা নামতা পড়াতেন। আরও একজন শিক্ষক কাজী আব্দুল হামিদ, আসলে তার কাছ থেকেই বলতে গেলে রাজনীতিতে হাতেখড়ি। তিনি মুসলিম সেবা সমিতি করে, যারা দরিদ্র ছাত্র ছিল তাদের জন্য বাড়ি বাড়ি ঘুরে মুষ্ঠিভিক্ষা করে, ধান চাল সংগ্রহ করে সে গরিব ছাত্রদের সাহায্য করতেন। মানুষকে ভালোবাসা মানুষের প্রতি কর্তব্যবোধ, দায়িত্ববোধ এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করা; সে সময় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে সংগ্রামের যে শিক্ষা সেটা পেয়েছিলেন এই শিক্ষকদের কাছ থেকেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার লেখা অসমাপ্ত আত্মজীবনী যদি আপনারা পড়েন সেখানে এ সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানতে পারবেন। তিনি একটা কথা বলতেন, শিক্ষা ছাড়া একটি জাতি কখনও উন্নত হতে পারে না। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার জন্য তিনি শিক্ষাকে বড় হাতিয়ার হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ড. কুদরত ই খুদাকে প্রধান করে শিক্ষা কমিটি গঠন করেন। সেই শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট ১৯৭৫ সালেই সম্পূর্ণ হয়ে তার হাতে এসেছিল। কিন্তু সেটা তিনি কার্যকর করে যেতে পারেননি। কারণ এরপরই তিনি খুন হন। জাতির পিতাকে হত্যা করে মিলিটারিরা ক্ষমতায় আসে।