কেন ভাঙা হচ্ছে এরশাদ শিকদারের স্বর্ণকমল?
সাদাকালো নিউজ
কিছু মানুষ আছে যাদের পরিচয় করিয়ে দিতে তাদের কাজের বিবরণ দিতে হয় না। নামটাই হয়ে ওঠে তাদের কাজের বিবরণ। শুনলেই লোকে বুঝে ফেলে তিনি কে এবং তার কাজ কী। এমনি একজন এরশাদ শিকদার। যার নাম শুনলে লোকে ভয়ে, ঘৃণায় আঁতকে ওঠে এখনো।
খুলনার এক সময়কার গডফাদার এরশাদ শিকদার। একজন মানুষের পক্ষে করা সম্ভব এমন কোনো খারাপ কাজ নেই যা তিনি করেননি। বহুল আলোচিত সেই এরশাদ শিকদারের বাড়ি স্বর্ণকমল ভেঙে ফেলা হচ্ছে। খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গার মজিদ সরণিতে অবস্থিত বিলাসবহুল এই বাড়িটির মালিক ছিলেন এরশাদ শিকদার।
চৌঠা জানুয়ারি সকাল থেকে শ্রমিকদের দোতলা এ বাড়িটি ভাঙতে দেখা গেছে। তবে হঠাৎ করে কেন বাড়িটি ভাঙা হচ্ছে সে ব্যাপারে কিছু জানা যায়নি। বাড়ি ভাঙার সময় এরশাদ শিকদারের পরিবারের কাউকে সেখানে দেখা যায়নি।
বাড়ি ভাঙার কাজে নিয়োজিত রবিউল নামে এক শ্রমিক জানান, বাড়িটির অর্ধেক ভেঙে ফেলা হবে। সেখানে ১০ তলা ভবন নির্মাণ করা হবে বলে শুনেছি। এরশাদ শিকদারের ছেলেরাই ১০ তলা ভবন নির্মাণ করবেন।
জানা গেছে, এরশাদ শিকদারের দুই স্ত্রী খোদেজা বেগম ও সানজিদা নাহার শোভা। এরশাদ শিকদারের তিন ছেলে। তারা হলেন- মনিরুজ্জামান শিকদার জামাল, কামাল শিকদার ও হেলাল শিকদার। তারা পেশায় ব্যবসায়ী। এছাড়া সুবর্ণা ইয়াসমিন স্বাদ ও জান্নাতুল নওরিন এশা নামে এরশাদ শিকদারের দুই মেয়ে ছিল। যার মধ্যে এশা ২০২২ সালের তেশরা মার্চ নিজেই নিজেকে শেষ করে দেন।
কথিত আছে, বিলাসবহুল স্বর্ণকমল বাড়ি যে বানিয়েছিলেন তাকেও প্রাণ দিতে হয়েছে এরশাদ শিকদারের হাতে। তার শুধু ভুল ছিলো- বাড়িটি বানানোর সময় কিছু অংশ ঢুকে গিয়েছিলো অন্যের জমিতে।
গোপন সূত্রের খবর, অবৈধ উপায়ে হাজার হাজার কোটি টাকা অর্জন করেছিলেন এরশাদ শিকদার। আর এই টাকা তিনি ব্যাংকে রাখার পাশাপাশি ব্যবসা, জমি ক্রয়-বিক্রয় এবং বিভিন্ন দলের প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের ধার দিয়ে সু-সম্পর্ক বজায় রাখতেন। সেই টাকা দিয়েই বিলাসবহুল বাড়ি স্বর্ণকমল তৈরি করেছিলেন।
সেই সময়ে বাড়িটিতে গোপন কুঠরি এবং মানুষ মারার যন্ত্রের ভাণ্ডার ছিল বলে শোনা যায়। এমনকি বাড়িটির বিভিন্ন গোপন স্থানে নগদ কয়েক কোটি টাকা লুকানো ছিল। প্রায় সময় জলসা বসত বাড়িটিতে। শহরের নামীদামী ব্যক্তিরা সেখানে যেতেন। এক সময় সাধারণ মানুষের খুব আগ্রহের জায়গা ছিল ‘স্বর্ণকমল’। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ বাড়িটি দেখতে আসতো। আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল বাড়িটি।
খুলনার সে সময়ের সবচেয়ে বিলাসবহুল বাড়ি ছিল স্বর্ণকমল। ভারত থেকে নকশা করে আনা হয়েছিল এই বাড়ির। দেশ-বিদেশের দামি দামি সব আসবাবপত্র দিয়ে সাজানো এই বাড়ির ভেতরেই লুকিয়ে থাকার জন্য ছিল বাংকার। এরশাদের ব্যক্তিগত সংগ্রহে ৭০টি মানুষ মারার যন্ত্র থাকার তথ্য পাওয়া গেলেও পুলিশ উদ্ধার করেছিলো কেবল দুটি।
এরশাদ শিকদারের বিরুদ্ধে প্রায় ৬০টিরও বেশি মানুষ মারার অভিযোগ ছিল। প্রতিটি ঘটনার পর দুধ দিয়ে গোসল করতেন তিনি ও তার সহযোগীরা। এসব অভিযোগে ২০০৪ সালের ১০ই মে খুলনা জেলা হাজতে এরশাদ শিকদারের সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর করা হয়।
এরশাদ শিকদার চলে যাওয়ার পর স্বর্ণকমলে তার প্রথম পক্ষের স্ত্রীসহ ছেলে মেয়েরা বসবাস করতেন। সেখানে তারা দোতলায় একটি মুরগীর ফার্মও করেছিলেন। এরশাদ শিকদারের চলে যাওয়ার দীর্ঘ ১৯ বছর পর যখন স্বর্ণকমল ভাঙার কাজ শুরু হয়, তখন উৎসুক মানুষ সেখানে ভিড় জমায়।