কে এই আব্দুল কুদ্দুস ভূঁইয়া? কীভাবে লিখলেন ৫০ হাজার গান?
রাকিব হাসান
আব্দুল কুদ্দুস ভূঁইয়া। বয়স ৬৫ বছর। ১৫ বছর বয়স থেকেই গান লিখছেন। এখন পর্যন্ত তাঁর লেখা গানের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার।
তাঁর গানের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ ও দেশাত্মবোধক গান। সংখ্যাতে হাজারের বেশি। এলাকার মানুষ তাকে সম্মান করেন। পরিচিত গান পাগল মানুষ হিসেবে।
ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের পাগলা থানাধিন মশাখালী ইউনিয়নের কান্দি গ্রামে তাঁর জন্ম। পিতা মৃত আশরাফ আলী ভূঁইয়া।
ছোটকাল থেকে রেডিওতে গান শুনতে ভালবাসতেন আব্দুল কুদ্দুস ভূঁইয়া। ছিলেন অসম্ভব প্রকৃতিপ্রেমী। গ্রামের গাছপালা, চন্দ্র-তারা, পুকুর-নালা, দিগন্ত বিস্মৃত সবুজের সমারোহ তাকে মুগ্ধ করতো।
লেখাপড়ায় ভালো ছিলেন। অবসরে রেডিওতে গান শুনতেন। গাইতেন গুনগুন করে। অবাক হয়ে দেখতেন প্রকৃতির সৌন্দর্য।
মনের অজান্তেই আব্দুল কুদ্দুসের কোমল মন গানকে ভালোবেসে ফেলেন। সুরের মূর্ছনায় বিমোহিত হন। এক সময় মনের অজান্তেই লিখতে শুরু করেন গান।
১৯৭০সালে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময় থেকে গান লেখা শুরু। সেই যে শুরু হল, এখনো তা চলছে। গান লেখা বন্ধ করেননি এক দিনের জন্যও।
জীবনের শৈশব, কৈশর, যৌবন পেড়িয়ে এখন বৃদ্ধ হয়েছেন আব্দুল কুদ্দুস। তবে পাল্টেনি তাঁর গান লেখার নেশা। দিন-রাত শুধু লিখছেন।
আব্দুল কুদ্দুসের অবশ্য পিছুটান ছিল না। পরিবার স্বচ্ছল। তাই চাকরির চিন্তা করতে হয়নি। তবে ঠিকই পাশ করেছেন ইংরেজিতে মাস্টার্স।
তিনি যে একদমই কিছু করেন না তা কিন্তু নয়। স্থানীয় একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খন্ডকালীন শিক্ষকতা করেছেন। সে কারণে নামের আগে ‘মাস্টার’ যোগ হয়ে গেছে। যদিও এলাকাবাসী তাকে ভূঁইয়াকে ‘গানের মাস্টার’ হিসেবেই সম্মান করেন।
আব্দুল কুদ্দুস ভূঁইয়ার লেখা গানের খাতাগুলো ভরে রাখেন প্যাকেটে। এক একটা প্যাকেটে ১০-২০টা খাতা। তাঁর গানের খাতার সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিনশো। প্রতিটি খাতায় সর্বাধিক দেড়শোটির মতো গান আছে। সে হিসাবে তিনি প্রায় ৫০হাজার গান লিখেছেন।
তবে গুণী এই মানুষটি প্রচার বিমুখ। গানগুলো প্রচার, প্রকাশ বা সুর করার জন্য কখনো কাউকে অনুরোধ করেননি। তবে খাতাগুলো তিনি সন্তানের মতোই আগলে রেখেছেন।
জানা যায়, নেত্রকোনা এলাকায় তার লেখা প্রায় ২৮টি গান গেয়েছেন বাউল শিল্পী হাবিব সরকার, ঝুমা সরকার, চাঁদনী, সুমন সরকার ও কদম আলী সরকার।