‘ডিজিটাল আইনের অপপ্রয়োগ বন্ধ হওয়া উচিত’
সাদাকালো নিউজ
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট করা হয়েছে সবার নিরাপত্তার জন্য। কারো বিরুদ্ধে অপপ্রয়োগের জন্য নয়। এই আইনের অপপ্রয়োগ হলে তা বন্ধ করা প্রয়োজন। তবে এখন ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের অপপ্রয়োগ কমে গেছে।
বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে মানবাধিকার সংরক্ষণ ও গণতন্ত্র সম্প্রসারণে গণমাধ্যমের ভূমিকা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জাতীয় প্রেসক্লাব।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, পুঁজির দৌরাত্ম্য গণমাধ্যমের জন্য বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুঁজি যখন সংবাদ মাধ্যমে বিনিয়োগ হয়, তখন পুঁজির দৌরাত্ব সাংবাদিকদের উপর খড়গ বসায়। এটি সাংবাদিকদের কাজ করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায়। আমরা সবসময় আলোচনা করি সরকারের পক্ষ থেকে কি প্রতিবন্ধকতা আসছে সেটি নিয়ে। পুঁজির দৌরাত্ব নিয়ে কথা হয় না।
কোনো সাংবাদিক বলতে পারবে না তার মালিকের পছন্দ হয় না এমন নিউজ করেছে। সাংবাদিকদের কাজ করার জন্য এটা বড় প্রতিবন্ধকতা।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট সবার জন্য এবং সাংবাদিকদের জন্যে সিকিউরিটি দরকার আছে। অনেক সাংবাদিকরাও ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট মামলাও করেছেন। এই আইন সবার জন্য সমান। এই আইন শুধু বাংলাদেশ করেছে শুধু তা নয়, বিশ্বের অনেক দেশে এই আইন আছে। সব ক্ষেত্রে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের অপপ্রয়োগ করা উচিত নয়। আমি মন্ত্রী হিসেবে বলছি আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হয়েছে।
সাংবাদিকদের ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন থেকে বাদ দেয়া সমীচিন নয় এমন ইঙ্গিত করে তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, কোনো একটা গোষ্ঠীকে আইন থেকে বাদ দেয়া সমীচিন নয়। আগের তুলনায় অপপ্রয়োগ অনেক কমেছে। আইন সবার জন্য সমান।
তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা যাবে না, এটার বিপক্ষে আমি ছিলাম। আমি ব্যক্তি হাছান মাহমুদ হিসেবে বলব এই আইনের বিরুদ্ধে। কোনো গোষ্ঠীর জন্য আইন আলাদা হতে পারে না।
হাছান মাহমুদ বলেন, হাতে একটা মোবাইল থাকলেই সে সাংবাদিক হয়ে যায়, সাংবাদিক পরিচয় দেয়। তবে ভুয়া সাংবাদিক মূল সাংবাদিকতার জন্য পীড়াদায়ক।
তিনি বলেন, বহুমাত্রিক ও বির্তক ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থার জন্য গণমাধ্যম অপরিহার্য। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা থেকে শিখতে পারে। বাংলাদেশে হাজার হাজার সাংবাদিক কাজ করেছে। বিশ্বের কোনো দেশে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের মতো এতো স্বাধীনতা নেই। এমনকি আশেপাশের দেশেও গণমাধ্যমের এতো স্বাধীনতা নেই। সিঙ্গাপুরে ও মালেশিয়ায় বাংলাদেশের মতো গণমাধ্যমে এতো স্বাধীনতা নেই।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, স্বাধীনতার সঙ্গে দায়িত্বশীলতাকেও যোগ করতে হয়। তাহলে গণমাধ্যম সঠিকভাবে পরিচালিত হয়। আর যদি স্বাধীনতার সাথে দায়িত্বশীলতা না থাকে, তাহলে অনেক ক্ষেত্রে সমাজের ক্ষতি হয়, রাষ্ট্রেরও ক্ষতি হয়।
প্রেস কাউন্সিলের তিরস্কার করা ছাড়া কোনো ক্ষমতা নেই উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, প্রেস কাউন্সিলের কোনো ক্ষমতা নেই। প্রেস কাউন্সিলের যারা সদস্য তারা এটিকে আরেকটু ক্ষমতাবান করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন। ১০ লাখ টাকা জরিমানা করার ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল৷ আমরা ৫ লাখ টাকা বলেছি। তবে এখনো আইনি পাস হয়নি। কিন্তু এখনো প্রেস কাউন্সিলের কোনো ক্ষমতা নেই।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে জাতীয় প্রেসক্লাবের বযবস্থাপনা কমিটির সদস্য জুলহাস আলমের সঞ্চালণায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভুঁইয়া, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম ও সমকালের সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেনসহ অনেকেই।