সাড়ে ৩ টাকার লেবু বাজারে গেলে ১০ টাকা!
সাদাকালো নিউজ
নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের লেবু চাষি দেলোয়ারা বেগম। বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) সকাল ৭টায় মির্জাপুর (চাঁনপুর হাট) গ্রামের হাটে ৭৫ পিস লেবু বিক্রির জন্য নিয়ে আসছিলেন। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা কাড়াকাড়ি করেই লেবুগুলো ৩ টাকা ২৫ পয়সা থেকে সাড়ে ৩ টাকা পিস হিসেবে কেনেন।
দেলোয়ারা বেগম বলেন, বাড়ির পাশে দুই কাঠা জমিতে চার বছর আগে দেশীয় জাতের লেবুর বাগান করেছেন। সপ্তাহে দু’দিন লেবু উঠিয়ে ৪৫০-৫০০ টাকা পর্যন্ত পান। কিছুদিন আগেও প্রতি পিস লেবু ৫০ পয়সা থেকে এক টাকা পিস হিসেবে বিক্রি করেছিলেন। গরম শুরু হয়েছে সেই সঙ্গে রমজান মাস। এ মাসে লেবুর চাহিদা একটু বেশিই থাকে। এজন্য দাম পাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
চাষিদের কাছ থেকে লেবু কিনে ওই হাটেই বিক্রি করছেন দোকানিরা। হাত বদলেই চাষিদের কাছ থেকে দোকানিরা যা কিনছেন গ্রাহক/ক্রেতা পর্যায়ে তার দাম দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে। লেবুর উৎপাদন কম হওয়ায় বাজারে সরবরাহ কম। গাছে লেবুর ফুল আসছে। আবার কিছু গাছে ফুল থেকে লেবুতে পরিণত হয়েছে। তবে পরিপক্ব হয়ে বাজারে আসতে ২০-২৫ দিন সময় লাগবে।
আগামী এক মাসের মধ্যে বাজারে লেবুর সরবরাহ বেশি থাকবে। তাপমাত্রা কিছুটা বেশি হলে ক্রেতাদের কাছে চাহিদা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি দামও বাড়বে। তবে মধ্যস্বত্বভোগীরা বেশি দাম পেয়ে লাভবান হলেও চাষিদের প্রকৃত দাম পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে হয়। আর প্রকৃত দাম না পেয়ে ক্ষোভের বসে অনেকেই লেবুর বাগান কেটে সেখানে অন্য ফসল চাষাবাদ করছেন চাষিরা।
মির্জাপুর হাটে চাষিদের কাছ থেকে লেবু কিনে বিক্রি করছেন স্থানীয় সবজি দোকানি হারুন অর রশিদ। তিনি বলেন, বাজারে লেবুর সরবরাহ খুবই কম। হাতেগোনা কয়েকজন চাষি লেবু নিয়ে আসে। তবে বেশি দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। ৫-৬ টাকা পিস হিসেবে ৫০টি লেবু কিনেছি। প্রতি পিস ১০ টাকা হিসেবে বিক্রি করছি। তবে দাম শুনে অনেক ক্রেতা চলে যাচ্ছে। অনেকেরই লাফিয়ে উঠার মতো অবস্থা। আগামীতে আরও দাম বাড়তে পারে।
মির্জাপুর গ্রাম থেকে নওগাঁ শহরের দূরুত্ব প্রায় ১২ কিলোমিটার। একই দিনে শহরের পৌর পাইকারি বাজারে প্রকারভেদে প্রতি পিস লেবু বিক্রি হচ্ছে এলাচ জাতীয় ৪-৫ টাকা এবং চায়না-৩ জাতের ৩-৪ টাকা। পাইকারি বাজারের রাস্তার পশ্চিম পাশে ১০০ ফুট দূরে পৌর সবজির খুচরা বাজার। এ পাইকারি বাজার থেকে খুচরা সবজি ব্যবসায়ীরা লেবু কিনে বিক্রি করছেন প্রায় দ্বিগুণ দামে।
নওগাঁ পৌর খুচরা ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম বলেন, গত ১৫ দিন থেকে লেবুর বাজার এখন ঊর্ধ্বমুখী। সিডলেস চায়না-৩ জাতের লেবু ৪ টাকা পিস এবং দেশি এলাচ জাতীয় লেবু ৫ টাকা হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে। এসব লেবু ২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৩ টাকা ৫০ পয়সা হিসেবে কেনা হয়েছে। এ বাজারে প্রতিদিন প্রায় ১৮-২০ হাজার পিস লেবু বিক্রি হয়। নওগাঁর বদলগাছী, নাটোর এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা থেকে পাইকারি দরে লেবু কিনে নিয়ে আসা হয়। রমজান শুরু হবে এজন্য দাম বেড়ে যাচ্ছে। আরও দাম বাড়বে।
খুচরা সবজি ব্যবসায়ী বাদশা আলী বলেন, পাশেই পাইকারি বাজার থেকে লেবু কিনে সামান্য লাভে বিক্রি করা হয়। পাইকারি বাজার থেকে প্রতি পিস লেবু ৫-৬ টাকায় কেনা হয়েছে। প্রতি পিস খুচরা পর্যায়ে ৭-৮ টাকা পিস হিসেবে বিক্রি করা হয়েছে।
মির্জাপুর গ্রামের লেবু চাষি সুমন সরকার বলেন, গত চার বছর থেকে লেবু চাষ করছি। ১৫ কাঠা জমিতে ৮৫টি লেবুর গাছ আছে। সপ্তাহ পরপর ৪০০-৫০০ পিস লেবু পাওয়া যাচ্ছে। কিছুদিন আগেও ১০০ পিস লেবু ৩০ টাকা হিসেবে বিক্রি করা হয়েছিল। দাম এখন ভালো পাওয়ায় খুশি। দাম ভালো থাকলে লাভবান হওয়া যায়। কিন্তু যখন দাম কম হয় তখন উৎপাদন খরচই উঠে না।
ক্ষোভ প্রকাশ করে বালুভরা গ্রামের লেবু চাষি মেছের আলী বলেন, ১০ কাঠা জমিতে লেবুর বাগান করেছিলাম। সব কেটে সাবাড় করে দিয়েছি। শুধু বাড়িতে খাওয়ার জন্য ৫টি গাছ রাখা হয়েছে। ২৫-৩০ পয়সা পিস হিসেবে লেবু বিক্রি করে উৎপাদন খরচই উঠে না। অথচ ওই লেবু ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে ৪-৫ টাকা পিস বিক্রি করে। আমরা কষ্ট করে লোকসান করি। আর তারা কিনে লাভ করে। আগে লেবুর বাগান কম ছিল দাম ভালো পাওয়া যেত। এখন বাগান বেশি হওয়ায় উৎপাদন বেশি হচ্ছে দামও পড়ে গেছে। লেবু ৩-৪ টাকা পিস বিক্রি করে ভালো দাম পাওয়া গেলেও বাগান নাই।
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলা ১৮২.৫ হেক্টর জমিতে লেবুর বাগান রয়েছে।
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, লেবুর এখন মৌসুম না (অফসিজন) হওয়ায় এবং বাজারে সরবরাহ কম থাকায় চাষিরা ভালো দাম পেয়ে লাভবান হচ্ছে। আগামী ২-৩ মাস পর লেবুর মৌসুম। তখন লেবুর উৎপাদন বেশি হবে এবং দাম কিছুটা কমে আসবে। বলা যায় চাষিরা এখন লাভবান হচ্ছে।