কে এই নজরুল ইসলাম রাজ?
রাকিব হাসান: রাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার নজরুল ইসলাম রাজ। সময় ও পরিস্থিতি বুঝে পরিচয় পাল্টান তিনি। নিজেকে পরিচয় দেন চলচিত্র পরিচালক, ব্যবসায়ী এবং রাজনীতিবিদ হিসেবে।
অথচ মুখোশধারী এই রাজের প্রধান কাজ মানুষ ঠকানো। একাজে সফলও তিনি। হয়েছেন বিপুল সম্পদের মালিক।
তিনি আলোচিত মডেল-অভিনেত্রী পরীমনি ও পিয়াসার মতো অসংখ্য মেয়েকে বিনোদন দুনিয়ায় এনেছেন। কলেজ ছাত্রী মুনিয়ার সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তিনিই মুনিয়াকে একটি নাটকে অভিনয়ের সুযোগ করে দেন। তবে নাটকটি শেষ পর্যন্ত করা হয়নি মুনিয়ার।
জানা গেছে, তার হাত ধরে বিনোদন জগতে আসা মেয়েরা যতোটা না অভিনয় বা মডেলিংয়ে সময় দিয়েছেন, তারচেয়ে বেশি দিয়েছেন রাজের ব্যক্তিগত কাজে।
র্যাবের দেয়া তথ্যমতে, রাজ তার মানুষ ঠকানোর কাজে মূলত সেমি ও কাঁকন দুই তরুণীকে ব্যবহার করতেন। এই দুই তরুণীর আসল নাম জানা যায়নি। তবে তারা সবসময় রাজের কাছেই থাকতেন। এই দুই ললনার শারীরিক সৌন্দর্য ও ছলনাকে কাজে লাগিয়ে রাজ বাগে এনেছেন অনেক সরকারি, বেসরকারি কর্মকর্তা, এবং শিল্পপতি ব্যবসায়িকে।
সূত্রে জানা গেছে, সেমি এবং কাঁকন সবসময় পাশ্চাত্য পোশাকে থাকেন। তাদেরকে নিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে হাজির হতেন রাজ। এই দুই লাস্যময়ী ললনাকে কাছে পেতে, যেকোন কিছু করতে প্রস্তুত হয়ে যেতেন অনেকে। ঠিক এই সুযোগটাই নিতেন রাজ। তাদের দিয়ে তদবির বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ফায়দা হাসিল করতেন তিনি। এতে কোটি টাকা ঘুষের চেয়েও দ্রুত কাজ পেতেন রাজ। তাই কোটিপতি বনে যেতে বেশি সময়ও লাগেনি রাজের।
র্যাব বলছে, রাজের অনেকগুলো ব্যাংক হিসাব আছে। এর মধ্যে ১৪টির লেনদেনের হিসাব পেয়েছেন তারা। এতে ৯ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। তবে, ব্যাংকের বাইরে তার হাতে নগদ টাকার পরিমাণ চোখ কপালে তোলার মতো।
২০০৯ সালের পর থেকে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন রাজ। নজরুল ইসলাম রাজের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদরের দুর্গাপুর গ্রামে। তিনি ড্রেজিং ব্যবসাসহ বিভিন্ন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। নিজের নামে তৈরি করছেন ৫ তলা আবাসিক হোটেলও।
সবশেষ তার বাসায় অভিযানে গিয়ে অবাক হতে হয়েছে র্যাব সদস্যদের। রাজের বাসা যেন আধুনিক এক হেরেমখানা। নীল দুনিয়ার চলচ্চিত্রে যা কিছু দেখানো হয়, তার প্রায় সব উপকরণই ছিল সেখানে। আর বিপুল পরিমাণ আনন্দ খেলনা, নাপানীয় এবং না সেবন দ্রব্য তো ছিলই।
নজরুল রাজ আরও সম্পর্কে জানা গেছে, বনানীতে পুলিশ পরিদর্শক মামুনকে হত্যার পর গাজীপুরের জঙ্গলে লাশ ফেলে দেওয়ার মামলার তদন্তে নজরুল, মিশু হাসান, পিয়াসাসহ কয়েকজনের নাম আসে। ওই সময় নজরুলের বিরুদ্ধে দীর্ঘ তদন্ত করে পুলিশ। যদিও পরে ওই মামলা থেকে নজরুল রাজকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।