কম্পিউটার অপারেটর থেকে ৪৬০ কোটি টাকার মালিক নুরুল ইসলাম
ওবায়দুল শেখ
নুরুল ইসলামের সম্পদের পরিমাণ সাড়ে ৪শো কোটি টাকার বেশি। তবে তিনি চাকরি করতেন দৈনিক ১৩০ টাকা মজুরিতে। ছিলেন টেকনাফ স্থলবন্দরে কম্পিউটার অপারেটর। তবে, নুরুল জাত প্রতারক। তাইতো অল্প দিনেই হয়েছেন ৪৬০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক।
বন্দরে অসাধু একটি দালাল চক্র তৈরি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। তাঁর সিন্ডিকেটের সদস্য ১০ থেকে ১৫ জন। সিন্ডিকেটের সহায়তায় চক্রের সদস্যরা পাশের দেশ থেকে কাঠ, শুঁটকি মাছ, বরই আচার, মাছ আনার আড়ালে অবৈধ পণ্য নিয়ে আসতেন। এর বাইরে টেকনাফ বন্দর, ট্রাকস্ট্যান্ড, বন্দরে জাহাজের আসা–যাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতেন নুরুল। ওই সময়ই তিনি ভোলা, টেকনাফ, সেন্ট মার্টিনে জমি কেনেন। গত বছর তিনি নাম লেখান রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়।
অবৈধভাবে অর্জন করেন সাড়ে ৪শ কোটি টাকার বেশি সম্পদ। নামে-বেনামে স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের সদস্যদের নামে রয়েছে ১৯টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। নুরুলের ঢাকা শহরে রয়েছে ৬টি বাড়ি। এগুলোর মূল্য ৭৩ কোটি টাকা। বাড়ির পাশাপাশি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আছে ১৬৫ কোটি টাকা মূল্যের ১৩টি প্লট। এছাড়া ৩১ কোটি টাকার ৪টি রিকশা গ্যারেজ, সাভারে ১১৮ কোটি টাকা মূল্যের ৭টি জমি আছে তার।
টেকনাফ শহরে আছে জমিসহ বাগানবাড়ি, যার দাম ২০ কোটি টাকা। এ ছাড়া আরো ২টি জমি আছে। মূল্য ১২ কোটি টাকা। সেন্ট মার্টিনে নুরুলের জমির দাম ১২ কোটি টাকা। তার স্ত্রীর রয়েছে একটি ব্যক্তিগত গাড়ি। আর নুরুলের ব্যাংকে জমা আছে ১ কোটি ১৯ লাখ টাকা। অবৈধভাবে পাওয়া এ সম্পদের পরিমাণ ৪৬০ কোটি টাকা।
১৪ সেপ্টেম্বর একটি গোয়েন্দা সংস্থা ও র্যাবের যৌথ অভিযানে গ্রেপ্তার হন নুরুল ইসলাম। এ সময় তার কাছ থেকে ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৫০০ জাল নোট, ৩ লাখ ৮০ হাজার মিয়ানমারের মুদ্রা, নগদ ২ লাখ ১ হাজার ১৬০ টাকা ও ৪ হাজার ৪০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। পরে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য ।
নুরুল ইসলামের বাড়ি ভোলায়। জেলা সদরের পশ্চিম কানাই নগরের মো. আব্দুল মোতালেবের ছেলে তিনি । ২০০১ সালে টেকনাফ স্থলবন্দরে দিনপ্রতি ১৩০ টাকা হারে কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি নেন। চাকরি ছাড়েন ২০০৯ সালে। তবে, নিজের আস্থাভাজন একজনকে একই পদে নিয়োগের ব্যবস্থাও করেন। বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন টেকনাফ বন্দরে কাজ করা দালালদের সাথে। নিজের অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে রপ্ত করেন চোরাকারবারি, শুল্ক ফাঁকি, অবৈধ পণ্য খালাসসহ বিভিন্ন দালালির কৌশল।
জানা যায়, নুরুল নিজের নামে রেখেছেন কম সম্পদ। বেশির ভাগ সম্পদ তাঁর স্ত্রী ও ভাইয়ের নামে। নুরুল বন্দরের যে পদে চাকরি করতেন, এখন সেই পদে চাকরি করেন তাঁর সৎভাই রনি। সম্প্রতি নুরুল ঢাকার সাভারে তিন একর জমির ওপর একটি পার্ক বানানোর কাজ শুরু করেন। একটি জাহাজও কেনার চেষ্টা করছিলেন তিনি।