যেভাবে ডাক্তার থেকে গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার
যে দিনগুলোতে দেশের মানুষ পছন্দের গান শোনার জন্য বেতারে কান রাখতেন, যখন দেশে টেলিভিশন চ্যানেল ছিল মাত্র একটি, সেসময় দিনে অনেকবার শোনা যেত গাজী মাজহারুল আনোয়ার রচিত গান। আজ রোববার সকালে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন দেশের অনেক কালজয়ী দেশাত্মবোধক গানের রচয়িতা গাজী মাজহারুল আনোয়ার। তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। সকালে অসুস্থ বোধ করলে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। যাওয়ার পথেই শেষ নিঃশ্বাস ছাড়েন।
গাজী মাজহারুল আনোয়ার একাধারে ছিলেন গীতিকার, চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক। মুক্তিযুদ্ধের বিশেষ যে দিনগুলো বছরের নানা সময় উদযাপন করা হয় সেসময় সারা দেশজুড়ে বাজানো হয় তারই লেখা, ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’। কালজয়ী অসংখ্য গানের স্রষ্টা গাজী মাজহারুল আনোয়ারের গান লেখার অভ্যাস শুরু হয়েছিল সেই ছোটবেলা থেকেই। তবে শুরুটা হয়েছিল কবিতা দিয়ে।
২০১৩ সালে বিবিসি বাংলার সাথে এক কথোপকথেনে তিনি বলেছিলেন, জন্মস্থান কুমিল্লায় স্কুলে পড়ার সময় থেকেই তিনি দেয়াল পত্রিকায় কবিতা লিখতেন। তবে গান লেখা শুরু করেন মেডিকেল কলেজে ভর্তির পর।
পারিবারিক ইচ্ছায় ডাক্তার হতে গাজী মাজহারুল ভর্তি হয়েছিলেন মেডিকেল কলেজে। সেখানেই নাটকের জন্য প্রয়োজন পড়ে একটি গানের। গানটি লেখার কথা ছিল সে সময়কার বিখ্যাত গীতিকার আবু হেনা মোস্তফা কামালের। কিন্তু সময় স্বল্পতার কারণে তিনি গানটি লিখতে পারেনি। পরে নাটকের পরিচালকের কাছে অনুমতি নিয়ে একটি গান লিখে ফেলেন তিনি। পরবর্তী সময়ে গানটি রেডিওতে গান শিল্পী ফরিদা ইয়াসমিন। সেই থেকেই গান লেখায় উৎসাহ পান তিনি।
তবে গান লেখার কারণে মেডিকেলের পড়াশোনা ছেড়ে দিতে চাইলে তাঁর বাবা খুব হতাশ হন। এ কারণে ছেলেকে একটি চিঠিও লেখেন তিনি। চিঠিতে তাঁর বাবা লেখেন, ‘ইউ আর মাই লস্ট গেম।’ তবে বাবার এই অভিমান আর ভুল ধারণা তিনি প্রমাণ করে দিয়েছিলেন একুশে পদক পাওয়ার মাধ্যমে।
পরে গর্বিত বাবা মাজহারুল আনোয়ারকে আরেকটি চিঠি লেখেন। যাতে লেখা ছিল: ‘আমি তোকে চিঠি লিখে যে কথাটি বলেছিলাম, সেটা ঠিক নয়। যার যা পথ, সেটাই সত্যি হয়।’ আর এভাবেই ডাক্তার না হয়ে তিনি হয়ে ওঠেন খ্যাতিমান এক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব।
সাদাকালো নিউজ