গোটা রাজ্যে সেরা শিক্ষার্থী কর্ণাটকের সেই তাবাসসুম!
সাদাকালো নিউজ
আবারও আলোচনায় এসেছেন ভারতের কর্ণাটকে হিজাব আন্দোলন করা সেই তাবাসসুম শাইক। তবে এবার হিজাব নিয়ে নয় পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে খবরের শিরোনাম হয়েছেন তিনি। দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় আর্টস বিভাগে হয়েছেন প্রথম। ৬০০ নম্বরের মধ্যে তাবাসসুম পান ৫৯৩। এর ফলে হিজাব আন্দোলনের ফলাফল আর তাবাসুমের সাফল্যকে কেন্দ্র করে আবারও কর্ণাটকের আলোচনায় ফিরেছে হিজাব আন্দোলনের প্রসঙ্গ।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে কর্ণাটকের উদুপি জেলায় এক স্কুলে হঠাৎ করে হিজাবে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। স্কুল কর্তৃপক্ষ এক নোটিশে জানায়, হিজাব বা ধর্মীয় পোশাক পরে ক্লাস করা যাবে না। বোরকা বা হিজাব পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এলেও শ্রেণিকক্ষে তা খুলে ফেলতে হবে। স্কুলের ইউনিফর্মি হবে একমাত্র পোশাক।
উদুপি স্কুলের এই নির্দেশ ক্রমেই রাজ্যের অন্যত্রেও ছড়িয়ে পরে। দেখা দেয় ধর্মীয় উত্তেজনা। শুরু হয় আন্দোলন। সেই আন্দোলনে অংশ নেন কয়েকশ শিক্ষার্থী। তাদেরই একজন ছিলেন তাবাসসুম শাইক।
একটা সময় আন্দোলনের ঢেউ আছড়ে পরে কর্ণাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুতেও। একদল উগ্রপন্থীর আচরণে শঙ্কা দেখা দেয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের। মুসলিম ছাত্রীরা ওই নির্দেশের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নেন। কিন্তু কর্ণাটক হাইকোর্ট জানিয়ে দেন, হিজাব ইসলামের অপরিহার্য অঙ্গ নয়। স্কুলের ইউনিফর্মি হবে শেষ কথা। সেই মোকদ্দমা এখনও সুপ্রিম কোর্টে বিবেচনাধীন।
এই ঘটনার কারণে ১৮ বছর বয়সী তাবাসসুমের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। কর্ণাটক রাজ্যে যখন হিজাব বিতর্ক তুঙ্গে তখন তাবাসসুমসহ কয়েকজন ছাত্রী বেঙ্গালুরুর স্কুলে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। অনেকদিন বাড়িতে বসে ছিলেন তারা। একটা সময় সিদ্ধান্ত বদলে ফেলেন। ঠিক করেন প্রতিবাদ জানাবেন সাফল্য দিয়েই।
সংবাদমাধ্যমকে তাবাসসুম জানান, অনেকেই বিরুপ মন্তব্য করেছেন। কিন্তু বাবা আর বড় ভাইয়ের কথা প্রতিটাক্ষণ মাথায় ছিলো তার। তারা তাবাসসুমকে বলতেন প্রতিবাদের নামে পড়াশোনা ছেড়ে দিলে যারা চায় না মেয়েরা শিক্ষা পাক তাদের খারাপ উদ্দেশ্যই সফল হবে।
তাবাসসুম বলেন, কোনো ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পোশাকের ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকা উচিত নয়। শিক্ষাগ্রহণ এবং ধর্মাচারণ দুটিই মানুষের অধিকার। তবুও মোকদ্দমার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে সে। তাবাসসুমের ইচ্ছা ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি নিয়ে বিদেশে ভালো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা।
তাবাসুমের বাবা প্রকৌশলী আব্দুল কাইয়ুম শেখ জানান, পড়াশোনার ক্ষেত্রে কোনো শর্ত আরোপ করা চলে না। পড়াশোনা বন্ধ করলে ভবিষ্যতের সঙ্গে অন্যায় করা হবে। তাই মেয়েকে সবসময় পড়ালেখার ব্যাপারে অনুপ্রেরণা দিতেন তিনি। যার ফলাফল পেয়েছেন দ্বাদশের পরীক্ষায়।
জানা গেছে, কর্ণাটকের স্কুলের সেই পোশাকবিধি কলেজে নেই। এর ফলে হিজাব-বোরখা পরেই কলেজে ক্লাস করতে পারবে তাবাসসুম। তবুও সেখানকার রাজনীতির গতিপ্রকৃতিতে কিছুটা সন্দিহান এই কিশোরী। ভবিষ্যতে নতুন কোনো নির্দেশনা জারি হবে কি না সে বিষয়ে নিশ্চিত নয় সে।