ডুবছে ভারত পুড়ছে বিশ্ব!
সাদাকালো নিউজ
গোটা শহর যেন পরিণত হয়েছে খালে। পিচ ঢালাই সড়কের ওপর চলছে নৌকা। প্রায় ডুবে যাওয়া গাড়ি আর সাঁতার কাটতে থাকা পথ শিশুদের দেখলে কে বলবে এটি ভারতের রাজধানী দিল্লি। আর এসব দৃশ্য দেখলে আপনিও প্রশ্ন তুলতে বাধ্য হবেন, প্রকৃতির সাথে লড়াই করার ক্ষমতা কতটুকু আছে মানুষের?
এদিকে ভারতের বন্য পরিস্থিতি এতোটাই খারাপ যে, তা নিয়ে রাজনীতির মাঠেও ছড়িয়েছে উত্তাপ। বন্যা বিপর্যয়ের জন্য দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের কড়া সমালোচনা করেছে বিজেপি। তাদের অভিযোগ, কেজরিওয়াল ক্ষমতায় আসার পর থেকে একবারো যমুনার পানির দিকে তাকাননি।
অপরদিকে বন্যা পরিস্থিতির জন্য কেজরিওয়ালের দিকে আঙুল তুলেছে কংগ্রেসও। দলটির মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীমতির অভিযোগ, দিল্লির এমন পরিস্থিতি প্রাকৃতিক কারণে নয় বরং এটা মানুষের সৃষ্টি। এর পেছনে ড্রেন পরিস্কার না করা এবং জবর দখলের মতো ঘটনা অন্যতম। দিল্লির এই করুন অবস্থা নিয়ে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রাও।
এদিকে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের এলাকাতেও পৌঁছে গেছে বানের পানি। শুধু কি তায়, ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য কয়েক হাজার পরিবার উঠেছিলো ত্রাণ শিবিরে। শেষ রক্ষা হয়নি তাদেরও। ডুবেছে সবকটি আশ্রয়কেন্দ্র। এখন কোথায় যাবে এসব বানভাষী মানুষ- তারও কোনো খবর নেই। এছাড়া খাবার এবং সুপেয় পানির সংকটেও দিশেহারা মানুষ।
যদিও বন্যা নিয়ে চিন্তিত না হওয়ার পরামর্শ অরবিন্দ কেজরিওয়ালের। পাশাপাশি বন্যার পানিতে গোসল না করা, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে না যাওয়া এবং সেলফি না তুলতেও সতর্কবার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
ভারতের উত্তর পশ্চিমের রাজ্যগুলোতে তুমুল বর্ষনে ভূমি এবং ভবন ধসের মতো ঘটনা ঘটেছে। এখন পর্যন্ত শতাধিক মানুষের প্রাণ যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া উপচে পরা একটি বাধের পানি ছেড়ে দেয়ার ফলে যমুনা চলে গেছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। বিভিন্ন এলাকায় আটকে পড়াদের উদ্ধার করা হচ্ছে।
ভারতের বন্যায় শঙ্কিত বাংলাদেশও। কারণ বর্তমানে বন্যার সাথে লড়ছে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চল। নদীর পানি বৃদ্ধি এবং ভাঙনে দিশেহারা নদীতীরবর্তী এলাকার মানুষ। বেড়েই চলেছে যমুনা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্রসহ বিভিন্ন নদ নদীর পানি। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ।
বাংলাদেশ-ভারত ছাড়াও বৈরি আবহাওয়ায় বিপাকে পুরো এশিয়া মহাদেশ। পানির তাণ্ডবে চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের মানুষ দিশেহারা। আশ্রয়হীন বহু মানুষ। বন্যার পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড়ের কারণেও বিপর্যস্ত বিভিন্ন দেশ।
হঠাৎ আবহাওয়ার কেন এমন বৈরি আচরণ? বিশেজ্ঞরা বলছেন, এর পেছনে বড় কারণ জলবায়ু পরিবর্তন। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতেই ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা বাড়ছে। আবার কেউ এল নিনো জলবায়ু পরিস্থিতিকে দায়ী করছেন। তাদের ভাষ্য, এল নিনোর কারণে কঠিন রূপ ধারণ করে আবহাওয়া এবং তাপমাত্রা। এর ফলেই এশিয়া মহাদেশে যেমন দেখা দিয়েছে বন্য তেমনি প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে পুড়ছে ইউরোপ-আমেরিকা।
মোহম্মদ শাহিনুর