জ্বালানি চাহিদা মেটাতে আসছে আরও এক কার্গো এলএনজি
সাদাকালো নিউজ
দেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা মেটাতে জরুরি ভিত্তিতে স্পট মার্কেট থেকে আরও এক কার্গো লিকুইডিফাইড ন্যাচারাল গ্যাস (এলএনজি) আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য ব্যয় হবে ৬৯০ কোটি ৪২ লাখ ৯ হাজার ৩১২ টাকা। এলএনজি আমদানির এই উদ্যোগ ২০২৩ সালের দ্বিতীয়। চলতি বছর এর আগে আরও এক কার্গো এলএনজি আমদানি করা হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম বৃদ্ধির পর দীর্ঘদিন এলএনজি আমদানি বন্ধ ছিলো।
সূত্র জানায়, দেশের বিদ্যমান ও ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা পূরণের জন্য রাস লাফ্ফান লিকুইডিফাইড ন্যাচারাল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (কাতারগ্যাস) এবং ওমান ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনাল (বর্তমান নাম ওকিউটি)-এর সঙ্গে দুটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির মাধ্যমে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। স্পট মার্কেট থেকে এলএনজির দাম স্বাভাবিক মূল্যের চেয়ে বহুগুণে বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি কার্যক্রম বন্ধ ছিলো।
সূত্র জানায়, চাহিদার তুলনায় গ্যাসের সরবরাহ কম থাকায় বিশেষ করে বিদ্যুৎ উৎপাদন, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ ও শিল্প খাতে স্বাভাবিক গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে। গ্যাসের ঘাটতির ফলে শিল্প খাতে উৎপাদন ব্যাহত বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে। গ্যাসের ঘাটতির ফলে শিল্প খাতে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে গ্যাস সরবরাহ নির্বিঘ্ন করতে এবং গ্যাসের উর্ধ্বমূল্য বিবেচনায় প্রয়োজনে বর্ধিত মূল্যে হলেও গ্যাস সরবরাহের জন্য অনুরোধ করা হয়।
এ অবস্থায়, স্পট মার্কেট থেকে উচ্চমূল্য বিবেচনায় নিয়ে গত ১৮ জানুয়ারি এস,আর,ও নং-১৪ আইন/২০২৩ অনুয়ায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্য ১৪ টাকা ঘনমিটার, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ ও শিল্পে ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্য ৩০ টাকা ঘনমিটার নির্ধারণ করা হয় যা ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে। সে লক্ষ্যে দেশে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের জন্য স্পট মার্কেট থেকে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সর্বমোট ১২ কার্গো এলএনজি সংগ্রহের জন্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী (প্রর্গোধানমন্ত্রী) সদয় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, বিদ্যুৎ, শিল্প ও সার কারখানায় গ্যাসের সরবরাহ বৃদ্ধি করার জন্য গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে এক কার্গো এলএনজি আমদানির প্রত্যাশা অনুমোদন করা হয়েছে যা আমদানির কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
সূত্র জানায়, স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি ক্রয়ের লক্ষ্যে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মাস্টার সেল অ্যান্ড পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট (এমএসপিএ) প্রস্তুত করে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ভেটিং গ্রহণ করা হয় এবং তদপ্রেক্ষিতে এমএসপিএ টি চূড়ান্ত করা হয়। পরবর্তীতে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির নীতিগত অনুমোদনের ভিত্তিতে পেট্রোবাংলা এমএসপিএ অনুস্বাক্ষরকারী ২০টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চূড়ান্ত করা এমএসপিএ স্বাক্ষর করে।
সূত্র জানায়, চলতি বছরের মার্চ মাসে বিদ্যুৎ, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ, শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের জন্য স্পট মার্কেট থেকে দুই কার্গো এলএনজি গ্রহণ করা প্রয়োজন। চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের ২ তারিখে আরপিজিসিএল থেকে এমএসপিএ স্বাক্ষরকারী ২০টি প্রতিষ্ঠানের কাছে মার্চ মাসের জন্য স্পট মার্কেট থেকে এক কার্গো এলএনজি সরবরাহের জন্য কয়েকটি শর্ত জুড়ে দরপ্রস্তাব আহ্বান করা করে ইমেইল করা হলে এতে ৬টি প্রতিষ্ঠান সাড়া দেয়। এর মধ্যে জাপানের জেইআরএ কোং. ইনকরপোরেশন প্রতি এমএমবিটিইউ’র দাম ১৬.৫০০ ডলার উল্লেখ করে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে রেসপন্সিভ হয়। যুক্তরাষ্ট্রের এক্সেলারেট এনার্জি এলপি প্রতি ইউনিট ১৭.৭৩০০ ডলার উল্লেখ করে ২য় দরদাতা, সুইজারল্যান্ডের টোটাল এনার্জিস গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেড ১৯.২২০০ ডলার উল্লেখ করে ৩য়, সিঙ্গাপুরের ভিটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড ১৯.৩৮১৯ ডলার উল্লেখ করে ৪র্থ, সিঙ্গাপুরের পেট্রোচায়না ইন্টারন্যাশনাল প্রতি ইউনিটের দাম ২০.৫০০০ ডলার উল্লেখ করে ৫ম এবং সিঙ্গাপুরের গানভর সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটড ২১,৪৫০০ ডলার উল্লেখ করে ৬ষ্ঠ স্থান অধিকার করে।
সূত্র জানায়, প্রতি এমএমবিটিইউ ১৬.৫০০০ ডলার হসেবে ৩,৩৬০,০০০ এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানিতে ভ্যাট ও ট্যাক্স ব্যতিত প্রয়োজন হবে ৫৫ মিলিয়ন ৪৪০,০০০.০০ ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫৯০ কোটি ১০ লাখ ৩৩ হাজার ৬০০ টাকা। এলএনজি আমদানিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট এবং ২ শতাংশ আইটি প্রযোজ্য বিবেচনায় সর্বমোট ১৭ শতাংশ ভ্যাট ও ট্যাক্স এর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমাণ ১০০ কোটি ৩১ লাখ ৭৫ হাজার ৭১২ টাকা। অর্থাৎ ৩৩,৬০,০০০ এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানিতে প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমাণ হবে সর্বমোট (৫৯০,১০,৩৩,৬০০.০০+১০০,৩১,৭৫,৭১২.০০)=৬৯০,৪২,০৯,৩১২.০০ টাকা।
সূত্র জানায়, দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী আগামী ১১-১২ মার্চের মধ্যে জাপানি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জেইআরএ কো. ইনকরপোরেশন ৩৩,৬০,০০০ এমএমবিটিইউ এলএনজি সরবরাহ করবে।
এ সংক্রান্ত একটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।