
জলবায়ু পরিবর্তন: নদীতে কমছে ইলিশের বিচরণ
সাদাকালো নিউজ
মৌসুমের শেষ সময়ে এসে বাজার ভরে উঠেছে ইলিশে। চকচকে তাজা ইলিশ কিনতে বাজারে ভিড় করছেন ক্রেতারা। কম দামে ইলিশ কেনার আশায় দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতারা ছুটছেন উপকূলের ইলিশের বড় বাজারগুলোতে। দামও তূলনামূলক কম। তবে এ বছর গোটা ইলিশ মৌসুমের চিত্র এটি নয়। মৌসুমের অধিকাংশ সময় সর্বত্রই ছিল ইলিশ সংকট। সমুদ্রের মোহনায় জেলের জালে অল্প ইলিশ ধরা পড়লেও নদীতে ইলিশের দেখা মেলেনি। এখন সমুদ্রের মোহনা অথবা আরো গভীরে কিছু ইলিশ পাওয়া গেলেও নদীতে জেলের জালে ইলিশ মিলছে খুব সামান্য। গত কয়েক বছর ধরেই নদীর ইলিশ কমে গেছে, দাবি সংশ্লিষ্টদের। গবেষকরা এটাকে বলছেন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব।
পদ্মা, মেঘনা এবং ডাকাতিয়া নদীর মিলিত স্রোতবিধৌত চাঁদপুর ‘ইলিশের বাড়ি’ বলে খ্যাত। ইলিশের মৌসুমে চাঁদপুরের ইলিশ বাজার মুখর হয়ে ওঠে ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণায়। সমুদ্র ও নদীর ইলিশ জড়ো হয় এই বাজারে। এখান থেকে ইলিশ যায় দেশ-বিদেশের বাজারগুলোতে। দূর-দূরান্ত থেকে বহু ক্রেতা ইলিশ নেন এই বাজার থেকে। কিন্তু এবছর মৌসুমের অধিকাংশ সময়ে এই বাজার ছিল মন্দা। পদ্মা ও মেঘনা নদীতে ইলিশের দেখা মেলেনি। জাল ফেলে জেলেরা অধীর অপেক্ষায় প্রহর গুনে শেষ অবধি ফিরেছেন খালি হাতে। মাঝি (যিনি নৌকা/ট্রলারের সব জেলের নেতৃত্ব দেন) দেনা হচ্ছেন মৎস আড়তদারের কাছে; জেলেরা (যারা ভাগী বলে পরিচিত) দেনা হচ্ছেন মাঝির কাছে।
চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা ইলিশের বিচরণ ক্ষেত্র হিসাবে পরিচিত যুগ যুগ ধরে। ইলিশ ঘিরেই চাঁদপুর হয়ে উঠেছে ‘ইলিশবাড়ি’। সরকারিভাবে জেলা পরিচিতির থিম চাঁদপুরকে ‘ইলিশবাড়ি’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। মিথ আছে, মা-ইলিশ যেমন বাবার বাড়ি (পদ্মা-মেঘনা নদীতে) এসে ডিম ছাড়ে, তেমনি ছোট বয়সে (ঝাটকা) ইলিশ নানার বাড়িতে (পদ্মা-মেঘনা নদীতে) বড় হয়। এরপর ইলিশ ক্রমে সমুদ্রের দিকে যেতে থাকে। বড় হয়ে তারা আবার সমুদ্র থেকে নদীতে ফিরে আসে। বর্ষায় ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি ইলিশদের আন্দোলিত করে; জেলেরা অপেক্ষা করেন কখন ইলিশ এসে ধরা পড়বে জালে। চাঁদপুরের ইলিশের সেই মিথ হয়তো ভেঙে যেতে বসেছে।চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় ইলিশ পাওয়া এখন জেলেদের ‘সৌভাগ্যের’ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।পদ্মা-মেঘনা তীরের বহু জেলে তাই দেনায় জড়িয়ে পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন।