কে এই যোগী আদিত্যনাথ?
জহুরা প্রিতু
বলা হয়, বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারত। দেশটির জনপ্রিয় দুই রাজনৈতিক দল- বিজেপি ও ভারতীয় কংগ্রেস। বর্তমানে দেশটির ক্ষমতা বিজেপির হাতে। আর এই দলে মোদীর পরেই অন্যতম আলোচিত রাজনীতিক যোগী আদিত্যনাথ ।
যোগী আদিত্যনাথ আর বিতর্ক, একে অপরের পাশাপাশি চলে। আড়াই দশক ধরে ভারতের উত্তর প্রদেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত তিনি। বর্তমানে আদিত্যনাথ রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী। আদিত্যনাথ নিজেকে সন্ন্যাসী হিসেবে পরিচয় দেন। তবে মৌলবাদী মতাদর্শের মানুষ। কখনো কট্টর হিন্দুত্ববাদী অবস্থান আবার কখনো মুসলমান বিরোধী মন্তব্যসহ নানা কারণে বির্তকে থাকেন তিনি।
যোগী আদিত্যনাথ ১৯৭২ সালের ৫ জুন উত্তরাখণ্ডের গাড়োয়াল এলাকায় জন্ম নেন। এইচএনবি গাড়োয়াল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক করেন তিনি । তারপরেই সংসার ত্যাগ করে সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। প্রায় একইসঙ্গে হয় রাজনীতিতে হাতেখড়ি । বেছে নেন গেরুয়া পোশাক। ১৯৯৮ সালে মাত্র ২৬ বছর বয়সে গোরক্ষপুর থেকে সাংসদ হন। তারপর থেকে সেই আসনে একটানা পাঁচবার সাংসদ নির্বাচিত হন তিনি৷ অন্তত ২৪টি হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদেও রয়েছেন এই সন্ন্যাসী।
রাজনীতিতে সন্ন্যাসী আদিত্যনাথ শুরু থেকেই ছিলেন আকর্ষণের কেন্দ্রে। বিভিন্ন ইস্যুতে আদিত্যনাথের সাম্প্রদায়িক মন্তব্য সবসময়ই বিতর্ক তৈরি করেছে। লাভ জেহাদ, গো-সংরক্ষণ, জোর করে ধর্মান্তকরণ, তিন তালাক কিংবা কবরস্থান বনাম শ্বশ্মান ইত্যাদি সব বিতর্কের সাথে জড়িয়ে আছে যোগীর নাম। এর জন্য তাঁকে একবার জেলও খাটতে হয়েছে৷
অভিযোগ আছে ২০০৫ সালে আদিত্যনাথ পবিত্রকরণের নামে উত্তরপ্রদেশের এটাওয়ায় ১ হাজার ৮০০ জন খ্রিস্টান ধর্মের মানুষকে ধর্মান্তর করেন । পরের বছর, লখনউয়ে বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠককে ব্যাহত করতে সমান্তরাল হিন্দু মহাসম্মেলনের আয়োজন করেন তিনি। ২০০৭ সালে গ্রেপ্তার হন গোরক্ষপুরে ধর্মীয় অশান্তি ছড়ানোর অভিযোগে । কারাগারে থাকেন ১৫ দিন।
যোগীর গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে গোধাম এক্সপ্রেসে আগুন ধরিয়ে দেয়ার অভিযোগ ওঠে তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে। ২০১০ সালে মহিলা সংরক্ষণ বিল ইস্যুতেও যোগী পার্টি হুইপের বিরুদ্ধাচরণ করেন । ২০১৫ সালে আদমশুমারির পর আদিত্যনাথ বলেন, ‘মুসলিমদের জন্যই গণতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।’ একই বছর সূর্য নমস্কার না করলে ভারত ছেড়ে চলে যেতে বলে বিতর্ক তৈরি করেন। সবশেষে যোগী আদিত্যনাথ ভোটের বিজ্ঞাপনে কলকাতার ফ্লাইওভারের ছবি যোগ করে বির্তকিত হয়েছেন।
তবে, বিজেপির হয়ে রাজনীতি করলেও, মোদীর সঙ্গে যোগীর ক্ষমতা নিয়ে কিছুটা দ্বন্দ্ব আছে। অনেকেই বলেন, ভারতে মোদীর সমান শক্তির রাজনীতিক আদিত্যনাথ। এমন ধারণাও প্রচলিত– এই দুজনের মধ্যে নীরব ক্ষমতার অহংকার থাকায় আদিত্যনাথের জায়গা হয়নি মোদীর মন্ত্রিসভায়।