টুপি দেখে মা-ছেলের ‘ঘাতককে’ গ্রেপ্তার করল পুলিশ
সাদাকালো নিউজ
গভীর রাতে মা ও ছেলেকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। কিন্তু ছিল না প্রত্যক্ষদর্শী। তবে ফেলে যাওয়া একটি টুপির সূত্র ধরে ‘ঘাতককে’ শনাক্ত করেছে পুলিশ।
পুলিশ বলছে, ‘কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জের ধরে প্রবাসীর ঘুমন্ত স্ত্রী-ছেলেকে হত্যা করেছে তারই ভাতিজা আবদুল্লাহ আল শাহেদ (১৪)।’ গেল মঙ্গলবার গভীর রাতে চৌদ্দগ্রাম পৌর এলাকার পাঁচরা গ্রামে হত্যার ঘটনাটি ঘটে।
হত্যার শিকার গৃহবধূ আয়েশা আক্তার নিপা (২৫) ওই গ্রামের দুবাই প্রবাসী আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী। এ সময় ঘাতকের হাত থেকে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় ওই প্রবাসীর আড়াই বছরের সন্তান জিহাদ। পুলিশ গৃহবধূ নিপা ও তার ৮ বছর বয়সী শিশু আলী আহসান মুজাহিদকে হত্যার ঘটনায় শাহেদকে গ্রেপ্তার করেছে।
শাহেদ স্থানীয় একটি মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। ঈদের ছুটিতে বাড়িতেই ছিল। হত্যার পর মাদ্রাসায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। সেখান থেকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। বুধবার রাতে এসব তথ্য জানান চৌদ্দগ্রাম থানার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শুভ রঞ্জন চাকমা।
তিনি বলেন, ‘খুনের ঘটনায় গৃহবধূর বাবা জালাল আহেমদ বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলায় সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া আবদুল্লাহ আল শাহেদকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির জন্য তাকে বৃহস্পতিবার আদালতে পাঠানো হবে।’
গ্রেপ্তার শাহেদের বরাত দিয়ে ওসি বলেন, ‘মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে নিপা তার ছেলেকে নিয়ে একই এলাকার মামা শ্বশুর আজিজুল ইসলামের বাড়িতে দাওয়াত খেতে যান। রাতে বাড়ি ফিরে দুই ছেলেকে নিয়ে ঘরে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত আড়াইটার দিকে লাকড়ি দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে তাদের গুরুতর আহত করা হয়। এ সময় তাদের চিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন এসে মুজাহিদ ও তার মা নিপাকে উদ্ধার করে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক নিপাকে মৃত ঘোষণা করেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা নিয়ে যাওয়ার পথে শিশু মুজাহিদ মারা যায়।’
আবদুল্লাহ আল শাহেদের বরাত দিয়ে পুলিশ আরও জানিয়েছে, ‘সম্পত্তির বিরোধকে কেন্দ্র করে চাচা ও জেঠাদের সঙ্গে তার মায়ের ঝগড়া হতো। তার মা বিষয়টি নিয়ে কান্নাকাটি করতো। এটি তার সহ্য হতো না। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সে ছাদের সিঁড়ি দিয়ে কৌশলে ঘরের ভেতর ঢুকে লুকিয়ে ছিল। গভীর রাতে আয়েশা আক্তার নিপা লাইট জ্বালিয়ে ঘুমিয়ে পড়লে ঘরের ভেতরে থাকা শক্ত লাকড়ি দিয়ে প্রথমে চাচির মাথায় আঘাত করে। এ সময় তার চাচি বাঁচার জন্য চিৎকার করলে পাশে ঘুমিয়ে থাকা আলী আহসান মুজাহিদ জেগে উঠে। তাকেও আঘাত করে হত্যা করা হয়। পরে কৌশলে ঘরের ছাদের পাশের গাছ দিয়ে নিচে নেমে পালিয়ে যায়।’
এ বিষয়ে আবদুল্লাহ আল শাহেদের মা ফাতেমা বেগম বলেন, ‘আমি এ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে কিছুই জানি না। আমরা তিন জা একসঙ্গে দাওয়াতে ছিলাম। রাতে চিৎকার শুনে সবার মতো আমিও ঘর বের হয়ে জানতে পারি, আমার জা ও তার শিশু সন্তান খুন হয়েছে। এখন পুলিশের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, আবদুল্লাহ আল শাহেদ নাকি এ দুজনকে হত্যা করেছে।’
নিপার মা নাছিমা বেগম বলেন, এখন আড়াই বছরের জিহাদের কি হবে? তাকে কে দেখবে?। আমি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচাই চাই।’ নিপার বাবা ও মামলার বাদী জালাল আহমেদ বলেন, সামান্য সম্পত্তির জন্য এভাবে আমার মেয়ে ও নাতিকে মরতে হলো।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) খন্দকার আশফাকুজ্জামান জানান, হত্যাকাণ্ডের পর থেকে শাহেদকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। মরদেহের পাশে রক্তমাখা লাকড়ির তিনটি টুকরা ও ঘরের সিঁড়িতে একটি টুপি পাওয়া যায়। টুপি পেয়েই মাদ্রাসা ছাত্র শাহেদের প্রতি সন্দেহ বাড়ে। পরে মাদ্রাসায় খোঁজ নিয়ে সেখানে শাহেদকে পাওয়া যায়নি। ভোরে সে মাদ্রাসায় ঘুমাতে গেলে পুলিশ তাকে সেখান থেকে গ্রেপ্তার করে।