দাবি আদায়ের শহর রাজধানী
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই প্রতিদিনই কোন না কোন দাবি নিয়ে রাজপথে নামছেন আন্দোলনকারীরা। সচিবালয় থেকে জাতীয় প্রেসক্লাব, শাহবাগ, এমনকি প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে নিজেদের দাবি আদায়ে সমবেত হচ্ছেন আন্দোলনকারীরা।
গত দুই সপ্তাহে অন্তত ৫শতাধিক সংগঠন বিভিন্ন দাবি নিয়ে রাজপথে নেমেছে। রোববারও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। বিভিন্ন দাবি আদায়ে জাতীয় প্রেসক্লাব, সচিবালয়ের সামনে সমবেত হয়েছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরতরা । যার ফলে রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। যেন দাবি আদায়ের শহরে পরিণত হয়েছে রাজধানী।
সরেজমিনে দেখা যায়, রোববার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে চাকরি জাতীয়করণ, স্থায়ীকরণ, পুর্নবহাল, পরীক্ষা পদ্ধতি সংস্কারসহ নানা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ সমাবেশ করছে বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের বঞ্চিতরা।
এদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশ আনসার, বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতি, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কমিউনিটি ক্লিনিকের মাল্টিপারপাস হেলথ ভলান্টিয়ার, শিক্ষানবিশ আইনজীবী এবং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরী কাম প্রহরীরা।
সকাল থেকেই কয়েক হাজার আনসাররা সদস্য জাতীয়করণের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে সুপ্রিম কোর্টের সামনে পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। এসময় কদম ফোয়ারা মোড়ে তারা ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন।
এসময় আন্দোলনকারী আনসারদের পক্ষ থেকে একজন সমন্বয়ক আলমগীর হোসেন বলেন, আমরা আমাদের এক দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বোনা। আমাদের দাবি আদায়ের জন্য আমরা সচিবালয়, জাতীয় প্রেসক্লাব, আনসার সদর দফতরসহ যেখানে যাওয়া দরকার, সেখানেই যাবো। যা করা দরকার তা-ই করব। কিন্তু দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা যাচ্ছি না।
এদিকে প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কমিউনিটি ক্লিনিকের মাল্টিপারপাস হেলথ ভলান্টিয়ার। তাদের দাবি, এসএইচভিদের চাকরি পুর্নবহাল ও স্থায়ীকরণ, ভাতা বিলুপ্ত করে বেতন ও উৎসব ভাতা প্রদান, সিভিএইচসি কর্তৃক এমএইচভি সংক্রান্ত কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণার নোটিশ প্রত্যাহার।
একই স্থানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ন্যায় স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসাগুলোকে জাতীয়করণের এক দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতি। এখানের কর্মসূচি পালন করে তারা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার দিকে অগ্রসর হয়।
চাকরি জাতীকরণের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাব ও সচিবালয়ের মাঝে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরী কাম প্রহরীরা। তারা পল্টন থেকে প্রেসক্লাব অভিমূখী সড়ক বন্ধ করে নানা শ্লোগান দেয়।
এছাড়া জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শিক্ষানবিশ আইনজীবীদেরও পাঁচ দাবিতে মানববন্ধন করতে দেখা যায়। তাদের দাবিগুলো হলো- বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবী তালিকাভুক্তকরনের পরীক্ষা পদ্ধতি সংস্কার, প্রতি বছর কমপক্ষে দুইটি পরীক্ষা নেয়া, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের এমসিকিউ পরীক্ষা পাশ নম্বর ৪০ করা, আইনজীবী তালিকাভুক্ত পরীক্ষা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের অধীনে নেওয়া। বাংলাদেশ বৈষম্যবিরোধী শিক্ষানবিশ আইনজীবী ও ছাত্র ঐক্য পরিষদের ব্যানারে তারা এসব দাবি জানান।
এদিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এসব সংগঠনের অবস্থানের কারণে সড়কের দুই পাশেই যান চলাচল বন্ধ ছিল সকাল ১০টা থেকে দুপুর সোয়া ১টা (১.১৫ মিনিট) পর্যন্ত। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন এই রুট দিয়ে চলাচলকারী যাত্রী ও পরিবহণ শ্রমিকরা। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পথচারীরা।
পথচারীদের ভাষ্য, এতদিন কেউ কোনো দাবি জানায়নি। এখন সুযোগ পেয়ে যে যার মতো রাস্তা বন্ধ করে দাবি জানাচ্ছে। মনে হয় দাবি আদায়ের শহর এই ঢাকা।
রোববার প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (সভাপতি) রুহুল আমিন গাজী বলেন, দেশকে স্থিতিশীল করার জন্য সরকারকে অন্তত এক বছর সময় দিতে হবে। ১৭ বছর মানুষ কথা বলতে পারেনি, এখন তারা কথা বলতে পারছে। কিন্তু তাদেরকেও বুঝতে হবে, পালিয়ে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রের কোষাগারকে একদম শূন্য করে গিয়েছেন। এখন চাইলেই তো সবার দাবি পূরণ করে অর্থসংস্থান করা সম্ভব নয় । তাই সবাইকে ধৈর্য ধরে সরকারকে স্থিতিশীল হওয়ার সময় দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।